পিস স্কুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয় - দৈনিকশিক্ষা

পিস স্কুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক |

peace school

জামায়াতে ইসলামী পরিচালিত হওয়ার অভিযোগে চলতি বছরের ৩ মে পিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ সম্পর্কে তথ্য পাঠাতে আট শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সালমা জাহান স্বাক্ষরিত নির্দেশে সাত দিনের সময় বেধে দেয়া হয়।

তবে দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এবিষয়ে কার্যত কোন ব্যবস্থাই নেয়নি মন্ত্রণালয়।

আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির গত ৭ এপ্রিল এক বৈঠকে বলা হয়, এসব স্কুলের পরিচালনা পরিষদে সরকারি দলের কারা কারা আছেন তাদের বিষয়েও খোঁজখবর নিতে হবে। ‘পিস’শব্দটি ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন নামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের শতাধিক স্কুল পরিচালিত হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের অনুমোদনের বাইরে জামায়াতের দলীয় আদর্শের পাঠ্যবই পড়ানো হয় এসব স্কুলে। এসব স্কুলের পরিচালনা পরিষদে রয়েছেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। আরও অভিযোগ রয়েছে, জামায়াত–শিবিরের পাশাপাশি আবার কোনো কোনো স্কুল পরিচালনা পরিষদে চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরাও রয়েছেন। মন্ত্রিসভা কমিটির আলোচনার পর পীস স্কুলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জামায়াত-শিবিরের নেতা ও জড়িত সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

এ ছাড়া স্কুলের আয়ের উৎস ও ব্যয় খতিয়ে দেখতেও বলা হয়েছে। স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এর আগে গত ১৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পীস স্কুল সম্পর্কে একটি বিশেষ প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।

সারাদেশে ৪০টিরও বেশি পীস স্কুল রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, স্কুলের অধিকাংশ শাখা সরাসরি পরিচালনা করছেন জামায়াত-শিবির নেতারা। কোন কোন এলাকায় নিজেদের চেহারা লুকাতে পরিচালনায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের। তবে পিস স্কুলের নামে সক্রিয় কোন শাখার শিক্ষক-কর্মকর্তারাই দেখাতে পারছেন না ড. জাকির নায়েকের কোন অনুমোদন।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরীর হাত দিয়েই কয়েকটি পিস স্কুল স্থা্পনের প্রাথমিক অনুমতি পেয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জঙ্গী অর্থায়ণের অভিযোগে জেলখাটা বরখাস্ত শিক্ষক নেতা সেলিম ভুইয়ার বাবার নমেও স্কুলের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা বোর্ড । শাহেদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং হলে টিকে থাকতে আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতির নীরব সর্মথক ছিলেন বলে তার সহপাঠীরা জানা্ন। বর্তমান সরকারের আমলে সাবেক এপিএসকে ব্যবহার করে ঢাকা বোর্ডের সচিব পর্যন্ত হয়েছেন শাহেদ। একইভাবে সারাদেশের ১০ টি শিক্ষাবোর্ডের প্রায় সবগুলোরই বিদ্যালয় ও কলেজ পরিদর্শক এবং সচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে সাবেক এপিএসপন্থীরা আসীন গত কয়েকবছর যাবত।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিষ্ঠিত ‘পিস স্কুল এ্যান্ড কলেজ’-এর নেপথ্যে ভারতের ধর্মবিষয়ক উপস্থাপক ডা. জাকির নায়েকের পিস স্কুল ও পিস টিভির কোন সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ও ভারতের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। বাংলাদেশে এ প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে কাজ করছে জামায়াত ও তার মদদপুষ্টরা। পাশাপাশি জামায়াত ঘরানার নেতাকর্মী, সমর্থকদের একটি অংশও জড়িত। এ কারণে বাংলাদেশে স্কুলটির শাখা, শিক্ষার্থী-সংখ্যা, আয়-ব্যয়ের তথ্য সংগ্রহ করতে মাঠে কাজ করছে সরকারের একাধিক সংস্থা। জানা গেছে, ঢাকা মহানগর জামায়াতের নেতারা অবশ্য দাবি করছেন, পিস স্কুলের সঙ্গে জামায়াতের সাংগঠনিক কোন যোগাযোগ নেই। তবে জামায়াত-সমর্থক অনেকে পিস স্কুল এ্যান্ড কলেজ পরিচালনার সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করছেন তারা।

রাজশাহী পিস স্কুল এ্যান্ড কলেজের বিরুদ্ধে জাকির নায়েকের নাম ব্যবহার ও পিস টিভির পরিচয় ব্যবহার করে স্কুল পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আলাউদ্দীন দাবি করেন, তাদের সারাদেশে মোট শাখা ১২টি। তবে রাজশাহীর শিক্ষক নেতারা ইতোমধ্যেই বলেছেন, ভারতের ইসলামী চিন্তাবিদ জাকির নায়েকের নাম ভাঙিয়ে স্কুল পরিচালনা করা হচ্ছে। পিস টিভির আদলে স্কুলের নামকরণ ও লোগো বানিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে এ বছর প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে স্কুলটি। এদিকে পিস স্কুলের এমন প্রতারণা নিয়ে কয়েক শিক্ষার্থীর বাবা-মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে জানা যায় স্কুলটির সঙ্গে জাকির নায়েক কিংবা পিস টিভির কোন সম্পর্ক নেই।

peace school

স্কুলের নির্বাহী তৌফিকুর রহমান জানান, এখানে তিন মাধ্যমেই ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করে। বাংলা, ইংরেজী ও আরবী তিন মাধ্যমকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হয়। তবে যেহেতু ইসলামী নামে স্কুল সেহেতু আরবী শিক্ষার ওপর একটু বেশি নজরদারি করা হয়।

রাজশাহী শহর শোভা পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির পোস্টার, ফেস্টুন। একই চিত্র চট্টগ্রামেও। রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠানটির পাশে বসবাসকারী এক অভিভাবক আকবর হোসেন বলছিলেন, আমি মনে করেছি এটা জাকির নায়েকের প্রতিষ্ঠান। সে রকমই লোগো। বাচ্চাকে ভর্তি করব বলে অফিসে গিয়ে জানতে চাইলে ওনারাও জানান এটা জাকির নায়েকের বাংলাদেশী স্কুল। বাচ্চাকে প্লে­গ্রুপে ভর্তি করার ২ মাসের মাথায় জানতে পারে জাকির নায়েকের সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। মিথ্যা কথা বলে প্রচার চালাচ্ছে মাত্র।

একই প্রতারণার কথা জানান, রাজধানীর লালমাটিয়ার বাসিন্দা সিকান্দার। তার অভিযোগ. স্কুলটিতে শিক্ষার আড়ালে মৌলবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। কঠোর এ্যাকশন নিতে হবে। এরা ছোট ছোট শিশুকে জঙ্গি বানাচ্ছে। তার অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধেও। সরকারের দুর্বলতার কারণেই শিক্ষার আড়ালে মৌলবাদীরা এসব করতে পারে বলে অভিযোগ এ অভিভাবকের।

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058839321136475