ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ভ্যাটের বোঝায় দিশেহারা অভিভাবক - Dainikshiksha

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ভ্যাটের বোঝায় দিশেহারা অভিভাবক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

vat

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কঠোর আন্দোলনের মুখে সরকার তাদের ওপর আরোপিত সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করলেও এখনো ভ্যাটের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এমনিতেই এসব স্কুলে অতিরিক্ত সেশন চার্জ ও টিউশন ফির কারণে বিশাল অঙ্কের টাকা গুনতে হচ্ছে অভিভাবকদের। এর ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট থাকায় তা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণে ইংরেজি মাধ্যমের অভিভাবকরা এক মাস এই ভ্যাট থেকে মুক্তি পেলেও আবার যথারীতি ভ্যাট দিতে হচ্ছে তাঁদের।

অভিভাবকরা বলছেন, বাংলাদেশের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এখন আর উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জন্য নয়। এসব স্কুলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা। ফলে ভ্যাটের বোঝা এসব অভিভাবকের জন্য বড় ধরনের চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভুক্তভোগী অভিভাবকরা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে তা বহাল রাখা ‘এক দেশে দ্বৈত নীতি’। তাঁদের দাবি, সব শিক্ষার্থীর জন্যই এক নিয়ম থাকা উচিত।

জানা যায়, ২০১২ সাল থেকে ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট দিয়ে আসছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু চলতি অর্থবছরে তা বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপরও এই হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে সেই ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে ভ্যাট আদায় বহাল থেকে যায়।

এরপর সানিডেল ও সানবিম স্কুলের দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের করা রিটের শুনানি শেষে গত ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের টিউশন ফির ওপর আরোপিত সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ড. শাহদীন মালিক ও এম মনজুর আলম। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ অক্টোবর আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত করেন। ফলে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো অক্টোবর মাসে ভ্যাট আদায় বন্ধ রাখলেও নভেম্বর মাস থেকেই তা আবার চালু করে।

এসব বিষয়ে রিটকারীর আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘রিটটি এখন শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ আছে। আশা করছি, মার্চ মাসে এটি উঠবে। আসলে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোর ব্যাপারে সরকারের আচরণ বৈষম্যমূলক। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভ্যাট নেই অথচ শুধু ইংলিশ মিডিয়ামে আছে। আর ইংরেজি শিক্ষাকে নিরুৎসাহিত করার পেছনে সরকারের কোনো পলিসি আছে বলেও আমার জানা নেই। তাহলে কেন এই বৈষম্য? এতে তো ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে না। কম্পিউটারের উইন্ডোজ তো ইংরেজি ছাড়া কিছু বোঝে না। তাই ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাকেও সরকারের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’

ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অভিভাবকদের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আমিনা রত্না বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন প্রচারে এলেও আগে থেকেই কিন্তু আমরাই তা শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমরা সংখ্যায় কম ও একতাবদ্ধ নই। আমাদের শিক্ষার্থীরা ছোট। তাদের পক্ষে রাস্তায় নামা কঠিন। তাই সরকারও আমাদের দিকে নজর দিচ্ছে না। সরকার একটা জরিপ করে দেখুক, কতজন উচ্চবিত্তের ছেলেমেয়ে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে আর কতজন মধ্যবিত্তের। আমরা একটু ভালো শেখানোর জন্য কষ্ট করে বাচ্চাদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াচ্ছি। অথচ আমাদের উৎসাহিত না করে উল্টো ভ্যাটের বাড়তি বোঝা চাপাচ্ছে সরকার, যা আসলেই বৈষম্যমূলক।’

জানা যায়, দেশে ১৫৯টি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে প্রায় ৬৫ হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করলেও তাদের ব্যাপারে বরাবরই উদাসীন শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীর ওপর আরোপ করা ভ্যাটের ব্যাপারে তাদের কিছুই করার নেই বলে আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছে তারা। স্কুল কর্তৃপক্ষ সেশন চার্জ ও ফি বাড়ালে অভিভাবকদের চাপের মুখে প্রতিবছর জুলাই মাসে একটু নড়েচড়ে বসে মন্ত্রণালয়। এরপর আবার সারা বছর চুপ। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তারা। সম্প্রতি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর ব্যাপারে একটি নীতিমালা তৈরি করা হলেও তা কার্যকরে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি মন্ত্রণালয়। কাগজে-কলমে তাদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল নিয়ন্ত্রণে একটি শাখা থাকলেও বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। ফলে এখনো ইচ্ছামতো চলছে এই স্কুলগুলো। উচ্চহারের এই বেতনের সঙ্গে অভিভাবকদের ওপর চাপ তৈরি করছে সরকারের আরোপ করা সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট।

নাম প্রকাশ না করে ম্যাপললিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের একজন অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মাসে বেতন দিতে হয় চার হাজার ৫০১ টাকা। আর এর সঙ্গে প্রতি মাসেই যোগ হয় ৩৩৯ টাকার ভ্যাট। আসলে এই ভ্যাট এখন বোঝার ওপর শাকের আঁটি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

সানিডেল স্কুলের আরেকজন অভিভাবক বলেন, ‘আমার দুই বাচ্চার ভ্যাট বাবদ প্রতি মাসে প্রায় দেড় হাজার টাকা বেশি দিতে হয়। বাচ্চাদের পড়ালেখায় এই ভ্যাট আসলেই বড় ধরনের বোঝা। সরকার এই ভ্যাট আরোপের মাধ্যমে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের পড়ালেখাকে অনুৎসাহিত করছে।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064380168914795