কিশোর ‘গ্যাং’ আতঙ্কে শামীমাবাদ - দৈনিকশিক্ষা

কিশোর ‘গ্যাং’ আতঙ্কে শামীমাবাদ

সিলেট প্রতিনিধি |

এক সময় সিলেটের শামীমাবাদ এলাকা ছিল ছাত্রলীগের এক উপ-গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। সিনেমা হলের ঠিক উল্টো দিকের গ্যারেজকে ব্যবহার করা হতো ‘টর্চার সেল’ হিসেবে। সে সময় নানা আলোচিত ঘটনার কেন্দ্র ছিল শামীমাবাদ। সব সময় তটস্থ থাকতেন এলাকার মানুষ।

অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রক্তারক্তি ও খুনের ঘটনা ছিল নৈমিত্তিক। এখন শামীমাবাদে নেই ছাত্রলীগের ওই গ্রুপ। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় ওই গ্রুপ শক্তিহীন হয়ে পড়েছে। নিয়ন্ত্রকরাও যে যার মতো আড়ালে চলে গেছেন।

এরপর থেকে শামীমাবাদ অনেকটা শান্ত ছিল। সম্প্রতি সময়ে ‘কিশোর গ্যাং’- নিয়ে ফের আলোচনায় শামীমাবাদ। কলোনি কেন্দ্রিক নিম্ন ও নিম্ন মধ্য ভিত্তি পরিবারের সন্তানরা জড়িয়ে পড়ছে ওই গ্যাংয়ে। তারা মাদক ও নানা অপরাধে জড়িত। সম্প্রতি দুটি ঘটনা ঘটেছে শামীমাবাদে। পুলিশ স্থানীয়দের তৎপরতায় কিশোর গ্যাংয়ের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।

শামীমাবাদ হচ্ছে সিলেট নগরীর ওসমানী মেডিকেল এলাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা। প্রবাসীদের বসবাস এলাকায় বেশি। গত এক দশকে শামীমাবাদ আধুনিক শহরে পরিণত হয়েছে। রয়েছে শতাধিক কলোনিও। এসব কলোনিতে বসবাস করে নিম্ন ও নিম্নবিত্ত এলাকার মানুষ। তাদের কিশোর সন্তানরা বখাটে হয়ে উঠেছে। এলাকার খালের পাড়ে খালি জায়গার মাঠে ওই গ্যাংয়ের আড্ডাস্থল। দিন নেই, রাত নেই সব সময় ওখানে তাদের আড্ডা জমে।

মাদক সেবনের নিরাপদ জায়গাও ওই মাঠ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই এলাকায় ঘটে গেছে দুটি ঘটনা। উভয় ঘটনায় জড়িত কিশোর গ্যাংস্টাররা। যাদের বয়স ১৪ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। চুলের উদ্ভট কাটিং, ছেঁড়া প্যান্ট, কানে দুল, বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে রাস্তায় বাইক চালানো এসবই এখন বখাটেদের হালের ফ্যাশন।

গত ২৯শে অক্টোবর রাতে নগরীর কানিশাইল এলাকার খেলার মাঠে ডেকে নিয়ে মুরাদ আহমদ নাবিল নামের এক কলেজ ছাত্রকে পিঠিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে রেখে যায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এর ঠিক এক সপ্তাহ পর মঙ্গলবার দুপুরে শামীমাবাদ এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নগরীতে আরেক কিশোরকে পিটিয়ে আহত করেছে একদল বখাটে। আহত কিশোরের নাম মো. মুন্না মিয়া।

সে নগরীর শামীমাবাদ এলাকার জগলু মিয়ার ছেলে। মুন্না মিয়ার গ্রামের বাড়ি বালাগঞ্জ উপজেলার রাজাপুর গ্রামে। তাৎক্ষণিক এ ঘটনায় জড়িত তিন বখাটেকে আটক করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। আটককৃতরা হলো- শামীমাবাদের কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার সালেহ আহমদপুর গ্রামের ও বর্তমানে কানিশাইল ১ নম্বর রোডের সাদেক মিয়ার কলোনির বাসিন্দা মৃত আব্দুল হেকিমের ছেলে মো. সোহেল আহমদ (১৪), নেত্রকোনার মদন উপজেলা বাবজান গ্রামের ও বর্তমানে নগরীর শিবগঞ্জ মজুমদারপাড়া মো. অলিউর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ ইমরান আহমদ সুমন (১৪) ও জৈন্তাপুর উপজেলার পানিছড়া গ্রামের ও বর্তমানে কানিশাইলের মন্নান মিয়ার ছেলে মো. শাহেদ মিয়া (১৫)।

পুলিশ জানায়- মঙ্গলবার দুপুরে শামীমাবাদ এলাকার বাসিন্দা মুন্না মিয়া রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাসায় যাবার সময় তার গতিরোধ করে এলাকার চিহ্নিত বখাটে ও মাদকাসক্ত কিশোর সোহেল, সুমন ও শাহেদসহ কয়েকজন। এ সময় তারা ছোরা দেখিয়ে মুন্নাকে তার মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা বের করে দিতে বলে।

মুন্না মোবাইল ও টাকা পয়সা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বখাটেরা ইট দিয়ে মুন্নার মাথায় আঘাত করে। এরপর লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে মুন্নাকে আহত করে। এসময় মুন্নার সাথে থাকা মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয় তারা। বর্তমানে হাসপাতালের ৩ তলার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন মুন্না মিয়া।

স্থানীয়রা বিষয়টি কোতোয়ালি থানার ওসি সেলিম মিঞাকে জানান। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মো. সোহেল আহমদ, মোহাম্মদ ইমরান আহমদ সুমন ও মো. শাহেদ মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।

এ ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতে মো. মুন্না মিয়ার বড় ভাই গৌছ মিয়া বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো ২-৩ জনকে অজ্ঞাত রেখে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। শামীমাবাদ এলাকার লোকজন জানান, সোহেল, সুমন ও শাহেদসহ আরো কয়েকজন কিশোর এলাকায় চিহ্নিত বখাটে হিসেবে পরিচিত। এরা প্রকাশ্যে ধূমপান ও মাদকসেবন করে।

এছাড়া এলাকায় চুরি, ছিনতাই, জুয়া খেলাসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথেও এরা জড়িত। স্কুল ও কলেজগামী মেয়েদের নিয়মিত উত্যক্ত করে এই বখাটেরা। তাদের আটকে এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে জানান স্থানীয়রা। সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি সেলিম মিঞা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- লোকজনের সহায়তায় কিশোর অপরাধীদের আটক করা হয়েছে।

এলাকার কিশোর গ্যাংদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এলাকার লোকজন জানান- প্রায় দেড় মাস আগে ওই কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রক ইমন ও আলম এবং তাদের আরো ৪ সহযোগীকে কুয়ারপাড় থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। প্রায় এক মাস কারাবাসের পর কিশোরগ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রক কুয়ারপাড়ের আলম কারাগার থেকে বের হয়।

সে বেরিয়ে আসার পর আবার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কুয়ারপাড়ে পুলিশি অভিযানের ওই গ্যাংয়ের সদস্যরা গিয়ে ভিড় জমাতো শামীমাবাদে।

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054891109466553