প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড কেন? - দৈনিকশিক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড কেন?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ নভেম্বর একটি দৈনিক পত্রিকায় লালকালিতে মুদ্রিত ব্যানার হেডিংয়ে লিখেছে ‘প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড হচ্ছে।’ বিষয়টির বিস্তারিত জানতে একজন শিক্ষানুরাগী হিসেবে কৌতূহল হলো। এক নিশ্বাসে পড়ে ফেললাম পুরো খবরটি।

প্রকাশিত খবরটিতে বলা হয়েছে, ৩০ লাখের বেশি প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার্থীর চাপ আর বহন করা সম্ভব হচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পক্ষে। তাই এই বিশাল চাপ সামলাতে দ্রুত প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠনের কাজ শেষ করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতর ইতোমধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড আইনের খসড়া জমা দিতে পারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। মঙ্গবার (২৮ জানুয়ারি) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।   

নিবন্ধে আরও জানা যায়,  প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন শুক্রবার (২৯ নবেম্বর) জনকণ্ঠকে বলেছেন, ‘আইনের খসড়া তৈরির জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর কাজ অনেকটাই করে ফেলেছে। তাদের একটি ঘরোয়া সভা আছে খসড়া নিয়ে। এটি করেই হয়ত আগামী মাসে (ডিসেম্বরে) খসড়াটি জমা দেবে মন্ত্রণালয়ে অধিদফতরের পক্ষ থেকে। জমা দিলেই আমরা আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে দ্রুত ক্যাবিনেটে দিয়ে দেব। যেভাবে কাজগুলো শেষ করতে চাই সেভাবে এগুলে আগামী অর্থবছরেই প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আলাদা বোর্ড কার্যকর করতে পারব।’

অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. এএফ এম মঞ্জুর কাদির জনকণ্ঠকে বলেছেন, এসএসসি বা এইচএসসিতে সব বোর্ড মিলিয়ে যে পরীক্ষার্থী হয়, তার চেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী হয় প্রাথমিক ও এবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায়। তাই পরীক্ষার জন্য অবশ্যই একটি শিক্ষা বোর্ড থাকা উচিত। এই পরীক্ষা নিতে গিয়ে আমরা প্রচ- চাপে রয়েছি। অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরীক্ষার সময় বিজিপ্রেসসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। তখন আমাদের প্রধান অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। হাজার হাজার কাজের মধ্যে পরীক্ষা নেয়াটা খুব কষ্টকর।

এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, আসলে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা থাকবে। এ পরীক্ষা তুলে দেয়া হবে না। কারণ খোঁজ নিলে দেখা যাবে সিঙ্গাপুর, ফিনল্যান্ডের মতো দেশেও প্রাথমিক পরীক্ষা আছে। মানসম্মত পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হলে প্রাথমিকে প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষা রাখতে হবে। আর এই পরীক্ষা রাখার জন্য একটি বোর্ড জরুরী হয়ে পড়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও পরীক্ষা শীঘ্রই বাতিল হবে না। তাই পরীক্ষা চালু রাখতে হলে কি প্রক্রিয়ায় শিক্ষা বোর্ডকে কার্যকর করা যায়, তার পথ বের করতে এখন কাজ করছেন কর্মকর্তারা।

প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড কেন?
প্রকাশিত : ২৮ জানুয়ারী ২০২০ Print  New  0  0 Google +0  0
রণেশ মৈত্র

 
বিগত ৩০ নবেম্বর, ২০১৯ বিশিষ্ট জাতীয় দৈনিক ‘জনকণ্ঠ’ লালকালিতে মুদ্রিত ব্যানার হেডিংয়ে লিখেছে ‘প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড হচ্ছে।’ বিষয়টির বিস্তারিত জানতে একজন শিক্ষানুরাগী হিসেবে কৌতূহল হলো। এক নিশ্বাসে পড়ে ফেললাম পুরো খবরটি।

প্রকাশিত খবরটিতে বলা হয়েছে, ৩০ লাখের বেশি প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার্থীর চাপ আর বহন করা সম্ভব হচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পক্ষে। তাই এই বিশাল চাপ সামলাতে দ্রুত প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠনের কাজ শেষ করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতর ইতোমধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড আইনের খসড়া জমা দিতে পারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন শুক্রবার (২৯ নবেম্বর) জনকণ্ঠকে বলেছেন, ‘আইনের খসড়া তৈরির জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর কাজ অনেকটাই করে ফেলেছে। তাদের একটি ঘরোয়া সভা আছে খসড়া নিয়ে। এটি করেই হয়ত আগামী মাসে (ডিসেম্বরে) খসড়াটি জমা দেবে মন্ত্রণালয়ে অধিদফতরের পক্ষ থেকে। জমা দিলেই আমরা আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে দ্রুত ক্যাবিনেটে দিয়ে দেব। যেভাবে কাজগুলো শেষ করতে চাই সেভাবে এগুলে আগামী অর্থবছরেই প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আলাদা বোর্ড কার্যকর করতে পারব।’

অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. এএফ এম মঞ্জুর কাদির জনকণ্ঠকে বলেছেন, এসএসসি বা এইচএসসিতে সব বোর্ড মিলিয়ে যে পরীক্ষার্থী হয়, তার চেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী হয় প্রাথমিক ও এবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায়। তাই পরীক্ষার জন্য অবশ্যই একটি শিক্ষা বোর্ড থাকা উচিত। এই পরীক্ষা নিতে গিয়ে আমরা প্রচ- চাপে রয়েছি। অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরীক্ষার সময় বিজিপ্রেসসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। তখন আমাদের প্রধান অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। হাজার হাজার কাজের মধ্যে পরীক্ষা নেয়াটা খুব কষ্টকর।

এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, আসলে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা থাকবে। এ পরীক্ষা তুলে দেয়া হবে না। কারণ খোঁজ নিলে দেখা যাবে সিঙ্গাপুর, ফিনল্যান্ডের মতো দেশেও প্রাথমিক পরীক্ষা আছে। মানসম্মত পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হলে প্রাথমিকে প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষা রাখতে হবে। আর এই পরীক্ষা রাখার জন্য একটি বোর্ড জরুরী হয়ে পড়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও পরীক্ষা শীঘ্রই বাতিল হবে না। তাই পরীক্ষা চালু রাখতে হলে কি প্রক্রিয়ায় শিক্ষা বোর্ডকে কার্যকর করা যায়, তার পথ বের করতে এখন কাজ করছেন কর্মকর্তারা।


 বোর্ডের জনবল নিয়োগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক এ এফ এম মঞ্জুর কাদির বলেছেন, ‘বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিট এখন আর কার্যকর নেই। অর্থাৎ ইউনিটের কাজ নেই। তাই আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড হলে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিট বিলুপ্ত করে এর জনবল শিক্ষাবোর্ডে একীভূত করা হবে।’

খসড়া তৈরির সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা শিক্ষা বোর্ড গঠনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেছেন, প্রাথমিক ও এবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৩০ লাখের বেশি পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার চাপ সামলাতে পারছে না অধিদফতর। এসএসসি ও এইচএসসিতে যেখানে ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার জন্য বোর্ড আছে ১০টি, সেখানে প্রাথমিকে ৩০ লাখের জন্য একটিও বোর্ড নেই।

জানা গেছে, এবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বোর্ড গঠনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশ আসার পর পরই কাজ শুরু হয়। ৩০ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর পরীক্ষার জন্য কোন বোর্ড না থাকা শিক্ষার মানের জন্য সুখকর নয় বলে দ্রুত বিষয়টিতে নজর দেয়ার তাগিদ দেন সংসদীয় কমিটির সদস্যরা।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি না থাকায় জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না বলেও সংসদীয় কমিটি মত দেয়। কমিটি শিক্ষার মান বাড়াতে মন্ত্রণালয়কে তাদের কাজে গতিশীল হওয়ারও সুপারিশ করেছে। তারপরই অধিদফতর শিক্ষা বোর্ড গঠনে একটি প্রস্তাব পাঠালে তাতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

২০১৩ সালে ২৬,০০০ স্কুল জাতীয়করণ হওয়ায় এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৩,০০০ হলেও অধিদফতরের লোকবল আছে আগের মতোই। স্কুল ও শিক্ষকের দেখভাল করাই একটি অধিদফতরের পক্ষে কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সময়মতো অনেক কাজই করা সম্ভব হয় না। এরপরও আবার থাকে পরীক্ষার দায়িত্ব।

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শেখ একরামুল কবীর বলেন, ৩০ থেকে ৩২ লাখ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার বোঝা অধিফতরের ওপর দিলে আসলে তা নেয়া কঠিন। একটি বিকল্প চিন্তা করতেই হবে। বোর্ড হতে দেরি হলে কমপক্ষে বর্তমানের দশ বোর্ডকে এ পরীক্ষার দায়িত্ব দেয়া যায়। তাতেও সুফল পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন এ শিক্ষাবিদ।

অপ্রয়োজনীয় একটি বোর্ড নতুন করে গঠন করা হবে কেন? কেন নতুন নতুন আমলা-কর্মচারীর প্রাধান্য সৃষ্টি করা হবে বোর্ড গঠনের মাধ্যমে? বোর্ডের প্রয়োজনীয়তা, উপরোক্ত বর্ণনা অনুসারে, প্রাথমিক সমাপনী ও এবতেদায়ী মাদ্রাসা পরীক্ষা ও তার বিপুল সংখ্যাধিক্য। এই সংখ্যাধিক্য এমনই যে, তা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ১০টি বোর্ডের মোট পরীক্ষার্থী সংখ্যার চাইতেও বেশি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা যদি উঠিয়ে দেয়া যায়, তা হলে নিশ্চয়ই সকল ঝঞ্ঝাট মুক্ত হওয়া সম্ভব। নতুন আর একটি বোর্ড প্রাইমারী এডুকেশন বোর্ড নামে গঠনেরও যৌক্তিক কোন কারণ থাকে না। এই পরীক্ষা তুলে দেয়া হবে বলে স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রীও বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেছিলেন।

 

বাংলাদেশের শিশুদের শিক্ষা কোন্ নিয়মে পরিচালিত হওয়া উচিত, তা নিয়ে সরকারীভাবে যেন একটা ছেলেখেলা চলছে অনেকদিন যাবত। বহুদিন ধরে শুনলাম, প্রাথমিক সমাপনী হবে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর। এই ব্যবস্থা বহু দেশে প্রচলিত আছে এবং অষ্টম শ্রেণী সমাপন করার পর কোন বোর্ড পরীক্ষা গ্রহণেরও দরকার করে না। বেশি বেশি পরীক্ষা নিলেই শিক্ষার বা শিক্ষার মানের কোন উন্নয়ন আদৌ ঘটে না। যেমন ঘটে না দ্বিতল-ত্রিতল দালানকোঠায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানান্তর বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজ নিজ জমিতে বহুতল বিশিষ্ট দালান-কোঠা নির্মাণের মধ্যে!

আমাদের নিজ নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা কি? প্রাথমিক পর্যায় পর্যন্ত আমরা পুরোপূরি কাঁচাঘরে পড়েছি। শিক্ষকগণ ছিলেন উচ্চমানের এবং তারা শিক্ষাদানও করতেন গভীর দরদ ও আন্তরিকতা দিয়ে। তাদের বেতনও ছিল নামমাত্র। প্রাথমিক পর্যায় তখন শেষ হতো চতুর্থ শ্রেণী শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। কোন বোর্ডের অধীনে কোন সমাপনী ব্যবস্থাও তখন ছিল না। ব্রিটিশ আমলেও ছিল না, পাকিস্তান আমলেও না।

১৯৭২-এ যখন দেশবাসী মরণপণ লড়াই করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করলেন তখন আমরা সবাই যেন অতিমাত্রায় স্বাধীন ও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হয়ে গেলাম। আমলাতন্ত্রের দাপট কম ছিল, তা নয়। তবে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালী আমলাদের বৃহদংশ বিশেষ ভূমিকা পালন করায় তারা যেন সেই ক্ষমতা ও অধিকারবলে সর্বজ্ঞ সেজে গেলেন। একশ্রেণীর হঠাৎ গজে ওঠা রাজনীতিক নানা স্বার্থে আমলাদের পৃষ্ঠপোষকও সেজে গেলেন। ধীরে ধীরে প্রকৃত, ত্যাগী, দেশপ্রেমিক রাজনীতিকদের যেন গুঁতা দিয়ে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু হলো। আজ তা আরও ফুলেফেঁপে বিকশিত হয়েছে। এই ফাঁকে আমলাতন্ত্রের বিকেন্দ্রীকরণ এবং আমলাতন্ত্রের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া কিভাবে বাংলাদেশে ঠাঁই করে নিল সেই প্রক্রিয়ার দিকে একটু নজর দেয়া যাক।

সম্ভবত সামরিক আমলাতন্ত্রের নায়ক জেনারেল জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর দেশের মহকুমাগুলো তুলে দিয়ে বা সেগুলোর মান উন্নীত করে জেলায় রূপান্তর করলেন। পাঠনীতিতে আমরা পেলাম ১৭ জেলা প্রশাসকের স্থলে ৬৪ জেলা প্রশাসক, ১৭ পুলিশ সুপারের বদলে ৬৪ এসপি এবং ৫ জন করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আগের একজনের স্থলে) এবং ২/৩ জন করে এডিশনাল এসপি (একজন ডিএসপির স্থলে)। ফলে অসংখ্য উচ্চপদের আমলা, তাদের মানসম্মত বেতন, অফিস, বাসভবন, যানবাহন প্রভৃতিও বাড়তে থাকল হু হু করে।

অপর অবৈধ সামরিক শাসক জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পয়দা করলেন উপজেলা পদ্ধতি প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের নামে। তৈরি হলো উপজেলা কমপ্লেক্স, ভবনাদি এবং যানবাহন। স্বাধীন ভিয়েতনামে (আমাদের চাইতে দীর্ঘমেয়াদী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা প্রাপ্ত) প্রথম দিকে মন্ত্রীরা চলতেন বাইসাইকেলে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে তার দিব্যি এবং চোখ ধাঁধানো ব্যতিক্রম। মন্ত্রী তো দূরের কথা এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও প্রমুখের গাড়ির (কতটা তাদের দরকার সেটা ভাবার বিষয়) দিকে তাকালেও বোঝা যায়, সেসব গাড়ি কত দামের!

আরও একটি প্রশাসনিক উন্নয়ন ইদানীং ঘটে চলেছে। একের পর এক বিভাগ সৃষ্টি। অতীতের তিনটি বিভাগের পরিবর্তে ইতোমধ্যেই আমরা পেয়েছি ১০টি বিভাগ। অন্তত বাড়তি সাতজন বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশের ডিআইজি, এডিশনাল ডিআইজি, তাদের অফিস, বাসস্থান, যানবাহন ইত্যাদি। শিক্ষাক্ষেত্রেও তার প্রবল ঝাপটা লাগল। একের পর এক শিক্ষাবোর্ড গঠন এবং সেখানেও বিপুলসংখ্যক আমলা, কর্মচারী, গাড়ির প্রাচুর্য, প্রাচুর্য তাদের মানসম্মত আবাসস্থলেরও।

আমলাদের সংখ্যা বৃদ্ধির এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে যদি চোখ ফেরানো যায় শিক্ষার মান উন্নয়নের দিকে, তাহলে চোখে অবশ্যই পড়ে মানের চূড়ান্ত অবনতি। এত ধাপের পরীক্ষার অনুকূলে প্রধান যুক্তিই হলো শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যস্ত রাখা। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা হয় না। ফলে দেশে পয়দা হলো লাখ লাখ নানা মানের নানা পর্যায়ের কোচিং সেন্টার। আর এই কোচিং সেন্টারই হলো যেন ভাল ফল অর্জনের পথে গ্যারান্টি। ভাল ফল মানে জিপিএ ফাইভ, গোল্ডেন ফাইভ প্রভৃতি নামক সোনার হরিণ। আর তার সঙ্গে যেন পিছু হটছে শিক্ষার মান।

অনেক বলা হলো। এবারে শেষ করি।

এক. দিবারাত্র পড়ার বোঝা দিয়ে আটকে রাখা নয়; ব্যবস্থা করুন মান ও দায়িত্ববোধসম্পন্ন শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীর সকল পর্যায়ে এবং ক্লাসরুম পড়া (কোচিং সেন্টার নয়)।

দুই. পাঠ্যপুস্তকের সংখ্যা হ্রাস।

তিন. মাধ্যমিকের আগে কোন বোর্ড পরীক্ষার প্রয়োজন নেই।

চার. অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার স্তর নির্ধারণ। তবে তাদের সমাপনী পরীক্ষা কোন বোর্ড গ্রহণ না করে সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলোর শিক্ষকদের ওপর ছেড়ে দেয়া হোক।

পাঁচ. সকল পর্যায়ের শিক্ষার জন্য সঙ্গীত, নৃত্যশিক্ষা (ডিগ্রী পর্যন্ত) বাধ্যতামূলক করা হোক।

ছয়. সকল স্তরে শিক্ষার্থীদের ক্রিকেট, ফুটবলসহ নানাবিধ ক্রীড়া শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হোক।

 

লেখক: রণেশ মৈত্র

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.012308120727539