বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাত দশকেরও বেশি সময়ের পথপরিক্রমায় এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম ঘটতে দেখা গেল। চাঁদাবাজির দায় মাথায় নিয়ে পদ থেকে সরে যেতে হলো দেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে। গত শনিবার গণভবনে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় শোভন-রাব্বানীকে সংগঠনের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তাঁদের দুজনকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সংগঠনটির এক নম্বর সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার পরপরই শোভন ও রাব্বানী পদত্যাগ করেন। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি নীতি নিয়ে ছাত্রলীগের পথচলা শুরু। বঙ্গবন্ধু পরিষ্কার বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস স্বাধীনতার ইতিহাস, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস।’ স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা, ছয় দফা, ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচন, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সব প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছেন। এই সময় ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন, কারাবরণ করেছেন। কিন্তু কখনো তাঁরা আদর্শের রাজনীতি থেকে বিচ্যুত হননি। কোনো লোভ বা অর্থলিপ্সা তাদের আদর্শচ্যুত করতে পারেনি। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ছাত্রলীগ নেতৃত্বের যে কাহিনি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে, তা শুধু দুঃখজনকই নয়, ছাত্রলীগের গৌরবজনক অতীত ঐতিহ্যে কালিমা লেপন করছে।
কী করেনি এই ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির নেতাকর্মীরা! সংগঠনের নামের সঙ্গে টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির যে তকমা লেগেছিল, তা ঘোচানো সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ভর্তি বাণিজ্য থেকে শুরু করে ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আবাসিক হলে আসন দখল করে থাকাসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়েছে ছাত্রলীগের নাম। সংগঠনটির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিও কোনো কাজে আসেনি। শেষ পর্যন্ত কঠোর সিদ্ধান্তই নিতে হয়েছে। ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার যেসব তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে তাতে আজকের ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংগঠনটির গৌরবের ইতিহাসের ধারাবাহিকতা খুঁজে পাওয়া যায় না।
এখন কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ঢেলে সাজিয়ে ছাত্রলীগের নতুন অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। শুধু ছাত্রলীগ নয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর প্রতিটি সহযোগী সংগঠনকেই নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। দেশের জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনগণের আস্থায় ফাটল ধরে এমন যেকোনো কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকতে হবে।