আপনি কি টিউশনি খুঁজছেন?’, ‘লেডি টিউটর ওয়ান্টেড’ কিংবা ‘আপনি কি গৃহশিক্ষক খুঁজছেন? তাহলে আজই রেজিস্ট্রেশন করুন।’ নগরে টিউশন (গৃহশিক্ষক) ব্যবসায়ীদের এমন আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। ‘টিউশনি মিডিয়া’ নামের এসব টিউশন ব্যবসায়ী গৃহশিক্ষক দেওয়ার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা।
একাধিক ভুক্তভোগী অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর অভিযোগ, নগরের অলিগলিতে এভাবে প্রতারণা চললেও প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা। জানা গেছে, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের অসচ্ছলতা এবং সন্তানদের পরীক্ষা পাসের ব্যাপারে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তাকে পুঁজি করে একশ্রেণির প্রতারক চক্র বিভিন্ন নামে টিউশন ব্যবসা চালু করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজের খরচ মেটানোর তাগিদে একটি টিউশনের জন্য ধরনা দেন এসব মিডিয়ায়। অনেকে অভিভাবকের কাছ থেকে আনা মাসিক খরচের টাকা কথিত মিডিয়া ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দিয়ে বিপাকে পড়েন।
এসব মিডিয়ায় টিউশন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রথমেই নিবন্ধন ফিয়ের নামে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা আদায় করা হয়। পরে আজ-কাল করে সময় ক্ষেপণ করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে টিউশন জোগাড় করে দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রথম মাসের সম্মানীর ৭০ থেকে ৮০ ভাগই আদায় করে নেওয়া হয় টিউশনিতে যোগ দেওয়ার আগে।
এর মধ্যে অনেক অভিভাবক দু-এক সপ্তাহের মধ্যে নানা ছুতোয় গৃহশিক্ষককে বাদ দিয়ে দেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাই অভিভাবক সেজে টিউশন-প্রার্থীদের ধোঁকা দিয়ে থাকেন। এ রকম ফাঁদে পড়ে অনেক মেয়ে-শিক্ষার্থীও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এমনই একজন প্রতারক ধরা পড়েছেন পুলিশের হাতে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান থেকে টিউশন প্রতারক চক্রের মূল হোতাকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা দক্ষিণ বিভাগের লালবাগ জোনাল টিম।
এরা হলেন নাছির হোসেন (২৮)। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ শিক্ষক/শিক্ষিকা দিচ্ছি-নিচ্ছি লেখা স্টিকার, ভিজিটিং কার্ডসহ অন্যান্য লেখা উদ্ধার করা হয়। ডিবি দক্ষিণ বিভাগ সূত্রে জানানো হয়, গত রবিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান থেকে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত জানায়, সে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্রছাত্রীদের টিউশনি পাইয়ে দেবে এ মর্মে বিভিন্ন লিফলেট, ভিজিটিং কার্ড, স্টিকার এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা করে।
ছাত্রছাত্রীরা কেউ তার নম্বরে ফোন দিলে প্রার্থীকে রকেটের মাধ্যমে অগ্রিম তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পাঠাতে বলে। কেউ টাকা পাঠালে পরবর্তী সময়ে দিব, দিচ্ছি বলে বিভিন্ন রকম টালবাহানা শুরু করে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বারবার ফোন দিলে নাছির নানা রকম অশ্রাব্য ও অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ করে, কখনো কখনো হুমকি-ধমকিসহ বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।