উচ্চ শিক্ষায় পিছিয়ে নারীরা - দৈনিকশিক্ষা

উচ্চ শিক্ষায় পিছিয়ে নারীরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশে প্রাথমিক স্তর থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষায় নারীদের উপস্থিতি বেশি হলেও উচ্চ মাধ্যমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা স্তরপর্যন্ত এ চিত্র ঠিক উল্টো। উচ্চ মাধ্যমিক স্তর থেকে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে নারীরা। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক স্তরে ছাত্রীর হার ৫০ দশমিক ৭৫ শতাংশ, জুনিয়র স্কুলে (৬ষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি) ৫৫ দশমিক ১৪ শতাংশ, মাধ্যমিকে (নবম থেকে দশম শ্রেণি ) ৫১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

এর পরই ছাত্রীদের সংখ্যা কমতে থাকে। উচ্চ মাধ্যমিকে ছাত্রীর হার (একাদশ-দ্বাদশ) ৪৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ, ডিগ্রিতে ৪১ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ৩৬ দশমিক ০৭ শতাংশ। গতকাল রবিবার ব্যানবেইস এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। তিনি বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক উন্নতি ও অগ্রগতি হয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্রমান্বয়ে ভাল করছে। শিক্ষা বিষয়ক তথ্য সঠিকভাবে সন্নিবেশ, তথ্যের বিশ্লেষণ এবং সঠিক কাজে লাগানোর মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দারিদ্র্র্য, উচ্চ শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত আবাসনের সুবিধা না থাকা, বিয়ে হয়ে যাওয়া-এগুলোই উচ্চ শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

ব্যানবেইস তথ্য অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রীদের ভর্তির হার বেশি হলেও নারীদের ঝরে পড়ার হারও বেশি। স্কুল, মাদ্রাসা ও ভোকেশনাল শিক্ষায় ৪০ শতাংশ ছাত্রী ঝরে পড়ছে। যেখানে ছাত্র ঝরে পড়ছে ৩৭ দশমিক ৬২ শতাংশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের ৪২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৬২৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২ লাখ ৫১ হাজার ৮ জন ছাত্রী। যা মোট শিক্ষার্থীর ৩৭ দশমিক ০৯ শতাংশ। এছাড়া ১০৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ লাখ ২৮ হাজার ৩১৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫ জন নারী। যার মোট শিক্ষার্থীর ২৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

ব্যানবেইজের তথ্য অনুযায়ী, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ২০১৭ সালের চেয়ে ২০১৮ সালে ছাত্রীর সংখ্যা কম ছিল। ২০১৭ সালে ছাত্রীর অংশগ্রহণ ৪২ দশমিক ১০ শতাংশ হলেও গত বছর কমে হয়েছে ৪১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর স্নাতকোত্তরে কমেছে শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩ হাজার ৩৬০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী ১২ হাজার ২৩৮ জন। আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ হাজার ৮৫৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী মাত্র ১ হাজার ৮৭৩ জন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ হাজার ৪১৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৪ হাজার ৮১৪ জন ছাত্রী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নারীর উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে এখনো অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। এটা আরো বেশি মফস্বল এলাকার নারীদের। উচ্চশিক্ষার জন্য আবাসনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পর্যাপ্ত আবাসনের সুযোগ নেই। সামাজিক নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। এছাড়া দারিদ্র্যের কারণে অনেক বাবা-মা আগে আগেই মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছেন।

মাধ্যমিক স্তরে মেয়েদের হার বৃদ্ধির কারণ হিসাবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে সব সরকারই শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। সেই সঙ্গে মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর জন্য নানা ধরনের উত্সাহব্যাঞ্জক নীতিমালা তৈরি করেছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত মেয়েদের পড়াশোনা এক প্রকার অবৈতনিক বলা যায়। এছাড়া উপবৃত্তিসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এছাড়া নারী শিক্ষার উন্নয়নে অনেক এনজিও নানা ধরনের সহযোগিতা করে থাকে। এ কারণে এই স্তরে মেয়েদের অংশগ্রহণ বেশি। কিন্তু উচ্চ শিক্ষার স্তরের এত সুযোগ নেই নারীদের জন্য।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষায় মেয়েদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমাটা উন্নয়নশীল দেশের চিত্র। আর্থ-সামাজিক কারণে এমনটি হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। উচ্চ শিক্ষার ব্যয় বেশি। সরকারের পক্ষ থেকে তেমন আর্থিক সহায়তা নেই এই স্তরের শিক্ষায়। পরিবারও ছেলের পেছনে শিক্ষা ব্যয় করতে বেশি আগ্রহী। মেয়েদের যাতায়াতেও সমস্যা হয়। এছাড়া এসএসসির পর মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার একপ্রকার ঝোঁক থাকে। এ কারণে উচ্চ শিক্ষায় মেয়েরা পিছিয়ে রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, বাবা-মা মনে করেন ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সে বিয়ে দেওয়ার আদর্শ সময়-এই ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় পাঠাতে হবে। মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা দিলে তারা ছেলেদের চেয়ে ভালো করবে। সরকারের উচিত মেয়েদের শিক্ষার পেছনে ব্যয় বাড়ানো। মেয়েদের শিক্ষার সব অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করলে এ স্তরে মেয়েদের ভর্তি বাড়বে।

সূত্র: ইত্তেফাক

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038259029388428