কে এই যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ? - দৈনিকশিক্ষা

কে এই যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ?

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্রসহ আটক করেছে র‌্যাব। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরে ৫৯ নম্বর সড়কের বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়।

রাজধানীর ৬০টি স্পটে এমন অবৈধ ক্যাসিনো (জুয়ার আসর) ব্যবসা চলছে। কেন্দ্রীয় ও মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগের একশ্রেণির নেতা এ ব্যবসায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

গণমাধ্যমের খবর, ইতিমধ্যেই জুয়ার আড্ডাগুলো সম্পর্কে সম্প্রতি প্রমাণসহ গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেয়া হয়েছে। এতে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: 

অস্ত্রসহ যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ গ্রেফতার

যুবলীগ নেতার ক্যাসিনোতে র‌্যাবের অভিযান, গ্রেফতার ১৪২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, সম্প্রতি কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন- আমার কাছে আরও তথ্য আছে রাজধানীর সব সুউচ্চ ভবনের ছাদ দখল নিয়েছে যুবলীগের নেতারা। সেখানে ক্যাসিনো খোলা হয়েছে। যুবলীগের সবার আমলনামা আমার হাতে এসেছে। আমি সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলে দিয়েছি।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় যুবলীগ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী বলেন- যুবলীগের ঢাকা মহানগরের একজন নেতা (ঢাকা মহানগর যুবলীগের একটি অংশের সভাপতি) ক্রসফায়ার থেকে বেঁচে গেছেন। আরেকজন এখন দিনের বেলায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চলেন। সদলবলে অস্ত্র নিয়ে ঘোরেন। এসব বন্ধ করতে হবে। যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, তখন কেউ অস্ত্র নিয়ে বের হয়নি, অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিবাদ করেনি। যখন দলের দুঃসময় ছিল, তখন কেউ অস্ত্র নিয়ে দলের পক্ষে অবস্থান নেয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, টানা তিন বার সরকারে আছি। অনেকের অনেক কিছু হয়েছে। কিন্তু আমার সেই দুর্দিনের কর্মীদের অবস্থা একই আছে। যারা অস্ত্রবাজি করেন, যারা ক্যাডার পোষেণ, তারা সাবধান হয়ে যান- এসব বন্ধ করুন। তা না হলে যেভাবে জঙ্গি দমন করা হয়েছে, একইভাবে তাদেরকেও দমন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর এমন কঠোর অবস্থানের পরই বুধবার র‌্যাব রাজধানীর ফকিরাপুলে ইয়ংমেনস ক্লাব নামে একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায়। সেখানে নারীসহ ১৪২ জনকে আটক করা হয়। ক্লাবের ভেতর থেকে নগদ ২৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। অন্যদিকে একই সময়ে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিতর্কিত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে ধরতে তার গুলশানের ওই বাড়িতে ঘেরাও করে র‌্যাব। পরে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তাকে অস্ত্রসহ আটক করতে সক্ষম হয় র‌্যাব।

খালেদ ভূঁইয়া বেড়ে উঠেছেন রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে। তিনি রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরেরপুল এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি ক্লাব নিজের লোকজন দিয়ে আর ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবটি তিনি সরাসরি পরিচালনা করেন। এসব ক্লাবে প্রতিদিন ১০টা থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত চলে জুয়ার আসর। একই সঙ্গে চলে মাদক ব্যবসা।

ইয়ংমেনস ক্লাব থেকে ১৪২ জনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, আমরা ক্লাবটিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়েছি। ক্লাবের ভেতর থেকে নগদ ২৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আটকদের ৬ মাস থেকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ক্যাসিনোর আড়ালে ক্লাবটিতে মাদক ব্যবসা চলত বলে জানান ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, খিলগাঁও-শাহজাহানপুর হয়ে চলাচলকারী লেগুনা ও গণপরিবহন থেকেও নিয়মিত টাকা দিতে হয় খালেদকে। প্রতি কোরবানির ঈদে শাহজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া ও কমলাপুর পশুরহাট নিয়ন্ত্রণ করেন এই খালেদ।

এ ছাড়াও খিলগাঁও রেল ক্রসিংয়ে প্রতিদিন রাতে মাছের হাট বসান এই বির্তকিত নেতা। একইভাবে খিলগাঁও কাঁচাবাজার সভাপতির পদটিও দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছেন তিনি। এ ছাড়া শাহজাহানপুরে রেলওয়ের জমি দখল করে দোকান ও ক্লাব নির্মাণ করেছেন খালেদ।

২০০২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল শাহরিয়ার রানা (কানাডা প্রবাসী) গতরাতে সাংবাদিকদের বলেন, “এই খালেদ মাহমুদকে আমরা বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় চিনতাম যুবদলের ক্যাডার হিসেবে। কোনো পদপদবি না থাকলেও খালেদ সব সময় যুবদলের নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকত।

“আমি মতিঝিল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায়ই কানাডা চলে আসি। কিন্তু ২০১৩ সালে এই  যুবলীগের কমিটি দেওয়ার পর দেখি সন্ত্রাসী খালেদ যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন।”

এরপরে দেশে ফিরলে খালেদ নানাভাবে তার ও তার পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বলে অভিযোগ করেন শাহরিয়ার রানা।

তিনি বলেন, “খালেদের মাধ্যমে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করে সন্ত্রাসী, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সহযোগী ও ফ্রিডম পার্টির ক্যাডার ও যুবদলের নেতাকে টাকার বিনিময়ে যুবলীগের পদ দেওয়া হয়েছে।”

স্থানীয় কয়েকজন ও যুবলীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতাও খালেদের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যুবলীগে সক্রিয় হওয়ার কথা জানান।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, মতিঝিল এলাকার এক সময়ের সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিতি ফ্রিডম পার্টির মানিক-মুরাদের সহযোগী ছিলেন খালেদ। এলাকায় আধিপত্য নিয়ে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠা মানিক-মুরাদ চারদলীয় জোট সরকার আমলে ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীদের’ তালিকায় চলে আসেন। এরপরেও গা ঢাকা দেন তারা।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মানিক-মুরাদের প্রভাবাধীন এলাকা নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। মতিঝিল, কমলাপুর, শাহজাহানপুর, বাসাবো, খিলগাঁওসহ আশপাশের এলাকায় প্রভাব তৈরি হয়েছিল তার।

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032370090484619