এক রাতের ভাঙনে নদীগর্ভ কেড়ে নিয়েছে সৈয়দ মোশারফ-রশিদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মূল ভবনের একাংশ। এই ভাঙনরোধে কার্যকর সরকারি পদক্ষেপ চাইছেন এখানকার সবাই। নয়তো বিদ্যালয়টির মতোই আরও অনেক স্থাপনা অচিরেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর সুগন্ধা নদীর ভাঙনে বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের মহিষাদী গ্রাম আক্রান্ত হচ্ছে। দিনে দিনে এ গ্রামের মূল ভুখণ্ড ছোট হয়ে আসছে। সর্বশেষ সোমবার (২৭ আগস্ট) দিনগত রাত থেকে সৈয়দ মোশারফ-রশিদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সীমানায় ভাঙন শুরু হয়ে। বর্তমানে স্কুল ভবনের একাংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সৈয়দ মোশারফ-রশিদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম রেজা জানান, বর্তমানে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর পাঠগ্রহণের বিদ্যালয়টি ২০০৩ সালে স্থাপিত। সুগন্ধার তীব্র ভাঙনের কয়েক বছরের মাথায় স্কুলটি নদীর তীরে চলে আসে। ভাঙনরোধে স্কুলের সামনে পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্লক পাইলিংও করে, যা ভেঙে পড়লে ২০১৬ সালে এলাকাবাসীর উদ্যোগে ভাঙন প্রতিরোধে স্থানীয়ভাবে ৫ লক্ষাধিক টাকা অনুদান সংগ্রহ করে পার্কোপাইল ও বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়।
এদিকে আকস্মিক নদী ভাঙনের কারণে স্কুল ভবনের অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুটিও (দোয়ারিকা সেতু) পড়েছে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে। সেতুর পূর্ব দিক ও সড়কের সংযোগের মুখের গাইডওয়াল ভেঙে পড়েছে নদীতে। সেতুর গার্ডার অঞ্চলেও গ্রাস করেছে ভাঙন।
ভাঙনের খবর শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শক করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সুশীল সমাজের নেতারা।
বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ফোরামের সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক বলেন, স্কুলভবনটি নদীতে বিলীনের জন্য অবহেলা আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাই দায়ী। সেতু রক্ষার জন্য দ্রুত উদ্যোগী না হলে দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এই সেতুটিকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রোধ করা সম্ভব হবে না।
বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম খালেদ হোসেন স্বপন বলেন, সেতুটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের, কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধের কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)। সওজ তাদের সেতু রক্ষার জন্য পাউবোকে নাকি অর্থবরাদ্দ করছে না। প্রতিষ্ঠান দু’টি একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেদের দায়ভার এড়ানোর চেষ্টা করছে। প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতুটি বাঁচাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ জানান, মূলত আগে থেকে বুঝতে পারলে নদী ভাঙনরোধে আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর আশপাশে সুগন্ধা নদীর ভাঙন আকস্মিক শুরু হয়েছে। যদিও সেতু ও আশপাশের এলাকার ভাঙনরোধে আগে থেকেই একটি বড় প্রজেক্ট হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি সমীক্ষা করে সেতু ও আশপাশের এলাকার ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার কাজের সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করেছি যা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টেম্পোরারিভাবে পার্কো পাইল বা জিও ব্যাগ ফেলে সেতু এলাকার ভাঙনরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ কাজে সড়ক ও জনপদ বিভাগও সহায়তা করবে।
এদিকে স্কুলভবন নদীভাঙনের কবলে পড়লেও বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখতে সুবিধাজনক স্থানে একটি টিনশেড স্কুলঘর নির্মাণের জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে ২ লাখ টাকা ও ৫ বান্ডিল ঢেউটিন অনুদানের আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম খালেদ হোসেন স্বপন।