খুড়িয়ে চলছে খুলনা মেডিকেল কলেজ - Dainikshiksha

শিক্ষক সংকটখুড়িয়ে চলছে খুলনা মেডিকেল কলেজ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

২৬ বছর আগে ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল খুলনা মেডিকেল কলেজ। এরপর শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন গুণের বেশি বাড়ানো হলেও শিক্ষকের নতুন কোনো পদ বাড়ানো তো দূরের কথা, বর্তমানে থাকা শিক্ষক পদের প্রায় অর্ধেকই শূন্য। ফলে খুলনা মেডিকেল কলেজে খুড়িয়ে  চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।

কলেজের শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিজ্ঞ শিক্ষক না থাকার কারণে খুলনা মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা মানসম্পন্ন শিক্ষা পাচ্ছেন না। শিক্ষক সংকটের কারণে ব্যবহারিক, টিউটোরিয়াল ক্লাস ও পরীক্ষা সময়মতো হচ্ছে না। কলেজের ১৯টি বিষয়ে কোনো অধ্যাপক এবং ১৬টি বিভাগে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক নেই। নয়টি বিষয়ে মাত্র একজন করে শিক্ষক আছেন।

ফিজিক্যাল মেডিসিন, পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি, রক্ত পরিসঞ্চালন এবং হেপাটোলজি বিষয়ে একজন করে শিক্ষকও নেই। এসব বিষয়ের জন্য কলেজ থেকে অবসরে যাওয়া শিক্ষকেরা মাঝেমধ্যে এসে পড়াচ্ছেন।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে ৫০ জন শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ থাকলেও বর্তমানে প্রতিবছর ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬০। বর্তমানে কলেজে ছয়টি ব্যাচে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৬১।

কলেজে মৌলিক বিষয়গুলো হলো অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ফার্মাকোলজি, কমিউনিটি মেডিসিন ও ফরেনসিক মেডিসিন। এসব বিভাগে শিক্ষকের অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৫৮। শিক্ষক আছেন ৩৮ জন। শূন্যপদ ২০টি। এই আট বিভাগে অধ্যাপকের পদ আছে আটটি। সব কটি বিভাগেই এই পদ শূন্য রয়েছে। আট বিভাগে সহযোগী অধ্যাপকের নয়টি পদের ছয়টিই শূন্য।

মৌলিক ও অন্য সব বিষয় মিলিয়ে মোট ৩২টি বিষয়ে এই কলেজে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকের যথাক্রমে ২৩, ৩৫, ৪৩ এবং ৩৬টি পদ আছে। এর মধ্যে অধ্যাপক আছেন মাত্র চারজন, সহযোগী অধ্যাপক আছেন ১৬ জন, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক আছেন যথাক্রমে ৩০ ও ২৬ জন।

কলেজটিতে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের ১৯টি করে পদ শূন্য। সহকারী অধ্যাপকের ১৩টি এবং প্রভাষকের ৫টি করে পদ শূন্য রয়েছে।

কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবদুল আহাদ বলেন, ‘অ্যানাটমি বিষয়ের মাধ্যমে একজন মেডিকেল শিক্ষার্থীর হাতেখড়ি হয়। কিন্তু কলেজে এ বিষয়ে কোনো অধ্যাপক নেই। মৌলিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের কোনো বিষয়েই অধ্যাপক নেই। ফরেনসিক বিষয়ে একজন সহকারী অধ্যাপক আছেন, তিনি মাসখানেক পর অবসরে যাবেন। এখন থেকেই আমাদের দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে গেছে। অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষক সংকট তীব্র।’

কলেজের অন্তত সাতজন শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষকসংকটের কারণে তাঁদের নিয়মিত ক্লাস হয় না। ব্যবহারিক ও টিউটোরিয়ালে তাঁরা বড় সমস্যায় পড়ছেন। অনেক বড় বড় গ্রুপে টিউটোরিয়াল হচ্ছে। মাঝেমধ্যে দুই ব্যাচের ক্লাস একসঙ্গেও হচ্ছে। এতে শেখাটা ঠিকমতো হচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের একজন প্রভাষক বলেন, দেশে একের পর এক মেডিকেল কলেজ হচ্ছে, কিন্তু পরিকল্পিতভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। মৌলিক বিষয়ের শিক্ষকসংকট থাকায় শিক্ষকেরা বিভিন্ন কলেজে ভাগ হয়ে যাচ্ছেন। একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী কলেজে ঢুকেই যদি দেখে ক্লাস হচ্ছে না, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নেই, তখন তাঁর আগ্রহ অনেক কমে যায়। আর মৌলিক বিষয়ে দুর্বল হওয়ায় অন্য বিষয়গুলোও শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারেন না।

খুলনা মেডিকেল কলেজে তৃতীয় বর্ষে কমিউনিটি মেডিসিন পড়ান সহকারী অধ্যাপক জোহা মোহাম্মদ মেহেরওয়ার হোসেন। তাঁর বিভাগে কোনো অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক বা কোনো সহকারী অধ্যাপক নেই। তিনি বলেন, কমিউনিটি মেডিসিন বা জনস্বাস্থ্য হাল আমলে সারা বিশ্বে জনপ্রিয় বিষয়। কিন্তু একজন শিক্ষককে যখন একসঙ্গে ১৩৫ বা তার বেশি জনের ক্লাস নিতে হয়, তিনি ছাত্রদের প্রতি মনোযোগ দিতে পারেন না। টিউটোরিয়ালে একজন শিক্ষকের বিপরীতে ছাত্র ৫০ জন। টিউটোরিয়ালে ছাত্রসংখ্যা ১০ জনের বেশি হওয়া উচিত নয়। সেখানে ২০-২৫ জন পর্যন্ত বিবেচনা করা সম্ভব। এরপরে একজনও বেশি হলে মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, কলেজ শুরুর পর থেকে তিন গুণের বেশি শিক্ষার্থী বেড়েছে। কিন্তু অর্গানোগ্রাম আগের মতোই আছে। সেটাও পূর্ণ থাকলে সংকট এতটা প্রকট হতো না। শিক্ষকসংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কেউ কলেজ পরিদর্শনে এলেও সমস্যার কথা জানানো হয়। কিন্তু লাভ খুব একটা হয় না। বাস্তবতা মেনেই কাজ করতে হচ্ছে।

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0077111721038818