বাংলাদেশে ডেঙ্গু এক আতঙ্কের নাম। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু এক মারাত্মক ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ছিল। ডেঙ্গু একটি প্রাচীন রোগ। এর উত্পত্তি চীনে, ৯৯২ খ্রিস্টাব্দে। ডেঙ্গু শুধু এশিয়া মহাদেশে নয়, অন্যান্য মহাদেশেও ডেঙ্গু পরিচিত একটি রোগের নাম। ডেঙ্গু জ্বর বলে নামকরণ হয় ১৭৭৯ সালে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ডেঙ্গু মহামারি আকারে দেখা দেয় ১৯৫০ সালে ফিলিপিন্স এবং থাইল্যান্ডে। ডেঙ্গু বিস্তার লাভ করে এডিস মশার মাধ্যমে। এডিস মশা রাতে আক্রমণ করে না। দিনে সূর্যোদয়ের পর দুই তিন ঘণ্টা এবং সূর্যাস্তের আগের কয়েক ঘণ্টা এদের আক্রমণ লক্ষণীয়। বুধবার (৪ মার্চ) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক মতামতে এ তথ্য জানা যায়।
মতামতে আরও জানা যায়, গরম চলে এসেছে, এডিস মশা গরমের দিনে বেশি আক্রমণ করে। বর্তমানে মশার উপদ্রব যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এরই মধ্যে আগামী দুই সপ্তাহে রাজধানী ঢাকায় মশার ঘনত্ব ও উপদ্রব নিয়ে আশঙ্কাজনক তথ্য দিয়েছেন একদল গবেষক। বিশেষ করে মে-জুন মাসে বেশি প্রকোপ দেখা যায়। কিন্তু গত বছর অক্টোবর পর্যন্ত এটি অব্যাহত ছিল। আরেকটি আতঙ্কের বিষয় হলো, অতীতে শুধু ঢাকাতে ডেঙ্গুর লক্ষণ ছিল। কিন্তু গত বছর থেকে সারাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটেছে। ডেঙ্গু নিয়ে এখনই পূর্ব পরিকল্পনা ও সতর্কতামূলক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ এডিস মশার ডিম্বাণু এক বছর পর্যন্ত তাদের অনুকূল পরিবেশ পেলে প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। সুতরাং ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।[insidead]
ঢাকার নবনির্বাচিত মেয়রবৃন্দ তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে মশা নিধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আশা করি তারা জনসাধারণের সঠিক আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারবেন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সঠিক নির্দেশনা প্রয়োজন। যেমন, সংশ্লিষ্ট বিশেষায়িত হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা, ড্রেন পরিষ্কার রাখা, বাড়ির আঙ্গিনায় ফুলের টবে পানি জমতে না দেওয়া, ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা, রাস্তার আশপাশে, খানাখন্দ পরিষ্কার বা ভরাট করা, জনকল্যাণমূলক সচেতনতা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক বিভিন্ন ওয়ার্কসপ, সেমিনার ও অন্যান্য মাধ্যমে যেমন—মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা করা জরুরি।
ঢাকায় কিউলেক্স ও এডিস মশার প্রজনন অত্যন্ত বেশি। ইদানীং জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে এসব মশার ঘনত্ব লক্ষ্য করা যায়। তবে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেশি। সুতরাং ফ্রিজ বা এসির পানি জমতে না দেওয়া, ড্রেন ও নর্দমার পানি যাতে না জমে এসব বিষয়ে অতিদ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং লার্ভা ধ্বংস করার কীটনাশক স্প্রে করা খুবই জরুরি বলে মনে করি। অন্যথায় ডেঙ্গু এ বছর মহামারি আকার ধারণ করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। ২০২০ সাল বাঙালি জাতির জীবনে একটি স্মরণীয় বছর। কারণ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন হবে। তাই এ বছর এবং ভবিষ্যতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কারো ছেলেমেয়ে, বাবা-মা ও ভাইবোন মৃত্যুবরণ যেন না করে এটাই হলো আমাদের কামনা ও প্রত্যাশা।
এডিস মশাই একমাত্র এই রোগের ধারক ও বাহক। শুধু সরকার এর প্রতিরোধে দায়িত্ব নিবে তা ঠিক নয়। নাগরিক হিসেবেও আমরা আমাদের দায়িত্ব উপেক্ষা করতে পারি না। যথাযথ কর্তৃপক্ষের দিকে তাকিয়ে না থেকে পাড়া-মহল্লায়, গ্রামগঞ্জে এবং শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে একত্রে দলবেঁধে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ডেঙ্গু দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব। সুতরাং, মশার আবাস ও প্রজনন স্থল ধ্বংস করে এডিস সমূলে নির্বংশ করে আমরা একটি সুন্দর দেশ, বাসযোগ্য পরিবেশ গড়ে তুলব। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সঠিক কর্ম পরিকল্পনা এবং পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এটাই হোক মুজিববর্ষে আমাদের অঙ্গিকার।
লেখক : মো. শফিকুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়