২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সারা দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রচর্চার একটি রুদ্ধ ক্ষেত্র অবারিত হবে—এমনই মনে করেন সংশ্লিষ্ট সবাই। ছাত্রসংসদের দায়িত্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা করা এবং সাংস্কৃতিক ও মতাদর্শিক চর্চার ক্ষেত্রকে সপ্রাণিত রাখা। আশা করা যায়, ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
ডাকসু নির্বাচন ঘোষণার পর বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা বাড়ে। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেও প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দেয়। তবে ভোটগ্রহণ কোথায় হবে, তা নিয়ে সংগঠনগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। আগের মতো আবাসিক হলে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ছাত্রলীগ। কিন্তু ছাত্রদল ও বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো চায় একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হোক।
এই মতান্তরের মধ্যেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে গত সোমবার। আগামী ১১ মার্চ নির্বাচন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা; প্রত্যাহারের শেষ সময় ২ মার্চ। প্রার্থী তালিকা ৩ মার্চ এবং চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ৫ মার্চ। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হবে।
পদাধিকার বলে ডাকসুর সভাপতির দায়িত্বে থাকেন উপাচার্য। বাকি ২৫টি পদে নির্বাচন হবে। একই সঙ্গে হল সংসদের ১৩টি পদে নির্বাচন হবে। আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষের কার্যালয় হতে ১৯ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দেওয়া হবে। ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার মধ্যে হলের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। ওই দিনই মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে। হল সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র বিতরণ, জমা, বাছাই ও প্রত্যাহার কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য নির্ধারিত সূচি অনুযায়ীই হবে।
ডাকসু নির্বাচন শিক্ষাঙ্গনে, রাষ্ট্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে—সবাই এ আশা করছেন। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে কিছু সংশয় দেখা দিয়েছে। তফসিলকে ছাত্রলীগ স্বাগত জানালেও ছাত্রদল ও বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো আপত্তি জানিয়েছে। আবাসিক হলে নাকি একাডেমিক ভবনে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে—এ নিয়েই আপত্তি। আপত্তিকারীরা বলছেন, আবাসিক হলে ভোটকেন্দ্র হলে পেশিশক্তি চর্চার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে ভোট সুষ্ঠু হবে না।
আমরা চাই, শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্র ও মুক্তচিন্তার চর্চাক্ষেত্র আবারও উন্মুক্ত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট হবে। সব পক্ষের বক্তব্য শুনে ডাকসু নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক।
সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ