ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাস বাঙালি জাতির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ দুটো মাস। বছরের শুরুর এ মাস দুটোয় বাঙালির হৃদয়ের যত ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, আবেগ ও উচ্ছ্বাস ঝরে পড়ে সর্বোচ্চ আত্মোৎসর্গকারী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জন্য।
ফেব্রুয়ারি এলে একুশ আসে, আর মার্চে মাসব্যাপী আয়োজন থাকে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক দুটো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে। এ দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠায় ও স্বাধীনতা অর্জনে এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা যে আত্মত্যাগ করে গেছেন তার সঠিক পটভূমি জানা এবং তাদের সব অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা। সোমবার (২৩ মার্চ) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, বাংলা ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস যে জানে না, সে কোনোদিনই এ দেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে দাবি করতে পারে না। কিন্তু চরম দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেছি, এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ভাষাশহীদদের স্মরণ করতে গিয়ে পরপর কয়েকটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা আমাদের লজ্জায় ডুবিয়েছে।
২১ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার শিরোনাম দেখে চমকে উঠেছিলাম। একটি ‘বীরশ্রেষ্ঠ ও ভাষাসৈনিকদের চেনে না ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ব্যানার নিয়ে তোলপাড়’। ২৪ ফেব্রুয়ারি অন্য একটি পত্রিকার শিরোনাম ছিল, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের একুশের ব্যানারে বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি।’ একই তারিখে অন্য আরেকটি পত্রিকার শিরোনাম ছিল এমন, ‘ভুল ও জোড়াতালির বানানে একুশে পদক।’
২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তৈরি ব্যানারে স্বাধীনতা যুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠদের ছবির নিচে লেখা- ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষাশহীদদের প্রতি আমাদের বিনত শ্রদ্ধা।’ এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। ডিএমপির এ কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজের জন্য অনেকে কড়া ভাষায় ধিক্কারও জানান।
আবার কেউ কেউ নরম সুরে বলেন, ‘তারা মাতৃভাষা দিবসের জন্য একটা ব্যানার বানাল অথচ বীরশ্রেষ্ঠ ও ভাষাসৈনিকদের মধ্যে পার্থক্যই বুঝল না।’ মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ পুলিশের এমন অর্বাচীন কর্মকাণ্ড সত্যিই মেনে নিতে কষ্ট হয়। আমার এখনও মনে আছে, সেই ছোট্টবেলা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ খুব ভোরে আমি আমার জীবনের প্রথম একজন মুক্তিযোদ্ধাকে চাক্ষুষ দেখেছিলাম। তিনি ছিলেন একজন পুলিশ সদস্য। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যখন অতর্কিতে আক্রমণ করে, তখন অকুতোভয় বাঙালি পুলিশ সদস্যরা নিজস্ব ক্ষুদ্র অস্ত্র দিয়েই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।
২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বাঙালি পুলিশ সদস্যদের সে প্রতিরোধ ছিল আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান সেনাদের সঙ্গে টিকে উঠতে না পেরে যে ক’জন পুলিশ সদস্য রাজারবাগ ত্যাগ করতে সক্ষম হয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজন মারাত্মকভাবে আহত হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় খুব ভোরে আমাদের আরামবাগের বাসায় এসে আশ্রয় নেন। আমার বাবা পাড়ার ডাক্তার জানে আলম চাচাকে ডেকে এনে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করিয়েছিলেন। ঢাকা শহরে তখন কার্ফু চলছে।
২৭ মার্চ দু’ঘণ্টার জন্য কার্ফু প্রত্যাহার করলে আমার প্রথম দেখা সেই মুক্তিযোদ্ধা আমাদের বাসা ত্যাগ করে চলে যান। তার নাম আমার মনে নেই। তিনি আজও বেঁচে আছেন কিনা জানি না। নাকি মুক্তিযুদ্ধের সময়েই নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন আমার আজও জানা হয়নি। তবে মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ উঠলেই আমার তার কথা মনে পড়ে। সেই মহান পুলিশ মুক্তিযোদ্ধার উত্তরসূরিদের আজকের নানাবিধ কেলেঙ্কারির খবর যখন কানে আসে, তখন মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্য বহনকারী এ সংগঠনের জন্য আফসোস হয় বৈকি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা আরও হতাশাব্যঞ্জক। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগ, তারপর ইতিহাস বিভাগের ব্যানারে ভাষাশহীদদের পরিবর্তে মুক্তিযুদ্ধের বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যানারের ওপরে ‘অমর ২১ ফেব্রুয়ারি’ এবং মধ্যখানের ছবির নিচে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সব ভাষাশহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি’। ভাবতে অবাক লাগে বিভাগের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য শিক্ষক এ ব্যানারসমেত প্রভাতফেরি করে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করলেও এ অমার্জনীয় ভুলটি তাদের কারও চোখে পড়েনি! আমি হতাশ হয়েছি এই ভেবে যে, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের দু-দুটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো শিক্ষকই এমন একটি মারাত্মক ভুলের জন্য কোনো দায়িত্ব নিলেন না। তারা সবাই শিক্ষার্থীর ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের লজ্জা ঢাকার চেষ্টা করেছেন।
ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মর্তুজা খালেদ, ‘বিভাগের দুজন শিক্ষার্থীকে নাকি ব্যানার তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল’ বলে তিনি তার নিজের ও অধীনস্থ দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দায়মুক্ত করে দিলেন। অর্থাৎ ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’-এর মতো অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ভারমুক্ত হলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যক্কারজনক ঘটনা এটাই অবশ্য প্রথম নয়। এর আগে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দিতে গিয়ে ‘জয় হিন্দ’ বলে স্লোগান দিয়ে তুমুল সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান।
পরে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। যদিও সে সময় এ স্লোগানকে ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতার স্মারক বলে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করেছিলেন ভিসি। ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে সাহায্য করেছে ঠিকই, তবে সে সাহায্যের পেছনে ছিল তাদের বৃহত্তর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার অভীষ্ট লক্ষ্য। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ভারতের সেই লক্ষ্য পূরণের মাশুল আজও আমরা দিয়ে যাচ্ছি। ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অবশ্য রকমফের আছে। লক্ষ করলেই বোঝা যায়, বিএনপি অথবা অন্য কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকলে এ কৃতজ্ঞতার প্রকাশ ভঙ্গি থাকে একরকম, আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সে ভঙ্গিমা পুরোপুরি পাল্টে যায়। তবে কোনো কোনো সময় এ কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভঙ্গিমা এমন লাগাম ছাড়া হয়ে যায় যে, তখন নিজ থেকেই লজ্জাবোধ করা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির এমন ভারতপ্রীতি নিয়ে সেসময় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেছিলেন, ‘টানা ৯ মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান শোনার জন্য নয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি এ স্লোগান দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগকে অসম্মান করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছেন। এটি চরম ঔদ্ধত্য ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।’ আমরা একই প্রতিক্রিয়া দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও। তারা বলেছিলেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ভিসি হয়ে, স্বাধীন বাংলাদেশের একজন নাগরিক হয়ে কোন বিবেচনায় তিনি ভারত নামক রাষ্ট্রের স্লোগান দেন? এজন্য তাকে গোটা জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।’ ঘটনার পর আমাদের সেই ভিসি মহোদয় ক্ষমা চেয়েছেন কিনা আজও আমরা জানতে পারিনি।
একটি কথা না বলে পারছি না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সমাজের বিভিন্ন স্তরে (সবাই নয়, কেউ কেউ) ভারত তোষণের যে অসুস্থ চর্চা শুরু হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান তারই একটি নমুনা। আমাদের সবচেয়ে প্রয়োজন মুহূর্তে ভারত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল সন্দেহ নেই। সে কথা আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। তার মানে এই নয় যে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে সবকিছু বিসর্জন দিতে হবে। আমাদের ন্যূনতম আত্মসম্মানবোধ বজায় রেখেই তাদের অবদানকে স্মরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভারতের অবদানের বিনিময়ে বাংলাদেশও এযাবৎ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কম স্বার্থত্যাগ করেনি। সে তালিকা এখানে নাই বা দিলাম। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত নিঃস্বার্থভাবে আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। তারা তাদের স্বার্থ নিশ্চিত করেই আমাদের সহযোগিতা করেছে, এখনও একইভাবে যে কোনো বিষয়ে ভারত তাদের স্বার্থ রক্ষা করেই বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখে চলেছে।
আমাদের সরকারি আমলারা ইদানীং যে ধারাবাহিক মুখরোচক কাণ্ডকারখানা ঘটিয়ে যাচ্ছেন তাতে এখন আর অবাক হই না। কারণ মেধার ভিত্তিতে না হয়ে যখন রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো অনুপযুক্ত ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে দেয়া হয়, তখন তারা সেই পদের ভারও বহন করতে পারেন না। ফলে এসব চরিত্রের ব্যক্তি এমন হাস্যরসের জন্ম দেবেন এটাই তো স্বাভাবিক! মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের যোগসাজশে স্বাধীনতা পদকের সোনা চুরির কেলেঙ্কারির ঘটনা আমরা কম-বেশি সবাই জানি।
এবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় একুশে পদক নিয়ে আরেকটি কলঙ্কজনক ঘটনা সবার সামনে হাজির করেছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবারের একুশে পদকে দুটি শব্দ ভুল বানানে লিখে লজ্জাজনক ঘটনাটি ঘটিয়েছে। পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের ওপরে ২০২০ সালের জায়গায় ‘খ্রিস্টাব্দ’ লিখে এবং ১৪২৬ বঙ্গাব্দ এর জায়গায় ‘বঙ্গব্দ’ বড়ভাবে লিখে মন্ত্রণালয় এ ভুল দুটো করে। তারা অবশ্য ‘বঙ্গব্দ’-এর মাঝখানে পরে আলাদাভাবে ‘আকার’ যোগ করে জোড়াতালির মাধ্যমে বানান সংশোধনের চেষ্টা করেছিলেন, তবে ‘খ্রিস্টাব্দ’ শব্দটি হুবহু রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা পদকপ্রাপ্তদের হাতে পদক তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। প্রশ্ন হল একুশের মতো গৌরবোজ্জ্বল পদকে বানান ভুলের মতো এমন কেলেঙ্কারি কি এড়ানো যেত না?
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অবহেলার জন্য যে এমন হয়েছে তা স্পষ্ট করে বলা যায়। কিন্তু হতাশ হয়েছি বানান ভুলের ঘটনা জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর তাদের গা বাঁচানো বক্তব্য শুনে। এ অমার্জনীয় ভুলের বিষয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামালকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, একটি বানানে ‘হয়তো’ অস্পষ্টতা থাকতে পারে। সেটি তো পরে ঠিক করা হয়েছিল। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটিই ভালো বলতে পারবে।
যুগ্ম সচিব ফয়জুর রহমান ফারুকী বলেন, ‘যারা পদক তৈরি করেন এটি তাদের দায়িত্ব। আমি বলতে পারব না!’ অতঃপর পদক তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যুগ্ম সচিব অসীম কুমারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার দায়িত্ব ছিল পদকের সোনার ওজন নিশ্চিত করা। বানান দেখার দায়িত্ব আমার না!!’ আমলাদের এসব দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য শুনে প্রশ্ন জাগে, রাষ্ট্রের বেতনভুক এসব কর্মকর্তার মধ্যে এমন কেউ কি নেই, যিনি এ কেলেঙ্কারির দায়িত্ব নিতে পারেন? যদি কেউই এ দায়িত্ব নিতে না চান, তাহলে তো সরকারকেই এ লজ্জার দায় নিতে হয়। সচেতন মানুষের ধারণা, ধরা খাওয়া ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সচিবদের বিরুদ্ধে যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যেত, স্বাধীনতা পদকে নকল সোনা দেয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দোষী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যদি যথাযথ ব্যবস্থা (আমরা এখনও যেহেতু জানি না) গ্রহণ করা হতো, তাহলে এবার হয়তো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এ কর্তাব্যক্তিরা এমন অনায়াসে তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারতেন না।
আমরা প্রতি বছর নিয়ম করে শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবসে দেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য অঙ্গীকার করে থাকি। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে, ভাষাসৈনিকদের নিয়ে আর কোনো কলঙ্কের জন্ম দেব না এমন শপথ কি আমরা নিতে পারি না? ফেব্রুয়ারি, মার্চ এবং ডিসেম্বর মাস বাঙালি জাতির জন্য আত্মোৎসর্গের মাস; যেখানে সব আবেগ, সব শ্রদ্ধা-ভালোবাসা, সব দুর্বলতা এক হয়ে মিশে আছে।
প্রতি বছরের মতো এ বছরও ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি শেষ হতে না হতেই স্বাধীনতার মাস মার্চ এসে হাজির। এ মার্চ মাসেই আমরা আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছি। হাজার বছরের বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন আমাদের এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা। অথচ বিগত কয়েক বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধ-মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে, ভাষাশহীদদের নিয়ে, শহীদ দিবস, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের মতো গৌরবোজ্জ্বল জাতীয় অনুষ্ঠানকে ঘিরে একের পর এক যে কলঙ্কজনক ঘটনার জন্ম দেয়া হচ্ছে তা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কি পারেন না আরও একটু দায়িত্বশীল হতে? সরকার কি পারেন না এসব দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করতে? সরকারেরই প্রাথমিক দায়িত্ব এসব বন্ধ করা। আর সরকার যদি এমন ধারাবাহিক কেলেঙ্কারি বন্ধ করতে না পারেন, তাহলে তো এ দেশের মানুষ সরকারকে দায়ী করলে দোষের কিছু দেখি না!
লেখক: একেএম শামসুদ্দিন, অসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা