ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে মেট্রোরেলের পথ না করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা।
বৃহম্পতিবার রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ‘মেট্রোরেলের রুট বদলাও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচাও’ শীর্ষক এ কর্মসূচিতে চার শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকও শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচিতে সংহতি জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, এই মেট্রোরেল হলে বিজ্ঞান অনুষদের জিন প্রকৌশল, সিএসই, অণুজীব বিজ্ঞান ও সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ বিভাগ পড়বে সরাসরি হুমকিতে। বহু বছরের পুরনো রাজু ভাস্কর্যও তার চিরচেনা সৌন্দর্য হারাবে।
এই ট্রেনের শব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থগার ও দোয়েল চত্বরের পাশে অবস্থিত বিজ্ঞান লাইব্রেরিতে লেখাপড়া ব্যাহত হবে বলেও দাবি তাদের।
তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পথের দুই পাশেই বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকবে বিধায় মেট্রোরেল চলাচলে কম্পন এবং শব্দ দূষণ প্রতিরোধেও থাকবে বিশেষ প্রযুক্তি।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, “ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে মেট্রোরেলের রুট পরিবর্তন করা সম্ভব হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে কেন পরিবর্তন করা হবে না? আমরা উন্নয়নের বিপক্ষে নই; আমরাও মেট্রোরেল চাই। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ধ্বংস করে নয়।”
কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বুক চিরে কর্তৃপক্ষ একতরফাভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে অভিযোগ করে শিক্ষক সামিনা লুৎফা বলেন, “এই রেলের কারণে যে কম্পন হবে তাতে কোনোভাবেই বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবগুলোতে গবেষণা কাজ চালানো যাবে না। মেট্রোরেলের তীব্র শব্দে চমকে উঠবে সবাই।”
মানববন্ধনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীম উদ্দীন খান বলেন, “বাংলাদেশের প্রতিটি স্বাধিকার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস জড়িত। আর সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বুক চিরে মেট্রোরেল করার মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করার পাঁয়তারা চলছে।”
মেট্রোরেল হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চাপা পড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রকারান্তরে চাপা পড়বে দেশের মেধা-মনন। এই ধরনের উন্নয়ন ধারণার সবচেয়ে বড় গলদ হচ্ছে অপরিণামদর্শিতা। ইতিহাস গড়ার বিদ্যাপীঠে এ ধরনের হঠকারী উন্নয়ন অজস্র জটিলতা নিয়ে আসবে।”
এই আন্দোলন কোনোভাবেই মেট্রোরেলবিরোধী আন্দোলন নয়- উল্লেখ করে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সঞ্জীবন চক্রবর্তী বলেন, “দেশের প্রতিটি নাগরিকের মতো আমরাও মেট্রোরেল চাই। তবে কোনোভাবেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বুক চিরে নয়। তাই আমরা দাবি জানাচ্ছি, মেট্রোরেলের রুট পরিবর্তনের।”
মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ হয়ে পুনরায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
ঢাকার বহুল প্রতিক্ষীত মেট্রোরেল প্রকল্প নির্ধারিত সময় ২০১৯ সালে বাস্তবায়িত হলে রাস্তার মাঝ বরাবর উপর দিয়ে মোট ২৪ জোড়া ট্রেন চলাচল করবে। উত্তরা থেকে শুরু হয়ে মিরপুর-ফার্মগেইট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে এই ট্রেন, সময় লাগবে ৪০ মিনিটেরও কম।
রাজধানীতে মেট্রোরেল রুট নির্মাণে ইতোমধ্যে অ্যালাইনমেন্ট ও ১৬টি স্টেশনের নকশা চূড়ান্ত হয়েছে। শেষ হয়েছে প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন স্থানে চালানো ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ। ডিটেইল ডিজাইনের কাজ শেষে হবে ২০১৬ সালের অগাস্টে।
মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন হবে- উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেইট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকায়।