চাকরিতে পিছিয়ে শিক্ষায় এগিয়ে নারী - Dainikshiksha

চাকরিতে পিছিয়ে শিক্ষায় এগিয়ে নারী

ইয়াসমিন পিউ |

দেশে চাকরিতে পিছিয়ে থাকলেও শিক্ষায় এগিয়ে রয়েছে নারী। শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা বাধা পেরিয়ে গেলেও তারা চাকরিতে বৈষম্যের শিকার। তবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেও এগিয়ে যাচ্ছে নারী। শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও শিক্ষায় প্রশংসা কুড়িয়েছে তারা। এছাড়া বাংলাদেশের নারীরা আজ দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন।   এমন পরিস্থিতিতে আজ ৮ মার্চ সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে—‘অধিকার মর্যাদায় নারী-পুরুষ সমানে সমান’। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

দেশে বর্তমানে নারী শিক্ষার্থীরা যে জায়গাগুলোতে এগিয়ে রয়েছে তার একটি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষায় মেয়ে শিশুর ভর্তি হার। সরকারি হিসেবে, বাংলাদেশের প্রাথমিক পর্যায়ে বর্তমানে ভর্তির হার শতকরা ৯১ ভাগ। মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে ৯৪ দশমিক ৭ শতাংশই ভর্তি হয়। আর ছেলে শিশুর ভর্তির হার ৮৭ দশমিক ৮ শতাংশ। গত কয়েক বছরের এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলেও দেখা গেছে, সব কয়টি শিক্ষাবোর্ডেই মেয়ে শিক্ষার্থীরা ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে অথবা সমান ফলাফল করছে।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সাক্ষরতার হার বেড়েছে, স্কুলে ভর্তির হার প্রায় শতভাগে উন্নীত হয়েছে, ঝরে পড়ার হার কমে গেছে। তবে উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারীরা পিছিয়ে থাকলেও তাদের অংশগ্রহণ ক্রমেই বাড়ছে। কারণ হিসেবে তারা বলেন, অভিভাবকদের সচেতনতা বেড়েছে, মেয়েরা প্রমাণ করেছে তাদের পেছনে বিনিয়োগ করলে তারা ভালো কিছু করতে পারে। তাছাড়া সরকারের একাধিক নারীবান্ধব নীতি ও তার বাস্তবায়নের কারণে নারী শিক্ষায় চাহিদা বেড়েছে।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের সব সরকারই শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। সেই সঙ্গে মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর জন্য নানা ধরনের উত্সাহব্যঞ্জক নীতি তারা গ্রহণ করেছে। মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা মেয়েদের শিক্ষার হার প্রায় শতভাগে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে।’

এদিকে শিক্ষায় এগুলেও চাকরি ক্ষেত্রে মেয়েরা পিছিয়ে পড়ছে। জানা গেছে, বর্তমানে সরকারি চাকরিতে কর্মরত আছেন মাত্র ২৪ শতাংশ নারী। তবে প্রাইমারি স্কুলের চাকরিতে এ হার ৬০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষা জীবন শেষ করে চাকরিতে প্রবেশের সময় নারীর অংশগ্রহণ অনেক কমে যাচ্ছে। নারীদের পিছিয়ে থাকার বড় কারণ সামাজিক নিরাপত্তার অভাব ও বাল্যবিবাহ।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তথ্যমতে, বিসিএস ক্যাডারের যত শিক্ষক রয়েছেন, তাদের শতকরা ৩০ ভাগ নারী। বেসরকারি স্কুল-কলেজে নারী শিক্ষক আরো কম। তবে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে শতকরা ৬০ ভাগ নারী শিক্ষক নেয়া বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক পর্যায়ে দেশে যত শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে তার ৫০ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী। মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রীর সংখ্যা ৫৩ শতাংশ ও কলেজ পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৭ শতাংশ নারী। দেখা যাচ্ছে, কলেজ পর্যন্ত নারী শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ বেশ ভালো। কিন্তু উচ্চশিক্ষা ও পেশাগত শিক্ষার ক্ষেত্রে গিয়ে নারীর সংখ্যা অনেক কমে যাচ্ছে। ব্যানবেইসের সর্বশেষ হিসাবে, চিকিত্সা, আইনসহ পেশাগত শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ এখন ৩৮ শতাংশ আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৩৩ শতাংশ। তবে পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর এসব স্তরেও নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘নারীরা শিক্ষা থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সব সেক্টরে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে নারীদের জন্যে আর কোটার প্রয়োজন পড়বে না। তিনি বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়েছে বলেই তারা চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেও অবদান রাখছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে নারী-পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।’

নারী দিবসের কর্মসূচি: মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আজ সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী দিবসের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। ৬৮টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি’র উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিকাল ৩টায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ‘আমরাই পারি’ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে ৮ মার্চ রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাতের আঁধার ভাঙার এক বিশেষ আয়োজন করেছে।

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064880847930908