নবম শ্রেণির বিস্ময়কন্যা তহুরা - দৈনিকশিক্ষা

নবম শ্রেণির বিস্ময়কন্যা তহুরা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি |

ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম মুক্তাগাছার মেয়ে সারাবান তহুরা। সে স্থানীয় কলসিন্দুর স্কুল এন্ড কলেজ এর নবম শ্রেণির ছাত্রী। ক্ষুদে ফুটবলার হিসেবে তহুরা নামটি বাংলাদেশসহ দেশ-বিদেশে এখন সুপরিচিত। ৪ বোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে তহুরা তৃতীয়। কেউ কেউ মেসি বলে তাকে ডাকে। তহুরা দৈনিক শিক্ষার ময়মনসিংহ প্রতিনিধি মতিউল আলমের ভাতিঝি। 

সর্বশেষ ১৮ আগস্ট ভুটানে সাফ অ-১৫ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়ন ফাইনাল  খেলায় ১-০ গোলে ভারত চ্যাম্পিয়ন এবং বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল রানার্স আপ হয়েছে। এই টুর্নামেন্টে ৪টি গোল করে সেরা খেলেয়াড় হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে বাংলাদেশের গর্ব তহুরা। কলসিন্দুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেনীতে পড়ার সময় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলুতুন্নেছা নারী ফুটবল প্রতিযোগীতা হাতেখড়ি এই ফুটবলারের। সেই শিশু কাল থেকে ফুটবল প্রেমে পড়ে যায় তহুরা। পারিবারিক নানা বাধা উপেক্ষা করে। একের এক সাফল্য বয়ে আনতে শুরু করে। তার বাবা কৃষক ফিরোজ মিয়া তার মেয়ে তহুরা প্রথম খেলা দেখেছিল বিটিভিতে। কলসিন্দুরে বাজারে টিভির সামনে শতশত লোকের ভীড় দেখে ফিরোজ উকি দেয় টিভিতে তারা কি দেখছে। টিভিতে চোখ রাখতেই সে দেখে তার মেয়ে তহুরা টিভিতে ফুটবল খেলছে। খেলা দেখে অনেকক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল সে। মেয়েদের ফুটবল খেলা ইসলাম বিরোধী বলে বাধা দিয়েছিল  ফিরোজ। অবশেষে শিক্ষক, সচেতন আত্মীয় ও প্রতিবেশী বুঝানোর পর ফিরোজ মেয়েকে খেলতে আর বাধা দেয়নি। যে তহুরা এক সময় কথা বলার সাহস পেতো না। ফুটবল খেলার সুবাদে সেই তহুরার এত দিনে ঘোরা হয়ে গেছে নেপাল, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীনের হংকং, ভুটানসহ আর কত না দেশ। 

সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবলে বাংলাদেশ দলের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার তহুরা। ঢাকায় সাফের এই টুর্নামেন্টের প্রথম আসরে গত বছর নেপালের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিল তহুরা। গত মার্চে হংকংয়ে অনূর্ধ্ব-১৫ জকিকাপে দুটি হ্যাটট্রিকসহ ৮ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জিতেছিল। থিম্পুতে চলমান সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত দুটি গোল করেছে।  ভুটানকে ১ গোল দিয়েছে গত দুই বছরে আন্তর্জাতিক ফুটবলে এ পর্যন্ত পাঁচটি হ্যাটট্রিক করেছে তহুরা। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ চ্যাম্পিয়নশিপ, অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ, অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ ও হংকংয়ের জকি কাপ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২৮ গোল করেছে তহুরা। মেয়েদের বয়সভিত্তিক ফুটবলে এত গোল করেনি আর কেউ।  তাজিকিস্তানে ২০১৬ এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে ৪ ম্যাচে  সর্বোচ্চ ১০ গোল করে তহুরা। ওই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করতে বড় ভূমিকা ছিল কলসিন্দুরের এই কিশোরীর।

ফুটবল খেলাটা এখন তার নেশায় পরিণত হয়েছে। ফুটবল তাঁর রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। ছেলেদের মতো চুলের ছাঁট তহুরার। এলাকায় ছেলেদের সঙ্গেই মার্বেল খেলা, সাইকেল চালানো, মাছ ধরা, পাখি শিকার, এমনকি বাবার সঙ্গে মাঠে ধান লাগানোতেও জুড়ি মেলা ভার তহুরার। এলাকার সবাই তাকে ‘মেসি’ বলে ডাকে। শুরুতে সবাই যখন তাকে মেসি বলে ডাকত তখন রেগে যেতো তহুরা । রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে লোকে বলত, মেসি কোথায় যাও? খেলোয়াড় সানজিদা, মার্জিয়ারাও মেসি বলে ডাকত। অথচ তখনো সে জানতনা মেসি কেন তাকে ডাকে ।’ বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল খেলতে প্রথম ঢাকায় এলে তহুরার ‘মেসি-দর্শন’ ঘটে, ‘সবার মুখে মেসির কথা শুনে তার ভীষণ ইচ্ছে করত তাঁর খেলা দেখতে। একদিন ইউটিউবে তাকে মেসির খেলা দেখাল মারিয়া। এরপর থেকে মেসির ভক্ত হয়ে গেল তহুরা।’ 

তহুরার জীবনটাই বদলে দিয়েছে ফুটবল। এলাকায় যারা আগে তাকে ফুটবল খেলতে নিষেধ করত, এখন তারাই তহুরাকে আদর করে। গ্রামে গেলে লোকে দেখতে আসে একনজর। শুধু তা-ই নয়, ডেকে বলে, ‘তহুরা তোমার জন্যই আমরা গ্রামে বিদ্যুৎ পেয়েছি। ফুটবল খেলে নিজ গ্রাম সহ বাংলাদেশটাকে আলোকিত করেছে তহুরা, মারিয়া, সাবিনা, মার্জিয়া, সানজিদা, মাহমুদা, জুনিয়র শামসুন্নাাহার ও সিনিয়র শামসুন্নাহার। এরা সবাই কলসিন্দুর স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী।
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038168430328369