২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিভিন্ন শাখার মত বিশ্ববিদ্যালয়টির চিকিত্সা ব্যবস্থায় রয়েছে ঢের সীমাবদ্ধতা। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের জন্য জনপ্রতি ওষুধের বাত্সরিক বরাদ্দ মাত্র ১৭.১৫ টাকা।
মেডিক্যাল সেন্টার যেন এককক্ষবিশিষ্ট হাসপাতাল
সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, নানা অপূর্ণতার কারণে মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিত্সা সেবা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। প্রশাসনিক ভবনের নিচতলার বড় একটি কক্ষে মেডিক্যাল সেন্টার। সেন্টারে ঢুকতেই দরজার পাশে দেয়ালে সাঁটা কাগজে লেখা: ‘ওজন মাপার মেশিন নষ্ট’— দেখেই অনুধাবন হয় নাজুক অবস্থার স্পষ্ট ছাপ। কাঁচের দেয়াল দিয়ে সাতটি ছোট ছোট কোঠায় ভাগ করা সেন্টারটি। কোঠাগুলোয় একটি টেবিল ও দুই/তিনটি চেয়ারের স্থান সংকুলান হয় না। পাঁচজন ডাক্তার (দুইজন শিক্ষা ছুটিতে), একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, একজন সিনিয়র নার্স ও একজন অফিস সহকারী নিয়ে চলমান চিকিত্সালয়টির প্রয়োজনীয় বস্তুর অভাব খুবই স্পষ্ট। ভিজিটিং চেয়ার না থাকায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের। একই সাথে একাধিক জরুরি রোগী আসলে একটি বেড থাকায় জরুরি চিকিত্সায় হিমসিম খেতে হয়। এছাড়া বিদুত্ বিভ্রাট হলে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার কারণে চিকিত্সা সেবা প্রদান ব্যাহত হয়।
দরকার পর্যাপ্ত ওষুধ ও অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্স, মিনি অপারেশন থিয়েটার
অর্থ ও হিসাব দপ্তরের প্রধান কামালউদ্দিন ভুঁইয়া জানান, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে মেডিক্যাল সেন্টারের ওষুধের জন্য বরাদ্দ এক লাখ টাকা। ৫৩৯৫ জন শিক্ষার্থী, ১৮৪ জন শিক্ষক, ১৮৫ জন কর্মচারী ও ৬৬ জন কর্মকর্তার এ পরিবারের প্রতিজনের জন্য ওষুধের বাত্সরিক বরাদ্দ মাত্র ১৭.১৫ টাকা। বর্তমানে প্রায় ১৯ প্রকার ওষুধ সরবরাহ করা হয় যা নিতান্তই অপ্রতুল। নৃবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আরিফ আফতাব বলেন, নাপা আর স্যালাইন দেওয়া হয় বেশি করে। অনেক সময় অফিস চলাকালে ডাক্তার থাকেন না বলেও জানান কয়েকজন শিক্ষার্থী। মাইক্রোবাস থেকে রূপান্তর করা একটিমাত্র অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। জরুরি রোগীদের জন্য অন্তত পাঁচটি শয্যা ও চিকিত্সার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসম্বলিত সংরক্ষিত কক্ষে একটি মিনি অপারেশন থিয়েটার প্রয়োজন। অত্যাধুনিক মিনি অপারেশন থিয়েটার হলে চিকিত্সার জন্য আর বাইরের হাসপাতালে যেতে হবে না শিক্ষার্থীদের।
আবাসিক ডাক্তার, সাইকোলজিস্ট ও স্বতন্ত্র মেডিক্যাল সেন্টার ভবন জরুরি
আবাসিক ডাক্তার না থাকায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় ও রাতে চিকিত্সাসেবা পাওয়া যায় না। রাতে হঠাত্ অসুস্থ হয়ে পড়লে দুর্ভোগে পড়েন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিংয়ের জন্য দরকার সাইকোলজিস্ট। স্বতন্ত্র মেডিক্যাল সেন্টার ভবনের জন্য শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোঃ আবু তাহের বলেন, ২৪ ঘণ্টা চিকিত্সা সেবা দিতে আবাসিক ডাক্তার দরকার। পাঁচ শয্যার হলেও আবাসিক চিকিত্সালয় দরকার। মেডিক্যাল সেন্টারের প্রধান ডা. মাহমুদুল হাসান খান বলেন, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। চিকিত্সা সেবা উন্নত করতে হলে আবাসিক ডাক্তার নিয়োগ দিতে হবে, ভালো ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দিতে হবে এবং সেইসাথে বাড়াতে হবে অ্যাম্বুলেন্স ও ওষুধের বরাদ্দ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোঃ মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, আগের তুলনায় মেডিক্যাল সেন্টার উন্নত করা হয়েছে।