স্কুলের বাইরে গাছ আকৃতির একটা অবকাঠামো, ডালে পাতার বদলে আছে বিভিন্ন বর্ণ। এক শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের নিয়ে জড়ো হয়েছেন গাছের সামনে। নির্দেশিকা কাঠি যে কোন একটি বর্ণের উপর রেখে শিক্ষক বর্ণের নামটি শিক্ষার্থীদের নিকট জানতে চাইছেন, আর শিক্ষার্থীরা হাত উঁচু করে তাদের উত্তরটি জানা আছে সেটি প্রকাশ করছেন। শিক্ষক হাত উঁচু করে তুলে ধরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে একজনকে বর্ণটি কী জিজ্ঞেস করলে সে উত্তর দিচ্ছে।
এভাবে কিছুক্ষণ চলার পর এবার শিক্ষক বললেন, কে কে নিচ থেকে উপর পর্যন্ত গাছের প্রতিটি পাতায় লিখিত বাংলা বর্ণগুলো পড়তে পারবে? সকল শিক্ষার্থী একসাথে হাত তুলে তাদের সামর্থ্য জানান দিলো। শিক্ষক তাদের মধ্যে থেকে একজন শিক্ষার্থীকে বলতে বললো, সে সাথে সাথেই নির্দেশিকা কাঠি দিয়ে একে একে সবগুলো বর্ণ পড়ে শোনালো, সাথে সাথে অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও সমস্বরে বর্ণগুলো বলতে লাগলো।
এ দৃশ্য কুড়িগ্রাম সদরের সেনেরখামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় প্রথম শ্রেণির সহকারি শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা তার শিক্ষার্থীদের ক্লাসের বাহিরে বর্ণগাছের কাছে নিয়ে গিয়ে শেখানো বর্ণ তারা চিনতে পারছে কিনা তা মূল্যায়ন করছেন।
কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এভাবে খেলার ছলে বর্ণমালা শিখছে। এ পদ্ধতিতে ইতোমধ্যে ২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাদের স্লিপ ফান্ডের মাধ্যমে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বর্ণের গাছ স্থাপন করা হয়েছে।
প্রারম্ভিক শ্রেণির শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষার্থীদের বর্ণজ্ঞান বৃদ্ধি করতে ক্লাসের বাইরে স্থাপিত বর্ণগাছের সহায়তায় বর্ণজ্ঞান চর্চা করাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা খেলার ছলে শুদ্ধ উচ্চারণে বর্ণ চর্চা করছে। এর ফলাফল হিসেবে দেখা যায় এসব বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিশু এলোমেলো বর্ণ চিনতে ও বলতে পারছে। এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে পার্শ্ববর্তী উলিপুর উপজেলায় ৭টি বিদ্যালয়ও তাদের বিদ্যালয়ে বর্ণগাছ স্থাপন করে শিশু ও প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বর্ণমালা চর্চা করাচ্ছে।
সুভারকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খন্দকার তানজিনা মমতাজ বলেন, শিশুরা খেলাধুলার পাশাপাশি পড়তে পারছে। বর্ণ চিনতে পারছে এবং সেটা মনে রাখতে পারছে। এটা বিশাল সফলতা।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নার্গিস ফাতেমা তোকদার জানান, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় প্রায় ২০টি বিদ্যালয়ে এই বর্ণগাছ স্থাপন করা হয়েছে। এটি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের বর্ণমালা চর্চা করা হচ্ছে, যার ফলে শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে বর্ণমালা চর্চা করছে এবং তাদের শিখনও স্থায়ী হচ্ছে।