পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো রকমের বয়সের সীমাবদ্ধতা থাকিতেছে না। কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং বিদেশফেরত দক্ষ কর্মীদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সরকার এই বিশেষ একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে। ইহাতে ভালো-মন্দ দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়াছে। শনিবার (৪ জুলাই) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, বয়সের সীমাবদ্ধতা তুলিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার মনে করিতেছে, এমন অনেক ব্যক্তি রহিয়াছেন, যাহাদের প্রয়োজনীয় কারিগরি দক্ষতা আছে কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কোনো সার্টিফিকেট নাই এবং সার্টিফিকেট না থাকিবার কারণে ভালো চাকরি পাইতেছেন না। আবার চাকরি পাইলেও ভালো বেতন পাইতেছেন না। সেই ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি এখন যদি চাহেন এবং যদি তাহার প্রয়োজনীয় একাডেমিক যোগ্যতা থাকে, তাহা হইলে তিনি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হইতে পারিবেন। এমনকি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে ছেলেদের ন্যূনতম যোগ্যতা জিপিএ ৩ দশমিক ৫ হইতে কমাইয়া ২ দশমিক ৫ এবং মেয়েদের ২ দশমিক ২৫ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হইয়াছে।
অনেকেই মনে করিতেছেন ইহা সময়ের সেরা উদ্যোগ! কেবল একটি কাগজের সনদের অভাবে একজন দক্ষ টেকনিশিয়ান এতদিন তাহার দক্ষতার যথাযথ মূল্যায়ন পাইতেন না। কারণ, তাহার ডিপ্লোমা সনদ নাই এবং তাহা গ্রহণেরও বয়স পার হইয়া গিয়াছে। এখন সেই বাধার প্রাচীর ভাঙিল। বিশ্বের বেশির ভাগ উন্নত দেশেই কেবল ডিপ্লোমা নহে, যে কোনো বিষয়ে যে কেহ যে কোনো বয়সে পূর্বতন শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী তাহার একাডেমিক শিক্ষার পরিধি বাড়াইয়া লইতে পারেন। আমাদের দেশে বিবিধ কারণে বয়সের ব্যারিয়ার রহিয়াছে।
সুতরাং পলিটেকনিক শিক্ষায় এই বাধার প্রাচীর তুলিয়া দেওয়ার কিছু সুফল মিলিবে নিশ্চয়ই। তবে কথা রহিয়াছে। দেশের পলিটেকনিক শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা যে খুব ভালো—তাহা বলা যাইবে না। দ্বিতীয় শিফট লইয়া সমস্যা, শিক্ষক সংকট, ক্লাস সংকট, যন্ত্রপাতি ও ল্যাব সংকট, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট সংকট, শিক্ষক থাকিলেও মানসম্মত শিক্ষকের সংকট—এমন বিবিধ সংকটে জর্জরিত। অনেকে আবার মনে করেন, আমাদের উদ্দেশ্য যদি হয় মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে ভালো বেতনে কারিগরি লোক পাঠানো, তাহা হইলে কয়েকটা আলাদা ট্রেনিং ইনস্টিটিউট খুলিয়া মধ্যপ্রাচ্যের চাহিদা অনুযায়ী ইহার কারিকুলাম আর ডিগ্রির অনুমোদন নেওয়ার ব্যবস্থা করিলে বয়স্ক দক্ষ টেকনিশিয়ানদের সমস্যার সুরাহা হইতে পারে। এই জন্য টিটিসির মতো বিশেষায়িত কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়িয়া তুলিবারও কথা শুনা গিয়াছে।
একই সঙ্গে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষা শিখানোর দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। এই জন্য কারিকুলাম এমনভাবে সাজানো উচিত, যাহাতে তাহারা ইংরেজিতেও দক্ষ হইয়া উঠে। কারণ, দেশের বাহিরে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করিতে হইলে ইংরেজির বিকল্প নাই। আর একটা সমস্যা হইল, ডিপ্লোমাদের উচ্চশিক্ষার জন্য ডুয়েট ছাড়া তেমন কোনো প্রতিষ্ঠান নাই। এই দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। এই সকল সমস্যার সমাধান না করিয়া কেবল বয়সের সীমাবদ্ধতা তুলিয়া দিলে কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য সফল হইবে না।