এনটিআরসিএকে বিনয় করে বলি - দৈনিকশিক্ষা

এনটিআরসিএকে বিনয় করে বলি

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

বেসরকারি স্কুল ও কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকট এখন কেবল চরম পর্যায়ে নয় বলা যায় মহাসংকটে। শিক্ষক সংকটের এ অবস্থা চলমান থাকলে স্কুল-কলেজে স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। গত কয়েক বছর ধরে ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্ণিং বডি শিক্ষক নিয়োগ দিতে না পারায় সব স্কুল-কলেজে একাধিক শিক্ষকের পদ খালি। কোথাও কোথাও চার পাঁচটা পদ খালি পড়ে আছে। স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সারা দেশে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। 

উপবৃত্তি ও বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দেবার কারণে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া প্রায় শতভাগ রোধ হয়েছে। এখন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় কৃতকার্য হবার পর কোনো শিক্ষার্থী আর ঘরে বসে থাকে না। প্রায় সকলেই হাই স্কুলে ভর্তি হয়। তাই, এখন স্কুল ও কলেজগুলোতে ছাত্রছাত্রী আর ধরেনা। প্রতিটি স্কুল-কলেজে আর যে সমস্যা থাক না কেন 'শিক্ষার্থী কম' বলে কোনো সমস্যা নেই। এক সময় তো নতুন কোনো স্কুল-কলেজ শুরু করলে প্রথমেই শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়তে হতো। সে দুর্দিন এখন নেই। একদিকে সরকারের নানা উদ্যোগ আর অন্যদিকে লেখাপড়ার বিষয়ে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রী পেতে কোন অসুবিধা হয় না। এখন ছেলে-মেয়ে সমানে সমান পড়তে যায়। কখনো কখনো বরং ছেলেদের চেয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। 

যে হারে শিক্ষার্থী বেড়েছে সে হারে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হলে জনবল কাঠামো-২০১৮'র স্ট্যাফিং প্যাটার্ন এখনই কার্যকর করা দরকার ছিলো। সেদিকটি বিবেচনা করে জনবল কাঠামো-২০১৮ তে স্ট্যাফিং প্যাটার্ন পুনর্বিন্যাস করলেও এখনো তা কার্যকর করা হয়নি। কবে হবে কে জানে? বেসরকারি স্কুল-কলেজের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই এনটিআরসিএ'র হাতের দিকে চেয়ে আছেন। সবার মাঝে এবার একটি একান্ত বিশ্বাস জন্মেছে যে, এনটিআরসিএ এবার একটা বড় ধরণের নিয়োগ দিয়ে ছাড়বে। 

আমার কাছে এবার এনটিআরসিএ-কে অনেকটা সুসংগঠিত ও দৃঢ় প্রত্যয়ী বলে মনে হয়েছে। তারা পরিকল্পনা মাফিক এবার একটি নিয়োগ দেবার ছক এঁকে অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে হয়। নিবন্ধনধারীরা ও এনটিআরসিএ'র সাম্প্রতিক তৎপরতায় উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। এমনিতে এক ধরণের হতাশার মাঝে দিনাতিপাত করছেন শিক্ষক হতে ইচ্ছুক নিবন্ধনধারীরা। জনবল কাঠামো-২০১৮ এর কোনো কোনো বিধির কারণে অনেকের শিক্ষক হবার শেষ ইচ্ছেটির অপমৃত্যু ঘটেছে। উদাহরণ স্বরুপ যাদের বয়স ৩৫ বছর অতিক্রম করে ফেলেছে তাদের কথা বলা যায়। 

নতুন জনবল কাঠামো অনুযায়ী তারা আবেদন করার অযোগ্য হয়ে পড়েছেন। এতগুলো নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অনেকেই দেখতে দেখতে বয়স ৩৫ বছর অতিক্রম করে ফেলেছেন। তারা এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন? এতদিন তো আনলিমিটেড বয়স ছিলো। কমিটির হাতে যতদিন নিয়োগ ছিলো ততদিন তো বয়সের কোনো বালাই ছিল না। এনটিআরসিএ যখন প্রথম একটা নিয়োগ দেয় তখনও আমার জানামতে বয়সের কোন সীমা রেখা ছিলো না। নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য যেহেতু আগে বয়সের কোন বাঁধা ছিল না সেহেতু যারা নিবন্ধন পরীক্ষায় আগেই কৃতকার্য হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে বয়সের বিষয়টি ভেবে দেখা সমীচিন বলে মনে করি। 

নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বেলায় বয়স সীমা উল্লেখ থাকলে নিয়োগের সময় এ সমস্যায় পড়তে হয় না। বয়স বেঁধে নিবন্ধন পরীক্ষা নিলে পরীক্ষার রেজাল্টের সাথে সাথে যাতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়টি খেয়াল রাখা একান্ত প্রয়োজন। এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষকে আরো বেশি উদ্যমী ও কর্মতৎপর না হলে বেসরকারি স্কুল-কলেজের দুর্দিন ঘুচবেনা।  

প্রতি বছর অন্ততঃ একবার হলেও শুন্য পদের চাহিদা নেয়া দরকার। আহ্বানের সাথে সাথে যদি মাঠ পর্যায় থেকেও শুন্য পদের চাহিদাটা নেয়া হয় তাহলে কোনো সমস্যা আর দেখা দেবে না। অনেকেই সময়মত শূন্য পদের চাহিদা দিতে পারেন না। অনেকের কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ নেই। অনেকের আইসিটি শিক্ষক নেই। অনেক জায়গায় বিদ্যুত নেই। তবে এনটিআরসিএ-কে ধন্যবাদ জানাতে হয় এজন্য যে তারা কিন্তু সব প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ম্যাসেজ পাঠিয়ে শূন্য পদের চাহিদা দেবার কথা বলে থাকে। চাহিদা দিতেও অনেক সময় ভুল হয়ে যায়। ভুল হওয়াই স্বাভাবিক। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা যেমন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার যদি তার উপজেলার সব ক'টি প্রতিষ্ঠান সরেজমিন তদন্ত করে শুন্যপদের তালিকা পাঠান তাহলে চাহিদা প্রেরণে ভুল যদি থেকেও থাকে তবে সেটি শুধরানো যায়। 

আরেকটি বিষয়ে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি লেখা দৈনিক শিক্ষাডটকমে দেবার জন্য অনেক নিবন্ধনধারী আমাকে মোবাইল করে অনুরোধ জানিয়েছেন। সেটি এনটিআরসিএ'র গণবিজ্ঞপ্তির আলোকে নিবন্ধনধারীদের আবেদনের সময়সীমা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে। আসলে তাদের কথাটি বলার জন্যই আজকের লেখার অবতারণা। কিন্তু তাদের কথা বলি বলি করে এতদূর এসে পড়েছি। তারপরও তাদের কথাটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একটু বুঝিয়ে বলি। আশা করি তারা মন দিয়ে শুনে তদনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। 

গণবিজ্ঞপ্তিটি আসলে এমন একটি সময়ে প্রচার করা হয়েছে যখন সারা দেশ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক উত্তাল হাওয়ায় ভাসছিল। যে যাই বলিনা কেন, নির্বাচনই আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় সার্বজনীন উৎসব। সেটি স্থানীয় পর্যায় কিংবা জাতীয় পর্যায়ের যে নির্বাচনই হউক না কেনো। তাই নির্বাচনের উদ্যম হাওয়ায় গণবিজ্ঞপ্তিটি সবার নজরে আসেনি। 

এছাড়া সম্ভবতঃ নির্বাচন শেষের পর পরই আবেদনের সময়সীমা পেরিয়ে যায়। তদুপরি নির্বাচনকালীন দু'-তিনদিন ইন্টারনেটের থ্রি-জি ও ফোর-জি বন্ধ থাকায় এবং টু-জি'র তেমন স্পিড না থাকায় অনলাইনে অনেকে আবেদন করতে পারেননি। সে কারণে দৈনিক শিক্ষার মাধ্যমে এ বিষয়টি এনটিআরসিএ'র নজরে আনার জন্য অনেকেই আমাকে বার বার অনুরোধ করেছেন। আমি তাই গণবিজ্ঞপ্তিটি পুনরায় প্রকাশ করে আবেদনের জন্য ন্যূনতম দশদিন সময় দেবার সবিনয় অনুরোধ করি। আশা করি, এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি শিক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে বিবেচনা করে দেখবেন। 

লেখক: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট ও দৈনিক শিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036628246307373