কিছু ওসি ডিসি ও ভিসি নিয়ে নানা কথা - দৈনিকশিক্ষা

কিছু ওসি ডিসি ও ভিসি নিয়ে নানা কথা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুপ্রেরণা সৃষ্টিকারী লেখিকা মেলোডি বিয়াত্তি তার এক রচনায় নতুন বছর নিয়ে একটি চমৎকার কথা লিখেছিলেন, তার মতে নতুন বছর আমাদের সামনে একটি বইয়ের এমন একটি অধ্যায় হিসেবে হাজির হয়, যা এখনো লেখার অপেক্ষায় আছে, আমরাই পারি একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে সেই অধ্যায়টি রচনা করতে। অনেক আশা-আকাক্সক্ষা নিয়েই শুরু হয়েছিল ২০১৯-এর পথ চলা। ২০১৮-এর ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অকল্পনীয় আসন সংখ্যা লাভ করে। তাই বছরের শুরুই হয়েছিল অনেক জল্পনা-কল্পনা নিয়ে। মন্ত্রিসভা, বিরোধী দল, সংসদ ও শ্বপথ প্রশ্নে বিএনপির শেষ কথা, বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া, নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণ- এমন বেশ্ব কিছু জটিল প্রশ্ন নিয়ে বছরের শুরুটাই ছিল বেশ্ব সরগরম। তবে বেশ্ব শ্বক্ত অবস্থানে থাকা আওয়ামী লীগ ছিল নির্ভার এবং নিশ্চিত। শ্বক্তিশালী বিরোধী দলের অনুপস্থিতি, বিএনপির নতজানু অবস্থান, জঙ্গি ও মৌলবাদের অন্তিম অবস্থান দলটির সামনে রাজনীতি ও প্রশাসনের এক নতুন ধারা সৃষ্টির অপূর্ব সুযোগ এনে দেয়। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, বছরের দ্বিতীয় দিনেই সংবাদ শিরোনাম হন নারায়ণগঞ্জ জেলার কেরানীগঞ্জের এসিল্যান্ড মতিউর রহমান। এই দিন (২ জানুয়ারি ২০১৯) এসিল্যান্ড মতিউর রহমান তার অফিসের লোকজন নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসার ডা. মীর মোবারক হোসেন, মেডিসিন কনসালট্যান্ট জাকির হোসেন এবং উপজেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর হামলা করেন বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত এসিল্যান্ড এবং ভূমি অফিসের অপর তিন কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়।

বছরের শেষ দিকে এসে সংবাদের শিরোনাম হন দিনাজপুরের এসিল্যান্ড আরিফুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অস্থায়ীভাবে নিযুক্ত তার ড্রাইভার নুরুল ইসলামকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে চাকরিচ্যুত করেন। নূরুল ইসলামের বাবা জোগিবাড়ি এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন (৭৫) পুত্রের এই চাকরিচ্যুতি মেনে নিতে পারেননি। তাদের অভিযোগ এসিল্যান্ড আরিফুল ইসলাম ড্রাইভার নুরুল ইসলামকে গৃহকর্মীর কাজ করার আদেশ্ব দেন। তা না করায় তাকে অন্যায়ভাবে ছাঁটাই করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাবা মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড এবং ডিসি মাহমুদুল আলমসহ প্রশাসনের অন্যদের দ্বারে দ্বারে ঘোরেন ছেলের চাকরির আকুতি নিয়ে। কিন্তু তাদের পক্ষে কারও সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয়নি। এতে অপমানিত বোধ করেন মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন। তাই আক্ষেপ করে তিনি ঘোষণা দেন যে, তার মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রাপ্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া রাষ্ট্রীয় সম্মান তাকে যেন না দেওয়া হয়। এককথায়, যারা তার ছেলেকে চাকরিচ্যুত করেছেন এবং তার কোনো কথা শুনতে চাননি, তাদেরকে মৃত্যুর পর তিনি তার মৃতদেহের বা কবরের পাশে দেখতে চাননি। এই ঘটনার পরদিনই মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের মৃত্যু ঘটে এবং কোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় সম্মান ছাড়াই তাকে দাফন করা হয়। দিনাজপুরের সেই একই ডিসির (মাহমুদুল আলম) বিরুদ্ধে অতি সম্প্রতি আবারও অভিযোগ তুলেছেন এক মুক্তিযোদ্ধা কন্যা এবং তার মা। হঠাৎ করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ভিডিও বার্তায় স্কুল শিক্ষিকা এই মুক্তিযোদ্ধা কন্যা অভিযোগ করেন যে, ডিসি মাহমুদুল আলম তাকে রাতে ম্যাসেঞ্জারে কল দিতেন এবং আপত্তিকর কথা বলতেন, বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে একই রকম বক্তব্য দেন ওই মুক্তিযোদ্ধা কন্যার মা, পরবর্তীতে এই ভিডিও প্রত্যাহার করা হলেও বিষয়টি বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ডিসির ভাষ্যমতে বিষয়টি সম্পূর্ণ অসত্য হলে ভিডিও বার্তার পরপরই তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি কেন এবং পরিবারটি একশ্রেণির দালালের চাপে রয়েছে বলে কেন বলা হচ্ছেÑ তার উত্তর খুঁজছে দিনাজপুরবাসী। সরকারের পক্ষে সব সরকারি সম্পদ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী তথা সব জনগণের রক্ষক একজন ডিসি বা জেলা প্রশাসক। এত দায়িত্বপূর্ণ পদের একজন কর্মকর্তা নৈতিকতা কোন পর্যায়ে নামতে পারে, সে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন জামালপুরের বিদায়ী ডিসি আহমেদ কবীর। নিজ অফিসের পাশে তিনি বিশ্রামকক্ষ স্থাপন করেন। সেই কক্ষে তারই অফিসের এক নারী অফিস সহকারীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় থাকা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ফলে সরকার ওই ডিসিকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করে।
সাম্প্রতিক সময়ে বহুল আলোচিত আরেকটি চরিত্র হলো ফেনী জেলার ফুলবাড়ী থানার প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন। ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত মাদ্রাসা প্রিন্সিপাল সিরাজ-উদ-দৌলা কর্তৃক নিগ্রহের শিকার হয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের সাহায্য কামনা করেন। ওসি মোয়াজ্জেম সাহায্যের বদলে মেয়েটির বক্তব্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন এবং তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন। এ ঘটনা সমগ্র দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেও এগিয়ে আসতে হয় ঢাকার ব্যারিস্টার সুমনকে। তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করলে ৮ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদন্ডে দন্ডিত হন ওসি মোয়াজ্জেম। উল্লেখ্য, ওই ন্যক্কারজনক ঘটনাকে কেন্দ্র করে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারে সম্মত না হওয়ায় মাদ্রাসা প্রিন্সিপাল সিরাজ-উদ-দৌলার দোসররা মাদ্রাসার ছাদে নুসরাতের শ্বরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। কয়েক দিনের মৃত্যু যন্ত্রণা শেষে ১০ এপ্রিল ২০১৯ নুসরাতের করুণ মৃত্যু ঘটে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে। এ হত্যা মামলায় ১৬ জনকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেন ফেনীর একটি আদালত।

দেশের সবচেয়ে চৌকস এবং সরকারের একান্ত আস্থাভাজন ওসিদের ভাগ্যে জোটে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ্ব (ডিএমপি) এলাকায় একটি পোস্টিং। অথচ এই ওসিদের নাকের ডগায় চলত ক্যাসিনো, অবৈধ বার এবং ম্যাসেজ পার্লার নামের পতিতালয় যা চলতি বছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ধরা পড়তে শুরু করে। যুবলীগের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ওমর ফারুক যে ৬০টি এলাকায় ক্যাসিনো চলার অভিযোগ উঠে, সেসব এলাকার থানার ওসিরা এতদিন বসে বসে ‘আঙ্গুল চুষছিলেন’ কিনা সেই প্রশ্ন তুলেছেন। তবে তার প্রশ্নের সূত্র ধরেই হোক আর অন্য কোনো কারণেই হোক দীর্ঘদিন ধরে একই থানায় কর্মরত ওসিসহ ১১ জন ওসিকে পুরনো কর্মস্থল ছেড়ে নতুন কর্মস্থলে চলে যেতে হয়।

এপ্রিল মাসে মৌলভীবাজারে ওসি (তদন্ত) এবং অপর একজন এসআইকে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী (১২ বছর) ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতারে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় দায়ী করা হয়। মে মাসেই পাবনার হাইওয়ে পুলিশের এক ওসির বিরুদ্ধে একটি পিকআপে থাকা ৩৫ হাজার ডিম নষ্ট করার অভিযোগ ওঠে। দুর্ঘটনাকবলিত পিকআপ সরানোর জন্য দাবিকৃত ২০ হাজার টাকা না দেওয়ায় ওই ডিম নষ্ট করা হয়। ১০ বছর ধরে যশোরের দুটি থানায় কর্তব্যরত ছিলেন একজন ওসি। তিনি বেনাপোল থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় জ্ঞাত আয়বহির্ভূত শ্বত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুষ্ট হন। তদুপরি শ্বহরের আইনশৃঙ্খলার ধারাবাহিক অবনতি, থানায় নারী নির্যাতন এবং কিশোরী অপহরণ মামলা গ্রহণ না করার প্রেক্ষাপটে তাকে স্ট্যান্ডরিলিজ করা হয় এই মে মাসেই।

জুন মাসে দেশ্ববাসী চমকে ও শিউরে উঠে প্রকাশ্য দিবালোকে বরগুনায় স্ত্রী মিন্নির সামনে তার স্বামী রিফাত শ্বরীফকে কুপিয়ে হত্যার দৃশ্য দেখে। ঘাতক নয়ন বন্ড পুলিশের সোর্স ছিল বলে সংবাদ প্রকাশিত হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে স্ত্রী মিন্নিকেই আসামি বানানোর চেষ্টা, মিন্নির স্বীকারোক্তি প্রদানের তথ্য প্রচার এবং মিন্নির জামিনের জন্য কোনো আইনজীবী না দাঁড়ানোর নেপথ্যে জেলার পুলিশ্ব প্রশাসনের প্রভাব ছিল বলে খবর পাওয়া যায়। একই জেলার (বরগুনা) আরেক থানার ওসিকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার প্রতি অসদাচরণ ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার পক্ষ অবলম্বন করায় স্ট্যান্ডরিলিজ করা হয় বছরের আগস্ট মাসে।

সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন থানার ওসিদের বিরুদ্ধে বেশ্ব কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠে খুলনার রেলওয়ে পুলিশের একজন ওসি ও তার অধীনস্থ এক এসআইর বিরুদ্ধে। বর্ণনা মতে, ওসি ও তার সহযোগী রেলওয়ে স্টেশ্বনের পুলিশ্ব ফাঁড়িতে ট্রেনযাত্রী এক নারীকে ধর্ষণ করে। পরে ওই ওসিকে ক্লোজ করা হয়। একই মাসে বরিশালে এক নারীর মুখে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া ও নারী নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে এক থানার ওসিকে ক্লোজ করা হয়। রাজধানী ঢাকার এক ওসির বিরুদ্ধে সেপ্টেম্বরে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়া ও পরে তা অস্বীকার করার অভিযোগ ওঠে। ৫ সেপ্টেম্বর গণধর্ষণের শিকার এক নারীর তালাক এবং পরদিন ৬ সেপ্টেম্বর এক ধর্ষকের সঙ্গে তিন সন্তানের জননী নারীর বিয়ের আয়োজন করে গণমাধ্যমের শিরোনাম হন পাবনার একজন ওসি। নভেম্বরে সুনামগঞ্জ জেলার এক ওসির বিরুদ্ধে দুদকে নালিশ্ব করেন একজন ব্যবসায়ী। কোটিপতি ওই ওসি ২০০ ড্রেজারের মালিক বলে অভিযোগ রয়েছে। বছরের শেষে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মতে দেখা যায় রাজশাহী পুঠিয়া থানার সাবেক ওসি ও অন্য সহযোগীরা শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার প্রাথমিক প্রতিবেদন (এফআইআর) প্রদানে পক্ষপাতিত্ব বা অনাকাক্সিক্ষত হস্তক্ষেপ করেছেন, যা তদন্ত ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশ্বনে প্রেরণ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশ্বনের তথ্য মতে, বাংলাদেশে  ৪৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা ৪৫ জন ভিসির এক-তৃতীয়াংশ্বই বছরজুড়ে নেতিবাচক সংবাদের জন্ম দিয়েছেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম এবং তার নিকটাত্মীয়রা। তার বিরুদ্ধে ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও ছাত্রলীগ নেতাদের নগদ অর্থ প্রদানের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার রেশ্ব ধরে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা পদত্যাগে বাধ্য হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা না দিয়েই ভর্তি ও ডাকসু নেতা নির্বাচিত হওয়ায় সমালোচিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে ১৪টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তোলেন গোপালগঞ্জে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন। বর্তমানে তার বিষয়টি দুদকের তদন্তাধীন রয়েছে। বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যার আগে ও পরে প্রতিষ্ঠানটির ভিসির কার্যক্রম ও বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে তাকে অযোগ্য বলে বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। তার বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন সবেমাত্র শেষ হয়েছে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশ্বন বা ইউজিসি (ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কমিশ্বন)। অনুরূপভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসিকে নিয়ম ভেঙে ১৯ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার প্রেক্ষাপটে। হাজী মোহাম্মদ দানেশ্ব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এবং অন্যান্য অনিয়মের কারণে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। নিয়োগ ও পদোন্নতিতে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির কারণে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধেও তদন্ত করছে ইউজিসি। নিয়োগের সময় জাল সনদ দেওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তের সম্মুখীন হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি ইত্যাদি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অশ্লীল মন্তব্য মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। ১৪২ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম করার অভিযোগের তীর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসির দিকে। নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে। প্রায় একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী ভিসির বিরুদ্ধে। অফিস করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে দায়িত্বে অবহেলা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন তারই শিক্ষার্থীরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তার পদ ছেড়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ্ব করে দৈন্যের পরিচয় দিয়েছেন। হতাশার মাঝেও আশার বিষয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে শুরু হয়েছে। শুদ্ধাচার ও শুদ্ধি অভিযান। ২০১৭ সালে ১৩২ এবং ২০১৮ সালে ১৮২ জন পুলিশ্ব কর্মকর্তা দৃষ্টান্তমূলক সততা ও অনুকরণীয় কাজের জন্য প্রেসিডেন্ট পুলিশ্ব (পিপিএম) এবং বাংলাদেশ্ব পুলিশ্ব পদক লাভ করলেও ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪৯-এ। নুসরাত হত্যা মামলার সব আসামিকে দ্রুততম সময়ে আটক করে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে পুলিশ্ব ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশ্বন (পিবিআই) এবং এই সংস্থার প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার। ৩০ বছর পুরনো অর্থনীতিবিদ সগিরা মোর্শেদ সালাম হত্যাকান্ডের সব রহস্য উন্মোচন করেও পিবিআই প্রশংসিত হয়েছে। অতি সম্প্রতি এক পুলিশ্ব কর্মকর্তার কর্তব্যে গাফিলতির বিষয়টিও আদালতের নির্দেশে পিআইবি তদন্ত করছে। একজন ওসি থানার চত্বরের সামনে বসে ভুক্তভোগীদের কথা শোনেন। এতে পুলিশের প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থা অনেক গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও সততা প্রদর্শ্বন করে চাকরিপ্রত্যাশী সফল এবং অসফল সবার প্রশংসা ও ফুলেল শুভেচ্ছা লাভ করেছেন বেশ্ব কজন পুলিশ্ব কর্মকর্তা। বর্তমান পুলিশ্ব প্রধান এবং ডিএমপি প্রধান সত্য ভাষণ উচ্চারণ এবং সব পুলিশ্ব সদস্যকে সতর্ক করে প্রমাণ করেছেন, পুলিশের ওপর ভরসা করার দিন হয়তো বেশি দূরে নয়। জনপ্রশাসনের সম্ভাবনার আলোকবর্তিকা জ্বেলেছেন অনেকেই। তাদেরই একজন ফরিদপুরের সদ্য বিদায়ী ডিসি উম্মে সালমা তানজিয়া। তিন বছরের দায়িত্ব পালনকালে তিনি পাল্টে দিয়েছেন ফরিদপুরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর চেহারা। প্রশাসনে ডিজিটাল সেবার মাইলফলকও স্থাপন করেছেন সমগ্র জেলায়। তাই বিদায়কালে ফুলে ফুলে ভরে উঠেছিল অফিস ও বাসস্থান, আর দলমত নির্বিশেষে সবাই ছিল অশ্রুসিক্ত। কেঁদেছেন ডিসি নিজেও। সাধারণ মানুষকে ভালোবাসলেই একজন প্রশাসক এভাবে কাঁদতে পারেন। এসিল্যান্ড হিসেবে দুর্নীতিমুক্ত ভূমি ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে জনগণের হৃদয় জয় করেছেন, এমন এসিল্যান্ডের সংখ্যাও কম নয়।

ভিসি বা উপাচার্য বলতেই মানসপটে ভেসে ওঠে জ্ঞানতাপস, শান্ত, সৌম্য এক বিচক্ষণ ও বিজ্ঞ ব্যক্তির অবয়ব। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ্ব ভিসি এবং শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। বরং তারা পরশ্ব পাথরের মতো জ্ঞান আর স্নেহ দিয়ে পাল্টে দিয়েছেন অনেক ছাত্রছাত্রীর জীবন।

২০২০ সাল সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শ্বততম জন্মদিন পালনের বছর। ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে শুধু ৬৪ জেলার ৬৪ জন জেলা প্রশাসক (ডিসি) আর ৪৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫ জন উপাচার্য; মোট ১০৯ জন মানুষের বিরুদ্ধে যদি চলতি বছরে কোনো অভিযোগ না ওঠে, তবে সোনার বাংলা গড়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ্ব। ১০৯ জন মানুষের কাছে এটা কি খুব বেশি কিছু চাওয়া? তালিকাটি যদি আরেকটু দীর্ঘ করা যায়; ধরা যাক ১ হাজার পর্যন্ত; যেখানে ডিসি আর ভিসির বাইরে ৫০০ ওসি, সব মন্ত্রী, সচিব, বিচারক, আর দুদক কর্মকর্তারা থাকবেন। এই এক হাজার মানুষ যদি বঙ্গবন্ধুর সম্মানে অন্তত ২০২০ সালে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে দেশের জন্য সৎপথে থাকেন এবং সৎ কাজ করেন, তবে ‘সোনার বাংলা’ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব হয়ে উঠবে।

লেখক : মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি, গবেষক।

ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত - dainik shiksha ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল - dainik shiksha শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল - dainik shiksha ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042409896850586