পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষার্থী সারা বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে বছর শেষে এই পরীক্ষাগুলোয় অংশগ্রহণ করল। যার মাধ্যমে তাদের মেধা যাচাই হলো গ্রেডিং সিস্টেমে। শিক্ষার্থী যারা জিপিএ ৫ পেয়েছে তারা ভীষণ খুশি। এটা তাদের পরিশ্রমের অর্জিত ফসল। সন্তানদের ভালো ফলের জন্য অভিভাবকরাও খুশি ও গর্বিত। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলও অতি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের শিশুরাও সারা বছর মনোযোগসহকারে লেখাপড়া করে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। প্রতিটি শ্রেণিতে তাদের মধ্যে শুধু কেউ একজন প্রথম হয়েছে। বাকিরা দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে। শিক্ষার্থী যারা প্রথম হয়েছে তারা এবং তাদের অভিভাবকরাও আনন্দিত।
এটাই স্বাভাবিক। শ্রেণিতে প্রথম হলে কিংবা জিপিএ ৫ পেলে ভীষণ ভালো লাগে। শিক্ষার্থী-অভিভাবক সবাই খুশি। আর তাদেরই অন্য সহপাঠীরা যারা পরিশ্রম করে প্রথম হলো না বা জিপিএ ৫ পেল না, তারাই শুধু মর্মাহত নয়, তাদের অভিভাবকরাও ভীষণ মর্মাহত। কারণ প্রথম বা জিপিএ ৫ অর্জন না করা মানেই সে ভালো ছাত্র নয়। এতে অভিভাবকরা সন্তানদের প্রতি অনেক সময় নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। কিন্তু প্রথম না হলেও সে ভালো ছাত্র হতে পারে। শিশু যদি তার পাঠ্য বইয়ের যোগ্যতাগুলো ভালোভাবে অর্জন করে থাকে, তবে অবশ্যই সে মেধাবী। এই সত্যটা উপলব্ধি করতে হবে।
ভালো ফল মানেই যে সে শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি জানে, ভালো জানে এমন নয়। সাজেশন নির্ভর, মুখস্থ নির্ভর কিংবা গাইড নির্ভর পড়ার মাধ্যমে ভালো ফল করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে জানার পরিধি থাকে ছোট। পরীক্ষায় ভালো ফল করা এক, আর ভালোভাবে সব কিছু জেনে ভালো ছাত্র হওয়া অন্য বিষয়। মেধাবীরাই পারে তাদের মেধা আর মননকে কাজে লাগিয়ে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। অভিভাবকরা কিংবা শিক্ষকরা শুধু জিপিএ ৫ অথবা প্রথমের পেছনে না ছুটে যদি তাদের সন্তানরা বা শিক্ষার্থীরা কী শিখল, কতটুকু শিখল, কী কী ঘাটতি আছে, কতটুকু শেখানো দরকার—এ বিষয়ে গুরুত্ব দেন, তাহলে সেই সন্তানই হবে সত্যিকারের মানুষ। শিশুদের দিয়ে জিপিএ ৫ পাওয়া বা প্রথম হওয়ার প্রতিযোগিতায় না গিয়ে তাদের বিদ্বান ও মেধাবী বানানোর ব্রতে মনোনিবেশ করি।
বড়লেখা, মৌলভীবাজার।