হেই ব্রো, কেমন আছ? বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে এটি পরিচিত বাক্য। শিক্ষিত মহলে এমন বিকৃত উচ্চারণ এখন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে গেছে। লক্ষ করলেই দেখা যায়, বাংলা উচ্চারণ কী ভয়াবহ রকমের ইংরেজির বিকৃতি উচ্চারণ দ্বারা প্রভাবিত। ভাষা বিকৃতিকরণের যেন প্রতিযোগিতা চলছে। আর এটি করাও এক ধরনের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। পরিপূর্ণ শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারে কতজন, তা জরিপ করলে হয়তো ভয়াবহ সংখ্যা উঠে আসবে। বাংলার সঙ্গে ইংরেজির মিশ্রণ ডাল-ভাতের মতো সহজ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম চলে ইংরেজি ভার্সনে এবং শিক্ষার্থীদের ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, পরীক্ষার খাতায় ইংরেজিতেই সব প্রশ্নের উত্তর লিখতে হয়। ভয়াবহ মাত্রায় ইংরেজি ভাষার চর্চার ফলে কখনো কখনো দেখা যায়, খাঁটি বাংলা ভাষায় কথা বলার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যে ভাষার জন্য আমাদের দামাল ছেলেরা নিজের জীবন দিয়ে গেছেন, সেই ভাষা রক্ষার জন্য সংগ্রাম করা আমাদের জাতির জন্যই লজ্জাজনক। সকালে এফএম রেডিও চালু করলেই কণ্ঠ ভেসে আসে—হ্যাল্লো লিসেনার...ঘড়ির কাঁটায় এখন সকাল ৭টা। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি...। এখন গল্প করব আর ড্যাশিং-ডুশিং ফাটাফাটি গান শোনাব। এটি শুধু নির্দিষ্ট এফএম রেডিও নয়, বরং বেশির ভাগ এফএম রেডিওর চিত্র। একইভাবে আজকাল টেলিভিশনেও অনেক নাটক ও ধারাবাহিক নাটক দেখানো হচ্ছে, তাতে দূষণ ও বিকৃতিতে বাংলা ভাষা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করতে যাচ্ছে তাই ভাবে বাংলা ভাষার ব্যবহার করা হচ্ছে। চারদিকে চলছে ভাষা বিকৃতির উৎসব। আমাদের তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারে না। তাদের অনেকের কাছেই ইংরেজি ও বাংলা ভাষার মিশ্রণে তৈরি ভাষা প্রিয় হয়ে উঠেছে। শুদ্ধ ভাষা চর্চার মাধ্যমে বিশ্বের বুকে বাংলাকে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে আমাদের এবং জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। এবারের একুশের প্রতিজ্ঞা হোক—জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা চালু করে মাতৃভাষা বাংলাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।