মাত্র লাখ টাকা লাগবে মাটির রাস্তা সংস্কারে। আর দুই লাখ টাকা খরচায় পুলের স্লিপার তৈরি করে দিলেই সব সমস্যার সমাধান! নির্ভয়ে শিক্ষার্থীরা হাঁটবে স্কুলের পথে। মাত্র তিন লাখ টাকার জাঁতাকলে পড়ে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীসংখ্যা কমে গেছে কয়েক গুণ। এর পরও জীবন বাজি রাখছে অনেক শিশু শিক্ষার্থী। এ ছবি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ৬৬ নম্বর দক্ষিণ দ্বিপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
ওই স্কুলে গিয়ে চোখে পড়েছে আরো ভোগান্তির ছবি। বহু বছরের পুরনো ওই বিদ্যালয়ের একমাত্র পাকা ভবনটি দুই বছর ধরে পরিত্যক্ত। তাই মাঝে মাঝে শিক্ষকদের ক্লাস নিতে হয় খোলা আকাশের নিচে। কারণ ঝুঁকিপূর্ণ ওই ভবনের ছাদধসে শিক্ষার্থীরা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও রেহাই পাননি শিক্ষকা নাজমুন্নাহার। ছাদধসে তিনি আহত হন। তাঁর মাথায় সেলাই পড়েছে সাতটি।
এর পর থেকে চার কক্ষের ওই বিদ্যালয়ের একমাত্র পাকা ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল্লা আল মামুন ২০১০ সাল থেকে একটি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করেছেন। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি আবুল বশার হাওলাদার উপায় না পেয়ে স্থানীয় এমপি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, স্থানীয় ইউপি মদনপুরা ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে ধরনা দিয়েছেন। কিন্তু কোনো সুফল মেলেনি। দায়িত্বশীলরা শিক্ষক, অভিভাবক, ব্যবস্থাপনা কমিটি ও এলাকাবাসীকে বারবার প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। ফলে পুরনো একটি টিনশেড ভবন সংস্কার করে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করতে হয়। প্রাক প্রাথমিক (শিশু) শ্রেণির ক্লাস হয় বাইরে। বৃষ্টি হলে ছুটির ঘণ্টা বাজে।
বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে আলুতলার খাল নামে পরিচিত ওই খালের রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় বিদ্যালয় থেকে উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব এলাকার তালুকদার, মোল্লা, খান ও মুন্সীবাড়ির অর্ধশত শিক্ষার্থী ভোগান্তি মাথায় নিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করে। শিক্ষার্থীরা তালের ডোঙা (তালগাছের নৌকা) নিয়ে স্কুলে যাত্রা করে। ওই খালের ওপর তালুকদারবাড়ির সামনের পুলটিও ভাঙা। সেটির স্লিপার না থাকায় বিমের ওপর দিয়ে যাওয়া-আসা করায় শিশু শিক্ষার্থীরা মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনায় পড়ে।
স্থানীয় একাধিক অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান খুব ভালো। শিক্ষকরা সব সময় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অজপাড়াগাঁয়ের ওই শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে। কিন্তু দুই লাখ টাকা ব্যয়ে পুলের স্লিপার আর লাখ টাকা ব্যয়ে রাস্তা সংস্কার করা হলে ওই এলাকার শিশু শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। সুমন, তানজিলা, সাইফুল নামের তিন শিক্ষার্থী বলে, ‘আমরা লেখাপড়া করতে চাই। স্কুলের সব সমস্যার সমাধান চাই। ’
প্রধান শিক্ষক এবং বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. হাবিবুর রহমানের একই অভিযোগ। তাঁরা বলেন, ‘রাস্তা, পুল এবং ভবন না থাকায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে। কিন্তু শিক্ষার মানের দিক থেকে আমরা উপজেলার শহরের শীর্ষ স্কুলগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অনেক ভালো ফল করছি। আমাদের ভবন, রাস্তা এবং পুল সংস্কার জরুরি। ’
ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবুল বশার হাওলাদার বলেন, ‘টিআর কাবিটাসহ কত বরাদ্দ লুটপাট হয়ে যায়। ওই সব টাকা দিয়া যদি খালপাড়ের রাস্তা আর পুলের স্লিপার বানাইয়া দেতে তাহলে ছাত্র-ছাত্রীগো স্কুলে আওয়া-যাওয়ায় এত কষ্ট অইতে না। ’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রিয়াজুল হকও বলেন একই কথা। তাঁরা বলেন, ‘ভবন পাওয়ার জন্য আমরা ওপর মহলে একাধিকবার লিখেছি, কিন্তু বরাদ্দ এখনো পাইনি। আর পুল এবং রাস্তা সংস্কারের জন্য উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব। ’