অনলাইন লাইব্রেরির জগতে বাংলাদেশ - দৈনিকশিক্ষা

অনলাইন লাইব্রেরির জগতে বাংলাদেশ

আসিফুর রহমান সাগর |

অনলাইন লাইব্রেরির জগতে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। সরকারি বেসরকারি বেশকিছু লাইব্রেরি অনলাইন হওয়ার পর এবার দেশের প্রধান লাইব্রেরি ‘সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার’ অনলাইন জগতে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। এ লাইব্রেরিতে সবমিলিয়ে এখন বইয়ের সংখ্যা সোয়া দুই লাখ। এরমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার বই অনলাইনে ছাড়বে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর। শুধু তাই নয়. এ অনলাইন লাইব্রেরির সবচেয়ে বড় সংগ্রহ থাকবে ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সংবাদপত্রের স্ক্যান কপিগুলো। এর পাশাপাশি দৈনিক আজাদ, ইত্তেফাক, সংবাদ, পাকিস্তান অবজারভার, দি ডন এইসব পত্রিকার কপি রয়েছে পাবলিক লাইব্রেরিতে। সেসবের স্ক্যান কপিও দেওয়া হবে অনলাইন লাইব্রেরিতে।

পুরনো বইয়ের সন্ধান পাওয়া বাংলাদেশে বাঘের চোখ পাওয়ার মতোই দুষ্প্রাপ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া, কাগজে মুদ্রণের কারণে সেসব বই অনন্তকাল ধরে টিকিয়ে      রাখা সম্ভব হয় না। ১৫-২০ বছর আগে প্রকাশিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ বইই এখন আর পাওয়া যায় না। অগতির গতি একমাত্র নীলক্ষেতের বই বাজার। প্রয়োজনীয় পুরনো বইকে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ডিজিটাল লাইব্রেরি দিয়েছে অন্ধকারে পথের দিশা।

বিপুলসংখ্যক বইয়ের সংগ্রহশালা নিয়ে তৈরি ওয়েবসাইটই হলো অনলাইন লাইব্রেরি বা ‘ই-লাইব্রেরি’। ডাউনলোড করে সংগ্রহ করারও সুযোগ করে দেয় এসব লাইব্রেরি। ডাউনলোড করা বইয়ের সফট কপি সাধারণত পিডিএফ, স্ক্যান ইমেজ এবং টেক্সট ফরমেটে থাকে। অনলাইনের বই প্রচলিত ভাষায় ইলেকট্রনিক বই কিংবা ‘ই-বই’ নামেও পরিচিত। যারা হাতে নিয়ে পড়তে চান, তারা প্রিন্ট করেও নিতে পারেন।

তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কাগজের ছাপা বইয়ের চাইতে ‘ই-বুক’ মানুষের আরো কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। বিশেষ করে প্রাচীন ও পুরনো বই সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অনলাইন লাইব্রেরি খুবই কার্যকর হয়ে দেখা দিয়েছে। এমনকি নতুন প্রকাশিত বইও পাঠকের কাছাকাছি পৌঁছাতে টাকার বিনিময়ে ‘ডিজিটাল ভার্সন’ এ ছাড়া হচ্ছে।

সাধারণ গ্রন্থাগারে যেখানে ছাপার কাগজ, মাইক্রোফর্ম বা অন্যান্য মিডিয়ার মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয় ডিজিটালে সেখানে কম্পিউটারের মাধ্যমে সফট কপি সংরক্ষণ করা হয়। সফট কপি সংরক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে ডিজিটাল গ্রন্থাগার গড়ে তোলা হচ্ছে। আবার ইন্টারনেটের মাধ্যমে তা সমগ্র বিশ্বেও ছড়িয়ে যাচ্ছে।

ছাপার অক্ষরে ডিজিটাল লাইব্রেরি শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয় ১৯৮৮ সালে কর্পোরেশন ফর ন্যাশনাল রিসার্চ ইনিশিয়েটিভসের একটি প্রতিবেদনে। আর এই ধারণাটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে ১৯৯৪ সালের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তখন আমেরিকার সরকার সাড়ে ২৪ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করে তাদের দেশের স্বনামধন্য ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিকে ডিজিটাল লাইব্রেরিতে রূপান্তরিত করার জন্য।

বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ বইগুলোকেও ডিজিটাল লাইব্রেরিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এছাড়া, বাংলা একাডেমিও তাদের লাইব্রেরিকে ডিজিটাল লাইব্রেরিতে রূপান্তরের কাজ শুরু করেছে। অনলাইন লাইব্রেরি করেছে বুয়েট, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। আর, বেসরকারি পর্যায়েও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি ইতোমধ্যেই তাদের লাইব্রেরিকে ডিজিটাল লাইব্রেরিতে রূপান্তরিত করেছে।

অনলাইনে সুফিয়া কামাল গণগ্রন্থাগার

প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে অনলাইন গণগ্রন্থাগারের কাজ শুরু হয়েছে শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরিতে। ‘অনলাইনে গণগ্রন্থাগারসমূহের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশীষ কুমার সরকার বললেন, দেশের লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এ জন্য পাবলিক লাইব্রেরির ৪০ থেকে ৫০ হাজার বই আমরা অনলাইনে স্ক্যান করে প্রকাশ করবো। এরমধ্যে সব বই কপিরাইট আইনের জন্য প্রকাশ করা হবে না। তবে, সব বইয়ের প্রথম আট পৃষ্ঠা স্ক্যান করে দেওয়া হবে। যাতে পাঠকরা জানতে পারেন এ বইটি আমাদের কাছে রয়েছে।

আশীষ কুমার সরকার জানান, বই ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সারা দেশেই ‘সরকারি গণগ্রন্থাগারসমূহের অনলাইন সেবা ও কার্যক্রম সম্প্রসারণ’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সকল সরকারি গণগ্রন্থাগারে নিজস্ব সার্ভারের মাধ্যমে অনলাইন কানেকটিভিটি প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় লাইব্রেরি

একটি বিশেষ গ্রন্থাগার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে রেফারেন্স সেবা প্রদানের জন্য এ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯১ সালে পার্লামেন্টারি সরকার ব্যবস্থা চালু হলে এ গ্রন্থাগারটির নাম হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় লাইব্রেরি। ১৯৯১ সালের আগে এ গ্রন্থাগারটির নাম ছিল রাষ্ট্রপতির সচিবালয় গ্রন্থাগার।

এ গ্রন্থাগারে বর্তমানে ৩১ হাজারের বেশি প্রকাশনা রয়েছে। এখানে লাইব্রেরি প্রকাশনাসমূহ ‘ডিউই ডেসিমেল ক্লাসিফিকেশন’ নিয়ম অনুযায়ী বিন্যাসিত। এখানে ১৭ হাজারের বেশি বই অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখানে ৫ হাজারেরও বেশি বিভিন্ন ধরনের ই-প্রকাশনাও রয়েছে। এই গ্রন্থাগারে কিছু আর্কাইভাল সংগ্রহ রয়েছে। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম হস্তলিখিত সংবিধানের খসড়া এবং বিভিন্ন কমিশনের রিপোর্টসমূহ। তবে, অনুমতিসাপেক্ষে গবেষকগণ তাদের গবেষণার জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এ গ্রন্থাগার ব্যবহার করতে পারবেন।

দুষ্প্রাপ্য বই নিয়ে বাংলা একাডেমি অনলাইন গ্রন্থাগার

‘সবার জন্য জ্ঞান’— এমন লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ‘বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগার-অনলাইন’। প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠানটির গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত দুষ্প্রাপ্য বইয়ের ১ লাখ পৃষ্ঠা সরাসরি ইন্টারনেটে পড়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এখানে বই পড়া ও ডাউনলোড করা যাবে।

ঠিকানা- https://library. banglaacademy. org.bd

কিছু অনলাইন বুক স্টোরের খোঁজ

অনলাইনে সব বই যে বিনামূল্যে অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা যায় তা কিন্তু নয়। কপিরাইট আইনের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানই অনলাইনে বিনামূল্যে বই ডাউনলোড সুবিধা দেয় না। সেক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বইটি কেনা যাবে। অনলাইনে বই বিক্রির তালিকায় সবার শীর্ষে আছে আমাজন (www.amazon.com)। এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন গড়ে দেড় লাখ বই অনলাইনে বিক্রি করে থাকে। ওয়াটার স্টোনস (www.waterstones.com)-এর সংগ্রহশালাও আপনাকে মুগ্ধ করবে।

বিভিন্ন দেশের জাদুঘরে শোভা পায়, এমন দুর্লভ বইয়েরও স্ক্যান কপি পাওয়া সম্ভব ইন্টারনেটে। আর এ সুযোগই করে দেয় অনলাইন লাইব্রেরি। যেমন মেডিসিন, কম্পিউটার, জীববিজ্ঞান, প্রকৌশল, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, ধর্মবিষয়ক অনেক বইয়ের সংগ্রহ আছে web-books.com সাইটে। বইয়ের বিশাল সংগ্রহ পাওয়া যাবে ‘ই বুকস রিড’ (www.ebooksread.com) সাইটে। গণিত, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সমৃদ্ধ বই দিয়ে সাজানো হয়েছে www.freetechbooks.com। গণিত, কম্পিউটার ও প্রোগ্রামিং বিষয়ের বইয়ের বিশাল সংগ্রহশালা হচ্ছে- www.freecomputerbooks.com। এ ছাড়াও আপনি ঢুঁ মারতে পারেন www.sciencedirect.com ও www.onlinefreeebooks.net/engineering-ebooks ঠিকানায়। শুধু বিজ্ঞান নিয়েই সব, তা কিন্তু নয়। কয়েক হাজার ব্যবসায় শিক্ষার বই সংগ্রহে রয়েছে www.free-ebook-download.net/business-book লাইব্রেরিতে। এছাড়া ব্যবসা, অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনার বই ফ্রি ডাউনলোড করা যাবে এই ওয়েব লিংক থেকে- www.free-ebooks.net/?category=Business| শিক্ষার্থীদের গণিত শিখতে ও জানতে সহায়ক হবে  www.mathebook.net। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ‘গণিত অভিধান’ যুক্ত করা হয়েছে সাইটটিতে। গণিত বিষয়ক বই পাওয়া যাবে এমন আরেকটি ওয়েবসাইট হচ্ছে www.xpmath.com/ebooks/math_ebooks.php।

বিশ্বের কয়েক হাজার কবির কবিতা পড়া ও ডাউনলোড করা যাবে www.poemhunter.com/eBooks ওয়েবসাইট থেকে।

 

সৌজন্যে: ইত্তেফাক

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.005897045135498