ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল লাগামহীন ঘোড়া! - দৈনিকশিক্ষা

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল লাগামহীন ঘোড়া!

আকতারুজ্জামান |

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোকে দেখার যেন কেউ নেই! এসব স্কুল তদারকির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নীতিমালাও নেই! আর তাই ইচ্ছেমতো নিজের খেয়াল খুশিমতো চলছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নিয়মনীতির কোনো বালাই না থাকায় রাজধানীতে একের পর এক ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক স্কুলেই কর্মরত শিক্ষকদের নামমাত্র বেতন দেওয়া হচ্ছে। অথচ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে গলা কাটা ফি।

এইসঙ্গে মাঝে মধ্যেই বাড়ানো হচ্ছে ভর্তি ফি, মাসিক বেতনসহ অদ্ভুত সব চার্জ। সবমিলে লাগামহীন ঘোড়ার মতোই দাপিয়ে চলেছে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। ব্রিটিশ কিংবা এডেক্সেলের সিলেবাস অনুসরণ করে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করে ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে পরীক্ষা দিলেও— কতজন কী পরীক্ষা দিল, এডমিশন ও টিউশন ফি বাবদ কত টাকা আদায় করা হলো— সেসব বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনো তথ্যই নেই। জুলাই থেকে জুন হলো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর শিক্ষাবর্ষ।

জানা গেছে, বারিধারার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে কেজি গ্রেড ওয়ান থেকে গ্রেড ৫ শ্রেণিতে টিউশন ফি নেওয়া হয় ২৬ হাজার ৩১০ ইউএস ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে ২২ লাখ টাকা। গ্রেড ৯ থেকে গ্রেড ১২ শ্রেণির টিউশন ফি নেওয়া হয় ৩২ হাজার ৮০ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এ অঙ্ক ২৭ লাখ টাকার বেশি। ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত দিল্লি পাবলিক (ডিপিএস এসটিএস স্কুল) স্কুলে প্লে শ্রেণিতে ভর্তি হতেই জমা দিতে হয় আড়াই লাখ টাকা। আর মাত্র তিন মাসের টিউশন ফি হিসেবে পরিশোধ করতে হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। গ্রেড ১২ শ্রেণিতে তিন মাসের টিউশন ফি পরিশোধ করতে হয় প্রায় ৮১ হাজার টাকা।

ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকায় কিন্ডার গার্টেন গ্রেড ওয়ান শ্রেণিতে টিউশন ফি আদায় করা হয় ১৬ হাজার ৬০০ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ১৪ লাখ টাকা। গ্রেড ৪ শ্রেণিতে টিউশন ফি নেওয়া হয় ২৬ হাজার ১৫০ ডলার বা প্রায় ২২ লাখ টাকা। ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে সিকিউরিটি ডিপোজিট হিসেবে জমা দিতে হয় ৫০০ ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় সাড়ে ৪১ হাজার টাকা। রাজধানীর উত্তরায় আগাখান স্কুলে প্লে ও কেজি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি ফি ১ লাখ ৪৮ হাজার ৬০৮ টাকা। শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতিমাসের টিউশন ফি নেওয়া হয় ১৩ হাজার ৫৪৫ টাকা করে। নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সময় টিউশন ফি, ভর্তি ফিসহ মোট ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭২৯ টাকা পরিশোধ করতে হয়। তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হতে হলে এক শিক্ষার্থীকে পরিশোধ করতে হয় ১ লাখ ৯০ হাজার ৩৭৪ টাকা।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, বারিধারায় অবস্থিত অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে ৭০ হাজার টাকা। এই স্কুলে বছরে ৪ সেমিস্টারের প্রতি সেমিস্টারে পরিশোধ করতে হয় ২৯ হাজার ২২২ টাকা। ম্যাপল লিফ স্কুলে প্লে শ্রেণিতে ভর্তিতে আদায় করা হয় ৫৫ হাজার ৮৭১ টাকা। ক্লাস ওয়ানে ভর্তি ফি নেওয়া হয় ৬২ হাজার টাকা। মিরপুরে হিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে প্লে ও কেজি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি ফি ১৭ হাজার টাকা। প্রতিবছর বার্ষিক চার্জ হিসেবে আদায় করা হয় আরও ১৩ হাজার টাকা। এভাবেই লাগামহীনভাবে এডমিশন ফি ও মাসিক বেতন আদায় করছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো। অভিযোগ রয়েছে, উচ্চহারে বেতন-ফি নির্ধারণ করলেও অনেক প্রতিষ্ঠানেই সহশিক্ষা কার্যক্রমের কোনো বালাই নেই।

শিশুদের খেলার মাঠ ও প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই বেশিরভাগ স্কুলেই। জানা গেছে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান ছাড়াও রাজধানীর হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, মাস্টার মাইন্ড, স্কলাসটিকা, ইন্টারন্যাশনাল টার্কিশ হোম স্কুল, আরব মিশন পাবলিক স্কুলসহ প্রায় তিন শতাধিক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থী ভর্তিতে নেওয়া হয় লাখ লাখ টাকা। ইংরেজি মাধ্যমধারী এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ কিংবা এডেক্সেল কারিকুলাম পড়ানোর কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে— অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, শিক্ষাবোর্ড এসব ব্যাপারে উদাসীন থাকছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১২ সালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নেতৃত্বে কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভাগুলোতে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, রাশেদা কে চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানসহ অন্যরা অংশ নেন। বিভিন্ন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের স্বত্বাধিকারীরাও সভায় উপস্থিত ছিলেন। এ সময় নীতিমালাটি পর্যালোচনা করে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নতুন নীতিমালা করার উদ্যোগ নিলে— সেটি না করতে প্রতিষ্ঠান মালিকরা নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। ফলে নতুন নীতিমালা তৈরির কাজ সেখানেই থেমে যায়। জানা গেছে, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের জন্য একটি পৃথক নীতিমালা প্রণয়নের জন্য ২০১২ সালে উচ্চ আদালত নির্দেশনা দিয়েছিল।

ঢাকা শিক্ষাবোর্ড ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের জন্য খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমাও দিয়েছিল। কিন্তু এরপর আর এগুলোর কোনো গতি হয়নি। ওয়াকিবহালরা বলছেন, নীতিমালার অধীনে না থাকায় এসব স্কুল লাগামহীনভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। গলা কাটা ফি ও মাসিক বেতন আদায় করছে। স্কুলগুলো নিয়ন্ত্রণ করা এখন সময়ের দাবি।

 

সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0066928863525391