ছয় কারণে পাসের হার, জিপিএ ৫ কম - দৈনিকশিক্ষা

ছয় কারণে পাসের হার, জিপিএ ৫ কম

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ইংরেজি, আইসিটি ও মানবিক বিভাগে খারাপ ফল, প্রশ্নফাঁসের সুবিধা না পাওয়া ও রিমোট কন্ট্রোলড খাতা মূল্যায়নে ছেদ পড়াসহ ছয় কারণে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ ফাইভ কমেছে। গত দশ বছরে সর্বনিম্ন ফল এবারে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি বিষয়ে সৃজনশীল পরীক্ষা হওয়া ও দুই শিক্ষাবোর্ডের ফলের হার বেশ কমে যাওয়ায়  প্রভাব পড়েছে।  পরীক্ষা গ্রহণে কঠোর অবস্থানে ছিল সরকার।  এ ছাড়া জিপিএ ৫ কমার পেছনে মূলত বিজ্ঞান ও আইসিটির কঠিন পরীক্ষাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। মেয়েদের তুলনায় এবার ফলে ছেলেরা বেশ পিছিয়ে পড়েছে।

বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ইংরেজি পরীক্ষায় ধাক্কার কারণে সামগ্রিক ফল খারাপ হয়েছে। ঢাকা বোর্ড ছাড়া অন্য বোর্ডগুলোতে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী বেশি। এই মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের অন্যতম ভীতি ইংরেজি। ইংরেজিতে সব বোর্ডের শিক্ষার্থীরা এবার খারাপ ফল করেছে।

গত কয়েক বছর ধরেই পাসের হার ও জিপিএ ৫ কমছে। এবারও সেই ধারা অব্যাহত ছিল। গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে ২ দশমিক ২৭ শতাংশ ভাগ। জিপিএ ৫-এর ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন ঘটেছে। গত বছরের তুলনায় জিপিএ ৫ কমেছে আট হাজার ৭০৭টি। ফলাফলের সব সূচক নিম্নমুখী হলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকৃত ফলের দিকেই যাচ্ছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খাতা মূল্যায়ন করায় পাসের হার কমেছে বলে দাবি করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, ‘আমরা মানসম্মত শিক্ষার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, তাই পাসের হার কমলেও সকল খাতা যাতে সঠিকভাবে মূল্যায়ন হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা এখন গুণগত মানের দিকে বেশি নজর দিচ্ছি। আমরা ভালো পরিবেশে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিতে চাই।’

তবে, মন্ত্রীর এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন শিক্ষাবিদরা। তাদের মতে, এবার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খাতা মূল্যায়ন হলে বিগত বছরগুলোতে কি হয়েছে?

এবার পাসের হার ও জিপিএ ৫-এর মতো অন্য কিছু সূচকও নিম্নগামী। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডসহ ১০ বোর্ডের অধীনে অংশ নেয় ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫৭ জন পরীক্ষার্থী। পাস করেছে আট লাখ ৫৮ হাজার ৮০১ জন। এবারের গড় পাসের হার ৬৬.৬৪ শতাংশ। গত বছর ছিল ৬৮.৯১ শতাংশ। এবার মোট জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ২৬২ জন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩৭ হাজার ৯৬৯। এবার শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪০০, গত বছর ছিল ৫৩২। কমেছে ১৩২টি। শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার ৫৫, গত বছর ছিল ৭২, কমেছে ১৭টি।

 

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এবারের পরীক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো সুযোগই ছিল না। আমাদের পরীক্ষার্থী বাড়ছে। বিজ্ঞান শিক্ষায় উন্নতি হচ্ছে, কারিগরিতে শিক্ষার্থী বাড়ছে। আর এবারের ফলে যা বাস্তব সেই চিত্রই বেরিয়ে এসেছে। আমরা নম্বর বাড়িয়ে দিতেও বলি না, কমিয়ে দিতেও বলি না।’

ইংরেজি ও আইসিটি:

এবার ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ে খারাপ ফল করেছে শিক্ষার্থীরা। ইংরেজিতে ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৭৫.৪৮ শতাংশ, রাজশাহীতে ৭২.৬৭, কুমিল্লায় ৭৩.৩৫, যশোরে ৬৫, চট্টগ্রামে ৭৩.৭৪, বরিশালে ৭১.০৬, সিলেটে ৮২.৩৩, দিনাজপুরে ৬৫.৫১ ও মাদরাসা বোর্ডে ৮৮.৮৯ শতাংশ। আর আইসিটিতে বেশির ভাগ বোর্ডের ফলই ৮০-র ঘরে। আইসিটিতে ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮২.৮৩ শতাংশ, রাজশাহীতে ৯৩.৫৪, কুমিল্লায় ৯২.১৫, যশোরে ৮৫.৬০, চট্টগ্রামে ৮৩.৯৪, বরিশালে ৮৭.৬১, সিলেটে ৯২.৪৬, দিনাজপুরে ৮৮.৩৩ এবং মাদরাসা বোর্ডে ৯৩.৯৯ শতাংশ।

এবার পদার্থবিজ্ঞানেও শিক্ষার্থীরা বেশ খারাপ করেছে। এই বিষয়টিতে কিছু শিক্ষার্থী খারাপ করার কারণে জিপিএ ৫ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। চট্টগ্রাম বোর্ডে এ বিষয়ে পাসের হার ৭৫.২৬ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৭.৪৪, বরিশালে ৭৮.৮৬, ঢাকায় ৮৬.১৫, রাজশাহীতে ৮৬.১০, কুমিল্লায় ৯২.৫০, যশোরে ৮১.১৩, সিলেটে ৯০.৩২ ও মাদরাসা বোর্ডে ৯৬.১১ শতাংশ।

এবার মোট পরীক্ষার্থীর প্রায় অর্ধেকই ছিল মানবিক বিভাগে। এ বিভাগ থেকে পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার ২৩১ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে তিন লাখ ১৮ হাজার ৫৪৪ জন। মানবিকে পাসের হার ৫৬.৪৬ শতাংশ। গড় পাসের চেয়ে তা প্রায় ১০ শতাংশ কম। আর মানবিক থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে এক হাজার ৯৫৪ জন। তবে বিজ্ঞান বিভাগে এবার পাসের হার ৭৯.১৪ শতাংশ ও জিপিএ ৫ পেয়েছে ২১ হাজার ১৭১ জন। ব্যবসায় শিক্ষায় পাসের হার ৬৪.৫৫ শতাংশ ও জিপিএ ৫ পেয়েছে দুই হাজার ৪৩৭ জন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত বছর থেকে নতুন পদ্ধতিতে খাতা দেখছেন পরীক্ষকরা। এতে যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে। এবার পরীক্ষকদের একটি মডেল উত্তর দেওয়া হয়। কম লিখে কেউ যাতে বেশি নম্বর না পায় আবার ভালো লিখে কেউ যাতে বঞ্চিত না হয়, সে জন্যই এ ব্যবস্থা। পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রধান পরীক্ষকরাও ১২ শতাংশ খাতা পুনর্মূল্যায়ন করেন।

ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, যশোর ও সিলেট শিক্ষা বোর্ডে গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী কম পাস করেছে। এ ছাড়া এবারও এই দুই বোর্ডে পাসের হার অষ্টম ও নবম নম্বরে। আর সবচেয়ে কম পাস করেছে দিনাজপুর বোর্ডে। যার প্রভাব সার্বিক ফলে পড়েছে। গত বছর থেকে প্রতিটি বিষয়ে ৩০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের গড় নম্বর কমেছে। এবার মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের ফল খারাপ হয়েছে। মেয়েদের পাসের হার ৬৯.৭২ শতাংশ আর ছেলেদের ৬৩.৮৮ শতাংশ।

জানতে চাইলে যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘আমাদের বোর্ডে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীই বেশি। আর এই শিক্ষার্থীদের অনেকেই ইংরেজিতে খারাপ করেছে। যার ফলে আমাদের গড় পাসের হার কমে গেছে। তবে বিজ্ঞান ও বাণিজ্যে আমাদের ফল ভালো হয়েছে।’

জানা যায়, সৃজনশীলে এখনো শিক্ষকরাই কাঁচা। এখনো অর্ধেক শিক্ষক নিজেরা সৃজনশীল প্রশ্ন করতে পারেন না। তাহলে এই শিক্ষকরা কিভাবে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে পড়ালেখা করান? সেই প্রশ্নও তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। অথচ এবার ২৬টি বিষয়ে ৫০টি পত্রে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়েছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী যারা সৃজনশীল বোঝে না তারা পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করেছে।

এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের কোনো অভিযোগ ছিল না। এ ছাড়া বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপও নিয়েছিল সরকার। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে আসন গ্রহণ বাধ্যতামূলক, প্রশ্নপত্রের একাধিক সেট থেকে ২৫ মিনিট আগে প্রশ্ন নির্ধারণ, বিশেষ নিরাপত্তা খামে প্রশ্নপত্র সংরক্ষণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান ছিল এবারের পরীক্ষায়।

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.011965036392212