পরিবেশ পরিস্থিতি যেমনই হোক বছর ঘুরে ঠিকই আবার বাংলা নববর্ষের আগমন। কে জানত আর সব বছরের মতো মঙ্গল শোভাযাত্রা দিয়ে শুরু হবে না এবারের নববর্ষ। রমনা জুড়ে থাকবে না সেই কোলাহল পূর্ণ রঙের মেলা। বাস্তবতা মেনে নিয়েই আমাদের পরিবার নিয়ে পহেলা বৈশাখ কাটাতে হবে বাড়িতে থেকে। নিজের এবং দেশের ভালোর জন্য এটুকু তো করাই যায়। তবুও পরিবারের ছোটদের ইচ্ছে হতেই পারে নববর্ষ উদযাপনের। চলুন জেনে নেই কীভাবে পরিবার নিয়ে ঘরে বসে উৎযাপন করবেন বাঙালির বড় উৎসব নববর্ষ।
ভোরের আকাশ দেখুন
নববর্ষের দিনটা শুরু করতে পারেন একদম ভোরে ঘুম থেকে উঠে। সুন্দর একটি সকাল আপনাকে সব ভুলিয়ে মন ভালো করে দিতে পারে। প্রার্থনা বা মেডিটেশন দিয়ে শুরু হতে পারে সকালটি। সুন্দর একটি দিন কাটাতে এসময় মানসিক সুস্থতা খুব জরুরি।
খাওয়া-দাওয়া
পহেলা বৈশাখ অথচ পান্তা ইলিশ হবে না তাই কী হয়? আসলে এ দিনটিতে যত টানা পান্তা ইলিশ খাওয়া তারচে বেশি আয়োজনটা মুখ্য হয়ে ওঠে। তাই বাড়িতে যদি আগে থেকে ইলিশ সংরক্ষণ করা না থাকে তবে বাইরে গিয়ে কিনতে হবে না। ঘরে থাকা যে কোনো মাছ দিয়ে এবার চালিয়ে নিন। প্রয়োজনে ঘরে থাকা খাবারগুলো দিয়ে কয়েক পদের ভর্তা তৈরি করে নিতে পারেন। পুরোপুরি না হলেও পরিবারকে নিয়ে পান্তা খাওয়ার আমেজটা ঠিক পেয়ে যাবেন।
রান্না খাদ্য পুষ্টি- অধ্যাপিকা সিদ্দিকা কবীর
কুকিং স্টুডিও- ইউটিউব চ্যানেল Cooking Studio by Umme-এর ১৭০টিরও বেশি রেসিপি- উম্মি সেলিম
ছোটখাট চড়ুই ভাতি
দিনটাকে বাচ্চাদেরসহ সবার জন্যে স্পেশাল করতে চাইলে সবাই মিলে একসাথে ঘরটা সাজিয়ে গুছিয়ে ফেলতে পারেন। ঘর গুছিয়ে কাগজ কেটে সুন্দর করে বৈশাখী থিমে সাজালেন। দুপুরের রান্নাটা পরিবারের সবাই একসাথে করা যেতে পারে। স্পেশাল কোনো ডিস তৈরি করা যায় সবাই মিলে। কেউ কাটাকুটি করবে, কেউ রান্না আর ছোটরা পরিবেশন করতে পারে। নিয়মিত কাজটাই সবাই মিলে করলে দেখবেন একটা চড়ুই ভাতির আমেজ আসবে।
বাঙালির উৎসবের রান্না- ফৌজিয়া ফারিহা (মুমু)
বাংলাদেশের আঞ্চলিক রান্না- রেহানা পারভিন রুমা, রুনা আরেফিন
সাজগোজ আর বেড়ানো
ঘরে বসে সেজে কী করবেন? কিন্তু বাচ্চারা নিশ্চয়ই প্রতি পহেলা বৈশাখে বাবা-মাকে পাঞ্জাবী আর শাড়ি পরে সাজতে দেখেছে। তারা নিজেরাও নতুন পোশাক পরে সেজেগুজে বেড়াতে গেছে? তবে এবার যখন তা হবে না নিশ্চয়ই মন খারাপ লাগবে। তাই নতুন পোশাক না হলেও আগের বছরের বৈশাখী পোশাক পরে সবাই মিলে সেজেগুজে তৈরি হয়ে নিন। বাড়ির ছাদে গিয়ে কিছুটা সময় কাটান। ছবি তুলুন, গল্প করুন, হই-হুল্লোর করুন অথবা সবাই মিলে ছোট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করতে পারেন।
সৌন্দর্য চর্চায় বিশেষ সাজ প্রয়োজনীয় টিপস- সাবিয়া রশীদ রোলা
সৌন্দর্য- সাবিয়া রশীদ রোলা
অনলাইন থেকে দূরে থাকুন
এ দিনটি টেলিভিশন, পত্রিকা ও সোস্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকুন। কারণ এরকম পরিস্থিতিতে নিউজ দেখে মানসিকভাবে সুস্থ থাকা খুব কঠিন। আপনার আমার মানসিক চাপ, মন খারাপের প্রভাব পরবে পরিবারের ওপর বিশেষ করে শিশুদের ওপর। তাই অন্তত এ দিনটি অনলাইন থেকে দূরে থেকে সবাই মিলে আনন্দে কাটান।
মন প্রকৌশল স্বপ্ন অনুপ্রেরণা আর জীবন গড়ার ফরমুলা- রাগিব হাসান
গুড প্যারেন্টিং : সন্তান প্রতিপালনে সফল হওয়ার উপায়- নেসার আতিক
সৃজনশীল কিছু করুন
পরিবারকে সাথে নিয়ে সৃজনশীলতা আসলে যে কোনো কাজের মধ্যেই নিয়ে আসতে পারেন। ঘর সাজাতে বাচ্চাদের বলতে পারেন কাগজ কেটে ফুল বানাতে, বৈশাখী ছবি আঁকা যেতে পারে। নিজেরাও বাসায় থাকা পত্রিকা আর কাগজ কেটে মুখোশ বা ঘুড়ি বানাতে পারেন। আরও ভালো হয় যদি নববর্ষ ১৪২৭ সামনে রেখে সবাই মিলে আগে থেকে একটি দেয়াল পত্রিকা তৈরি শুরু করতে পারেন। পরিবারের একেক জন একেকভাবে কবিতা, ছড়া, গল্প আর ছবি এঁকে পত্রিকা সাজাবে আর সে পত্রিকা প্রকাশ হবে নববর্ষের দিন। দেখবেন সবার মধ্যে এ নিয়ে বেশ উত্তেজনা কাজ করবে। আর উদযাপনও হবে বেশ।
রঙ রেখায় ছবি আঁকি (চিত্র শিল্পীর রচিত ছোটদের ছবি আঁকা শেখার বই)- হাশেম খান (চিত্রশিল্পী)
আঁকিবুকির কলাকৌশল- মেহেদী হক
সন্ধ্যা রাতে বই পড়া
সন্ধ্যার সময়টা বই পড়ে কাটাতে পারেন। এ সময়টা যে যার ইচ্ছেমতো বই পড়লেন। আবার সবাই মিলে ছোট বুক সেশনও করে ফেলতে পারেন। যে যার পড়া বই নিয়ে কিছু বলতে পারে। দেখবেন বই পড়া দিয়ে সময়টা খুব ভালো কেটে যাবে।
মোট কথা পহেলা বৈশাখের এই বিশেষ দিনটি এবার ঘরে একটু অন্যভাবে উদযাপন করুন এবং ভালো থাকুন। নববর্ষে আক্ষরিক অর্থেই প্রত্যাশা থাকলো –
মুছে যাক গ্লানি,ঘুচে যাক জরা
অগ্নি স্নানে সুচি হোক ধরা...
বাঙালি ঐতিহ্যের স্মারক পহেলা বৈশাখ-ড. আনু মাহমুদ
নববর্ষ ও বাংলার লোক-সংস্কৃতি- ড. আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ