কলারোয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী সুলতানপুর গ্রামের এক দরিদ্র ঘরের মেয়ে ফাতেমা খাতুন । অল্পের জন্য এসএসসিতে সে জিপিএ-৫ পাননি। এরপর টাকার অভাবে এক বছর লেখাপড়া বন্ধ ছিল তার। কিন্তু তাতে দমে যাননি তিনি। অর্থাভাবে পড়াশোনা বন্ধ এবং এসএসসিতে জিপিএ-৫ না পাওয়ার পরও মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে বরং আরো প্রত্যয়ী হয়ে ওঠেন।
কঠোর অনুশীলন ও অদম্য মানসিক শক্তিকে পুঁজি করে এবার এইচএসসিতে ফাতেমা অর্জন করেন বহুল প্রত্যাশিত জিপিএ-৫। প্রমাণ করলেন, যদি কেউ ইচ্ছাশক্তিতে অটুট থাকেন, আর্থিক অবস্থা ও প্রতিকূলতা তার সাফল্যের পথে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। সাধারণত অনেক শিক্ষার্থী এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও এইচএসসিতে তা পায়না। তবে ফাতেমার ক্ষেত্রে হয়েছে এর বিপরীতটি। ফাতেমা খাতুন চন্দনপুর ইউনাইটেড কলেজ থেকে এ সাফল্য পেলেন।
তার বাবা তার বাবা আনারুল ইসলাম একজন প্রান্তিক কৃষক। মা তাছলিমা খাতুন একজন গৃহিণী। ফাতেমাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এক চিলতে জমির ওপর প্রায় ভগ্নদশার একটি বাড়িতে তাদের বসবাস। ২ বোন ও ১ ভায়ের মধ্যে ফাতেমা সবার বড়। তার ছোট বোন ৮ম শ্রেণিতে ও সবার ছোট ভাইটি ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বাবা আনারুল ইসলাম অনেক কষ্ট করে অভাবের সংসার চালান। ৩ সন্তানের লেখাপড়া ও সংসার চালাতে গিয়ে তিনি এক রকম সর্বস্বহারা।
অনেক কষ্টের মধ্যেও তিন ছেলে-মেয়েকে পড়াশুনা করাচ্ছেন। বসত ভিটাসহ প্রায় ১০ শতক জমিতে কৃষিকাজ করে সংসার চালানোসহ তাদের পড়াশোনার খরচ বহন করেন। গত বছর কলেজে ভর্তি হলেও আর্থিক সংকটের কারনে ফাতেমা পরীক্ষা দিতে পারেনি। গত ১৯ জুলাই ফলাফল জানার পর ফাতেমা উল্লাস প্রকাশ করে। মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে শুকরিয়া আদায় করে। খুব খুশি হন তার মা-বাবাসহ প্রতিবেশিরা। বাবা আনারুল ইসলাম বলেন, টাকা জোগাড় করতে না পারায় গত বছর মেয়েটি পরীক্ষা দিতে পারেনি। এছাড়া ভালোভাবে পড়াশোনা করতে যে ধরনের বই প্রয়োজন, তা মেয়েকে দিতে পারেননি। তার কোনো টিউটর ছিলনা।
তিনি বলেন, মেয়েকে আরও পড়াশোনা কীভাবে করাবেন-তা তাকে ভাবিয়ে তুলছে। উচ্চশিক্ষা চালিয়ে নেওয়া তার পক্ষে অসম্ভব বলে মনে করছেন তিনি। কিন্তু ফাতেমা আরও পড়াশোনা করতে চায়। চন্দনপুর ইউনাইটেড কলেজের অধ্যক্ষ গাজী রবিউল ইসলাম জানান, শহর অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের চেয়ে অনেক বিরূপ অবস্থার মধ্যে গ্রামের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করতে হয়। সেকারণে প্রত্যন্ত গ্রামের শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল করতে হলে অনেক বেশি অধ্যবসায় করতে হয়। তিনি বলেন, এসএসসিতে জিপিএ-৫ না পাওয়া ফাতেমা এইচএসসিতে আরও বেশি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করে। জীবনযুদ্ধে টিকে থাবার জন্য লেখাপড়াকে সে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে। তাই এবছর এইচএসসিতে ফল বিপর্যয়ের পরও ফাতেমা নজরকাড়া ফল অর্জন করেছে।
(চন্দনপুর ইউনাইটেড কলেজে থেকে ১১৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৫২জন পাস করেছে এবং ৬১জন শিক্ষার্থী ফেল করেছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে মাত্র ১জন)।
বৃহস্পতিবার সকালে এই সাফল্যের প্রতিক্রিয়ায় মানবিক বিভাগের ছাত্রী ফাতেমা খাতুন জানায়, সে ভবিষ্যতে ইংরেজিতে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করতে চায়। চায় উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে। আর এটি তার জন্য ভীষণ কঠিন হলেও অসম্ভব নয় বলে তার দাবি। চন্দনপুর ইউনাইটেড কলেজের অধ্যক্ষ ও সম্মানিত সকল শিক্ষক মন্ডলীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফাতেমা খাতুন তার জীবনের কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণের জন্য সকলের সহায়তা, দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করেছে।