অমর একুশে গ্রন্থমেলার এবারের আয়োজনকে এককথায় বলা যায় পাঠকবান্ধব। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা প্রাঙ্গণ রীতিমতো বিশাল ময়দান। চলতি পথে ঠেলাঠেলি আর ধাক্কাধাক্কি, গায়ে গা লাগিয়ে চলার চিত্র এখনঅতীত। বইপ্রেমী ও ক্রেতাদের জন্য এটা স্বস্তির বিষয়। আয়োজক কর্তৃপক্ষ ও প্রকাশকদের প্রত্যাশা, আগামীকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনটি থেকেই জমে উঠবে এবারের বইমেলা।
পাঠকের উপস্থিতি কম হোক, বই প্রকাশ কিন্তু থেমে নেই। বুধবার(৭ জানুয়ারি) মেলায় নতুন বই এসেছে ১৯০টি এবং প্রথম সপ্তাহে নতুন বই এসেছে মোট ৭২৯টি।
মেলায় এসেছে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর বই ‘চ্যারিয়ট অফ লাইফ’। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে এ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাঁরা ইতিহাসের সাক্ষী হিসাবে রয়েছেন, প্রকৃত ঘটনাবলি প্রত্যক্ষ করেছেন – তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতাগুলি আরও বেশি বেশি লিখে নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারেন।’ বইটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনী সংস্থা শ্রাবণ। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা ও এক-এগারোর সেনা সমর্থিত সরকারের সময়ের কারাবাসের স্মৃতি নিয়ে এ গ্রন্থটি তিনি লিখেছেন।
এসেছে আনিসুল হকের ‘আলো-আঁধারের যাত্রী’
প্রথমা প্রকাশনী থেকে মেলায় এসেছে আনিসুল হকের ইতিহাস আশ্রিত ধারাবাহিক উপন্যাসের তৃতীয় পর্ব ‘আলো-আঁধারের যাত্রী’। এই পর্বে ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল এই দশ বছরের ইতিহাসকে উপন্যাসে তুলে এনেছেন লেখক। বাংলাদেশের রাজনীতির তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক লড়াইয়ের এক উত্তাল সময় উঠে এসেছে এ পর্বে। এর আগের দুটি পর্ব ছিল ‘যারা ভোর এনেছিল’ ও ‘ঊষার দুয়ারে’।
প্রত্যেকের জীবনেই গল্প থাকে : গুলতেকিন খান
গুলতেকিন খান এবার প্রথমবারের মতো লিখেছেন উপন্যাস। নাম ‘চৌকাঠ’, প্রকাশ করেছে তাম্রলিপি প্রকাশনী। গতকাল মেলায় এসেছিলেন গুলতেকিন খান। বললেন, আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই অন্তত একটি গল্প আছে, গল্পগুলো যুক্তিতর্ক বা নিয়মকানুনের খুব একটা ধার তারা ধারে না। যে দৃশ্যমান চৌকাঠগুলো আমাদের চারপাশে নিরন্তর পাহারা দিতে থাকে, তাদের ছাড়িয়েও আমাদের অনেক সীমানা থাকে। প্রেম আর অপ্রেমের মাঝখানে জেগে থাকে নিরানন্দ এক পথ। এসব নিয়েই একটুখানি লেখার চেষ্টা।
আরো নতুন বই
গতকাল প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো, অবসর এনেছে হুমায়ূন আহমেদের ‘সেরা সাত ভৌতিক উপন্যাস’, একই প্রকাশনী থেকে এসেছে বেগম আকতার কামালের ‘নজরুল দৃষ্টি ও সৃষ্টি’, শিকড় এনেছে আহসান হাবীবের ‘শ্রডিঙ্গারের জেব্রা’, আগামী এনেছে নাসরীন জাহারের ‘সেরা গল্প’, অনিন্দ্যপ্রকাশ এনেছে আহমদ রফিকের ‘সংস্কৃতি কথা যুক্তিবাদ মুক্তচিন্তা’, দ্বিজেন শর্মার ‘নিসর্গ কথা’, রোদেলা এনেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘ভূতের নয় ভবিষ্যতের’, জোনাকী এনেছে খিলখিল কাজীর ‘কাজী নজরুল ইসলামের পঞ্চকাব্য’ প্রভৃতি।
মেলামঞ্চে অনুষ্ঠান
বইমেলায় বুধবার আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় কবি আবদুল গফ্ফার দত্তচৌধুরীকে নিয়ে। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শুভেন্দু ইমাম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আলী মোস্তাফা চৌধুরী, জফির সেতু ও মোস্তাক আহমাদ দীন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, কান্তা নন্দী, মো. নূরুল ইসলাম প্রমুখ।