উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্যারামেডিকেল শিক্ষা বোর্ড আইন-২০১৬-এর খসড়া চূড়ান্তের সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। ডিপ্লোমা মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের ২৮ বছর আগের দাবি এবং ১০ বছর আগের আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে এ আইন। এ আইনের খসড়া চূড়ান্ত ও পাস হলে একদিকে শিক্ষার নামে সার্টিফিকেট বাণিজ্য শুরু হবে, অন্যদিকে দেশের সাধারণ মানুষের জনস্বাস্থ্য চরম হুমকিতে পড়বে- এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। ডিপ্লোমা মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের অভিযোগ, স্বার্থান্বেষী মহলের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পাশ কাটিয়ে চার দশক আগের পুরনো ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষা ব্যবস্থায় ফিরে যেতে তৎপর মন্ত্রণালয়। সে কারণেই দীর্ঘ সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে ‘ডিপ্লোমা মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড’-এর পরিবর্তে ‘প্যারামেডিকেল বোর্ড’ গঠনের খসড়া করা হয়েছে।
১০ আগস্ট বাংলাদেশ প্যারামেডিকেল শিক্ষা বোর্ড আইন-২০১৬-এর খসড়া চূড়ান্ত করতে আজকের সভার আহ্বান করা হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেলা আড়াইটায় এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা ছাড়াও বিএমএ, বিএমডিসির নেতৃবৃন্দ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব (কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ) উপস্থিত থাকবেন।
জানা গেছে, মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৯ সালে প্যারামেডিকেল নাম বিলুপ্ত করে এ সংক্রান্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয় ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালের ১৮ নভেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ডিপ্লোমা মেডিকেল টেকনোলজি, ফার্মাসি, ডেন্ট্রিস্টিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে এক ছাতার নিচে আনতে ‘ডিপ্লোমা মেডিকেল বোর্ড’ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ। ফলে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একটি রিট পিটিশন করা হয়। ২০১৬-এর নভেম্বরে আদালতের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে আদালত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি নির্দেশ দেন। কিন্তু অজানা কারণে ১০ বছরেও তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
এছাড়া বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যান্ড ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যান্ড ফার্মাসি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের বিভিন্ন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রীর সঙ্গে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায়ও বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড গঠনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।
বাংলাদেশ প্যারামেডিকেল শিক্ষা বোর্ড আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, দ্য স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি বিলুপ্ত করা হলে বাংলাদেশ প্যারামেডিকেল শিক্ষা বোর্ড গঠন প্রয়োজনীয়। সে কারণেই এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া এ আইনের অধীনে গঠিত বোর্ডে ১১টি ডিপ্লোমা কোর্সসহ তিনটি সার্টিফিকেট কোর্স এবং এ ধরনের আরও কোর্স অন্তর্ভুক্তের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যান্ড ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব সেলিম মোল্লা বলেন, বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা ৪ বছরের ডিপ্লোমা কোর্সে লেখাপড়া করে। যেখানে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা হয়। এক্ষেত্রে এসব শিক্ষাক্রমকে প্যারামেডিকেল বোর্ডের অধীনে নেয়া হলে এর পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে এক মাস, তিন মাস এবং ৬ মাসের নাম সর্বোস্ব সার্টিফিকেট কোর্স পরিচালনা শুরু করা হবে। শুধু বাণিজ্যিক কারণে পরিচালিত এসব কোর্সে অংশগ্রহণ করে কেউ কিছু শিখতে পারবে না। কিন্তু সার্টিফিকেটধারীরও অভাব হবে না। যাদের ন্যূনতম বেতনে বিভিন্ন মেডিকেল ডায়াগনস্টিকে চাকরি দেয়া হবে। ফলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা, শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আবদুর রশীদ বলেন, এসব বিষয় তার জানা নেই। তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন দু’বছরেরও কম সময়। তাছাড়া এসব সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় থেকে গ্রহণ করা হয়।