আপাতত পড়ালেখা ‘করোনা’! - দৈনিকশিক্ষা

আপাতত পড়ালেখা ‘করোনা’!

আহসান কবির |

সম্রাট আকবরের জীবনী নিয়ে কৌতুকটা অনেকেই জানেন। পরীক্ষার খাতায় সম্রাট আকবরের জীবনী লিখতে গিয়ে এক ছাত্র লিখেছিল- বিপদে আপদে যুদ্ধকালে সম্রাট আকবর কখনো ‘জাঙিয়া’ পরিতেন না। পরীক্ষার খাতা দেখে শিক্ষক তো অবাক। তিনি সারারাত ভেবে পেলেন না যে ছাত্রটি এটা কেন লিখেছে। পরদিন আরেক ছাত্রের খাতা দেখতে যেয়ে সমাধান পেলেন শিক্ষক। ঐ ছাত্রটি পরীক্ষার হলে তার সামনের শিক্ষার্থীর খাতা দেখে নকল করছিল । ‘সম্রাট আকবর ভাঙিয়া পরিতেন না’-র জায়গায় নকল করা ছাত্রটি লিখে দিয়েছিল- ‘জাঙ্গিয়া পরিতেন না’!

যাই হোক জাঙ্গিয়া নিয়ে ভেজাল আবারও আলোচনায় এসেছে। চীন পাকিস্তানে করোনা টেস্ট কিট পাঠিয়েছিল। সেসব রিসিভ করতে গিয়ে পাকিস্তানীরা অবাক! মাস্ক এর পরিবর্তে চীনারা ভুল করে (তারাও কী নকল করতো?) কিছু জাঙ্গিয়া পাঠিয়ে দিয়েছে!
 
আসলে করোনা কে পাঠিয়েছে সেটা নিয়েও বিতর্ক চলছে! কেউ বলছে চীন নিজেই নিজের কর্মকাণ্ডে ধরা পরেছে। কেউ বলছে চীন জীবানু মারণাস্ত্র বানাচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্র ড্রোণ হামলা চালিয়ে সেটা ফাটিয়ে দিয়েছে এবং উহানে মানুষ প্রথম আক্রান্ত হয়েছে। কেউ কেউ বলছে, যেহেতু চীনারা উইঘুরের মুসলিমদের নির্যাতন করেছে তাই খোদা গজব দিয়েছেন। কেউ বলছেন ইটালিও চীনের মতো। চীনের মতো ইটালিও গজবাক্রান্ত। ইরানও নাকি তাই। গজব বা মানুষের প্রতি মানুষের কথিত বিদ্বেষ বা অশুভকামনার দিকে না যাই।
 
বাংলাদেশেও করোনা নিয়ে গুজব ছড়ানো ও এক ধরনের সার্কাস চলছে। একদা যেমন গুজব ছড়িয়ে পরেছিল হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ নিয়েও। বলা হয়েছিল শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। বাস্তবে এমন ঘটেনি, যদিও অনেক মানুষ ঐ গুজবকেই বিশ্বাস করে থাকেন এখনও! গুজব ছিল ডেঙ্গু নিয়েও।

তাই এখন আপনি যা যা শুনছেন বা শুনবেন-

এক. মদ আর থানকুনি পাতা করোনা সারাতে পারে (একদল মদের পক্ষে আর আরেক দল থানকুনির পক্ষে আপনাকে মেসেজও পাঠাতে পারে!)

দুই. মামুন নামের ইটালিতে কর্মরত এক ব্যক্তির স্বপ্নপ্রাপ্ত করোনা ভাইরাসের সাক্ষাৎকার প্রচার করে বেড়াচ্ছেন ‘এন্টারকোটিক’ এর আবিষ্কারক খ্যাত কথিত মুফতি ইবরাহীম! আরেক কথিত মাওলানা তারেক মনোয়ার আপনাকে মাস্ক পরতে নিষেধ করে ওয়াজ করেছেন অনেক আগেই।

তিন. গরুর হিসি নিয়মিত খেলে করোনা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে না। এই গুজব ছড়িয়েছিল ইন্ডিয়ায়। গো-মূত্র খেয়ে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পরলে গুজব কমে আসে। পাকিস্তান আর বাংলাদেশের গুজবটা এমন-পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য ওজু করুন আর টাখনুর ওপর প্যান্ট পড়ুন। করোনা পালাবে! ইরানে করোনা কেন পালাচ্ছে না সেটা অবশ্য বোঝা যাচ্ছে না! ইন্ডিয়াতে মওলানা সাদের অনুসারিরা ‘তাবলীগের আহবান’ জানিয়ে নয় হাজার মুসল্লীকে জড়ো করার কারণে সেখানে করোনা ছড়িয়ে পরে এবং পুলিশ মাওলানা সাদকে খুঁজতে থাকে। কেউ কেউ বলছে সাদ নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদেশের যারা সাদ বিরোধী তারা এখন বলতে পারেন ইরানের মতো সাদের অনুসারিরাও পথভ্রস্ট তাই এরা আক্রান্ত হয়েছেন!

চার. চায়নিজদের ব্যঙ্গ করে বলা হচ্ছে-করোনা ভাইরাস! অ্যামেরিকা করোনার আরেক নাম দিয়েছে চায়না ভাইরাস।কেউ কেউ বলছে মেড ইন চায়না। তবে যারা আগে বলতেন-চায়না মাল সুখের মতো, বেশিক্ষণ টেকে না তারা এখন নড়েচড়ে বসছেন! এখন হয়তো তারা বলবেন-চাইনিজ করোনা,এখন আসে এবং থাকে, যায় না!

পাঁচ. গত পনের দিনে আপনি যতো প্রশ্ন শুনেছেন তার একটি এমন-সংবাদ সম্মেলন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষে প্রফেসর মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা করোনায় আক্রান্ত ও মৃতদের যে তালিকা দেন তা কী সত্যি? নাকি করোনায় আক্রান্তের ও মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি? আসলে আপনি কী চান করোনায় আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হোক?

এবার করোনা সার্কাস। সরকার না চাইলেও সার্কাস চলে-

এক. সরকার মানুষকে অন্তরীণ থাকার জন্য ছুটি ঘোষণা করে আর মানুষ নিজগৃহে ফেরার জন্য বাস ও ট্রেন স্টেশনে হামলে পরে। ফেরিতে হাজারো লোকের ভীড় হয়। তারপরও মানুষ করোনামুক্ত থাকুক!

দুই. শ্রমিকরে ছুটি দেয়ার পর আবারো ডাকা হয় তাদের কাজের নামে,বেতনের নামে। হেটে,রিক্সায়,বাসার ছাদে কিংবা ফেরিতে চড়ে লক্ষ মানুষ (মূলতঃ শ্রমিকশ্রেণীর মানুষ) চলে আসেন ঢাকায়। তাদের আগমন নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে পোষাক প্রস্তুতকারী মালিকদের প্রতিষ্ঠান বিজেএমইএ কিংবা বিকেএমই এর শীর্ষব্যক্তিরা গভীর রাতে জানান যে  শ্রমিকদের ছুটি বাড়ানো হয়েছে এবং তারা যথাসময়ে বেতন পাবেন! কেউ বলছেন ইপিডেজের ভেতরেই শ্রমিকরা ভালো ছিলেন! কেউ বলছেন না এই লাখ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষ এখন ঢাকায় কীভাবে থাকবেন কিংবা খাবেন!

তিন. সাধারণ রোগ নিয়ে কিংবা করোনা সন্দেহে অনেকে যান চিকিৎসা নিতে। বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতাল রোগিদের চিকিৎসা দিতে চান না বা কোন না কোন অজুহাত দিয়ে রোগিদের ফিরিয়ে দেন। এটা কী জীবন নিয়ে সার্কাস না?

এবার শিক্ষা প্রসঙ্গ। কী হবে যারা পড়ালেখা শেষ করেন নি তাদের?

এক. কবে প্রকাশ হবে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফল? সম্ভবতঃ এই মুহুর্তে কারো পক্ষে বলা সম্ভব না। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলে এবং একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সময় চলে এলে পরীক্ষার ফলাফল কীভাবে নির্ণয় করা হবে?

দুই. এইচএসসি বা সমমানের বেলাতে কী হবে? সরকারের কর্তাব্যক্তিরে পরিকল্পনা কী? কিছু কী জানানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের?

তিন. সরকারের ব্যবস্থাপনায় একটি সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই সীমিত পরিসরে ক্লাশ নেয়া চলছে। প্রাথমিকের জন্য শুরু হবে আগামীকাল।  সরকারের এটা বেশ ভালো উদ্যোগ কিন্তু সবাই কী অন্তরীন অবস্থায় এই শিক্ষার সুযোগ গ্রহণ করতে পারছে? সরকারের কোন সিদ্ধান্ত আছে এই ব্যাপারে?
 
তাহলে কী দাঁড়ালো শেষমেষ? প্রথমে বেঁচে থাকাটাই আসল এমন চিন্তা? তাহলে একবারেই নিম্ন আয়ের মানুষ এবং কর্মজীবীরে কী হবে? সবার ভেতরে থাকবে সমান মানবিকতা? মানুষ মানুষের জন্য মনোবৃত্তি নিয়ে খুব সাধারণ মানুষদের বাঁচাতে হাত বাড়িয়ে দেবেন অধিক আয়ের মানুষেরা? অর্থনীতিতে ধ্বস নামলে কী হবে দেশের এবং এই পৃথিবীর?
করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারের মতো সব প্রশ্নের উত্তর মানুষ জানেনা। কিন্তু পেটে ক্ষুধা থাকলে ক্ষুধার্ত বাঘ যেমন করে চলে আসে লোকালয়ে মানুষও নেমে আসবে রাস্তায়। অন্তরীন রাখার মতো বাঘের খাঁচায় ক্ষুধার্ত বাঘরুপী মানুষকে তখন বেধে রাখা যাবে?

লেখাটা শুরু করেছিলাম ‘সম্রাট আকবরের ভাঙ্গিয়া ও জাঙ্গিয়া’র ঘটনা নিয়ে। সম্রাট আকবর যেমন যে কোনও পরিস্থিতিতে ভাঙ্গিয়া পরিতেন না মানুষও যেন এই করোনা পরিস্থিতে একটু বিবেচক হয়ে ধৈর্যধারণ এবং করোনামুক্ত থাকার অনুশাসন মেনে চলে।

সবশেষে একটা অন্যরকম গল্প।

এক লোক একটা ঝুড়িতে কী যেন চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছে। সে চিৎকার করে বলছে-বাঘের খাঁচা বিশ টাকা, বাঘের খাঁচা বিশ টাকা। খালি বিশ শুধু বিশ! লোক জমে গেল ঐ লোকের ঝুড়ির চারিদিকে। এক লোক এগিয়ে  এসে বললো এই নেন বিশ টাকা। এবার দেন বাঘের খাচা। লোকটা টাকা নিয়ে ঝুড়ি থেকে একটা আন্ডারওয়ার (জাঙ্গিয়া) বের করে বললো-এই নিন আপনার বাঘের খাঁচা!

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0074939727783203