‘চুরি’র অপবাদ নিয়ে দুই শিক্ষকের ১৩ বছর - Dainikshiksha

‘চুরি’র অপবাদ নিয়ে দুই শিক্ষকের ১৩ বছর

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি |

মালতী নকরেক (৬২) টাঙ্গাইলের মধুপুর বনের মিশনারি স্কুল কেজাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এই গারো নারীর বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি বন বিভাগ তিনটি মামলা করে। তাঁর বিরুদ্ধে ‘সংরক্ষিত বনে অবৈধ প্রবেশ, বনভূমি দখল, গাছ কাটা, মূল উৎপাটনের’ অভিযোগ আনা হয়।

মালতী আজ ১৩ বছর ধরে সেই মামলা আর কাঠ চুরির অপবাদ বয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁর অপরাধ ছিল, তিনিসহ বনবাসীরা এ বনকে পর্যটনকেন্দ্র বানানোর প্রকল্পের বিরোধিতা করেছিলেন।

মধুপুরে গারোদের অনেকেই মালতীর মতো সেই ইকোপার্কবিরোধী আন্দোলনের পর বন মামলার আসামি হন।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, বন বিভাগ সেই সময় এ বনের মধ্যে একাধিক স্থাপনা নির্মাণ করে এখানে ইকোপার্ক করতে চেয়েছিল। এতে প্রতিবাদ শুরু করেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। তাঁদের অভিযোগ ছিল এভাবে আসলে প্রাকৃতিক বনকে একটি পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত করে ফেলা হবে। তাঁদের জীবনযাপন বিঘ্নিত হবে। এর প্রতিবাদে স্থানীয় ব্যক্তিদের একটি মিছিলে ২০০৪ সালের ৩ জানুয়ারি গুলি চালান সশস্ত্র বনকর্মীরা। ঘটনাস্থলে নিহত হন পীরেন স্নাল। আহত হন উৎপল নকরেকসহ ৩০ জন।

মালতী যে স্কুলে চাকরি করেন সেটি মিশরারি স্কুল, তাই শুক্রবারে খোলা থাকে। তাঁর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বন মামলায় বলা হয়, ২৭ ফেব্রুয়ারি তিনি বনে গিয়ে কাঠ চুরি করেন। ওই দিনটি ছিল শুক্রবার।

মালতীর ভাষ্য, তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগের সময় তিনি স্কুলে উপস্থিত ছিলেন। স্কুলে হাজিরা খাতায় তাঁর উপস্থিতির প্রমাণ আছে। মালতীর কথা ‘এ বনের সন্তান আমি। সেই বনের গাছ চুরির অভিযোগে মামলা হইল। এটা আমার কপালের দোষ ছাড়া আর কী বলুম?’

মামলার নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, তিনটি মামলাতেই একই ধরনের ভাষা, একই বর্ণনা দিয়ে মালতীর ‘অপরাধ’ তুলে ধরা হয়েছে। শুধু এলাকাগুলো ভিন্ন।

বন মামলার খরচ জোগাতে ঘরের গরু-ছাগল বিক্রি করতে হয়েছে। অন্ধের যষ্ঠি ছিল একটি সেগুনবাগান, তা-ও গেছে মালতীর। ইতিমধ্যে তিনটির মধ্যে এ বছর দুটিতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন মালতী। একটি এখনো আছে।

বন বিভাগের দৃষ্টিতে আরেক ‘কাঠচোর’ নেরে দালবত (৬৭)। মধুপুরের একটি হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। ইকোপার্কের আন্দোলনের পর তাঁর বিরুদ্ধে আটটি মামলা হয়। এ পর্যন্ত ছয়টি থেকে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। তবে মামলাগুলোর জন্য চরম মূল্য দিতে হয়েছে তাঁকে। বললেন, ‘যখন মামলাগুলো হলো, তখন দুটি ছেলের উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার সময় হয়েছিল। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অর্থের অভাবে শিক্ষা দিতে পারলাম না।’

দুই শিক্ষককে মামলায় নিয়মিত হাজিরা দিতে হয়েছে। কখনো গিয়ে সারা দিন কেটে গেছে। মধুপুরের বন এলাকা থেকে টাঙ্গাইল যেতেই চলে যায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। পরিবহন, উকিল, নিজের খরচ—সব মিলিয়ে খরচের বহর কম না। আবার এমন দিনও গেছে যখন বিকেলে শুনেছেন শুনানির নতুন তারিখ দেওয়া হয়েছে। ফলে সারা দিনটাই গেছে মাটি হয়ে। নেরে দালবত বলেন, ‘এ যাবৎ সাত লাখ টাকার মতো শ্যাষ হয়্যা গেছে।’

এ যাবৎ রায় হওয়া সব মামলায় মালতী নকরেক ও নেরে দালবত নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। মালতী নকরেক বলেন, ‘মিথ্যা কাহিনি বানিয়ে হয়রানি করতেই মামলা দেওয়া হয়েছিল। আজ তা প্রমাণিত।’ নেরে দালবতের কথা, ‘তবে মিথ্যা মামলা যারা করেছিল তাগো শাস্তি হোক।’

তবে এসব যুক্তি মানতে নারাজ টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাসুদ রানা। তিনি বলেন, ‘অপরাধ না করলে মামলা দেওয়া হয় না। বনকর্মীরা অপরাধের চেয়ে বরং কম মামলাই দেন।’ অনড় এই বন কর্মকর্তার কথা, ‘এঁরা দায় থেকে রেহাই পেয়েছেন বলেই প্রমাণিত হয় না যে তাঁরা নির্দোষ।’

এই দুই শিক্ষকের বৃত্তান্ত জানালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘১৩ বছর ধরে এসব মানুষকে মামলার বোঝা বইতে হচ্ছে, এটাই তো তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন।’ রিয়াজুল হক বলেন, ‘বন বিভাগের উচিত এসব ঘটনার তদন্ত করা। কারও বিরুদ্ধে যদি হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে তাদের শাস্তি দিতে হবে।’

রিয়াজুল হক জানান, মধুপুরের বন মামলার নামে হয়রানির অভিযোগ নিয়ে মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত করবে।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036380290985107