ছাত্রলীগের একাংশের রোষানলে পড়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসক নিয়োগকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ২০টি মেডিক্যাল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পরীক্ষা ছাড়াই তাদের নিয়োগ দিতে ভিসির ওপর চাপ দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা বলেছেন, পরীক্ষা হলেও তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দিতে হবে। তাদের বাইরে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলে ভিসিকে এর মাশুল দিতে হবে বলে শাসানো হয়। শুক্রবার (১০ মে) দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আবুল খায়ের।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় আন্দোলনকারীদের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল বের করে। তারা গোল চত্বরে ব্যানার ও ফেস্টুনে আগুন লাগিয়ে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের নামে দফায় দফায় ভিসির অফিস, বাসভবন ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘেরাও ও ভাঙচুর চালিয়েছে তারা। ভিসিসহ কয়েক জন উপ-উপাচার্যকে ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ করেও রাখে। নয় মাসব্যাপী আন্দোলন ও ভাঙচুরের কারণে চিকিৎসক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কারণ এতে প্রশাসনিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। রোগীদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিয়োগ নিয়ে এক ধরনের ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে ছাত্রলীগ।
নিয়োগ পরীক্ষার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয়। তদবিরের বিষয়টিও তাকে জানানো হয়। তিনি পুরো বিষয়টি তদারকি করেন। চিকিৎসক নিয়োগের ক্ষেত্রে তদবিরকে প্রাধান্য না দেওয়া ও যোগ্যদের নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি। একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টিও তদন্ত করে। ১৮০ মেডিকেল অফিসার ও ২০ ডেন্টাল চিকিৎসক পদে নিয়োগে এ পর্যন্ত দুই দফা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমবার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর, ২৩ সেপ্টেম্বর ও ২৪ সেপ্টম্বর ভিসি অফিস ঘেরাও, অবরোধ ও ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ। এক পর্যায়ে সিন্ডিকেটের সভায় পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়া হয়। কিন্তু ছাত্রলীগের আন্দোলন অব্যাহত থাকে। তারা ভিসি, প্রো-ভিসি, রেজিস্ট্রারকে অবরোধ ও গালিগালাজ করেন।
গত ২২ মার্চ পুনরায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মোট ৬ হাজার ৫০০ জন চিকিৎসক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। আগামী সপ্তাহে নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে।
২০০ চিকিৎসক পদে লিখিত পরীক্ষা ২০০ নম্বর এবং মৌখিক পরীক্ষা ১০০ নম্বর। লিখিত পরীক্ষায় ১ পদের জন্য ৪ জনকে পাস করানো হয়। এ হিসেবে ৭১৯ জন মেডিক্যাল অফিসার ও ডেন্টালের ৮১ জন মিলে মোট ৮২০ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
জানা গেছে, নিয়োগের জন্য মন্ত্রী-এমপি, আমলা, বিএমএ, স্বাচিপসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে তদবির আসে ১৮শর বেশি। আন্দোলনকারীদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা রয়েছে বলেও জানা যায়। তাদের কাউকে কাউকে পেছন থেকে ইন্ধন দিচ্ছেন স্বাচিপ ও বিএমএ’র এক শ্রেণির নেতা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া জানান, মেধার ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে এক চুলও নড়বো না। মেধার মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কারো কাছে নতি স্বীকার না করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন।