চৈত্রের কাঠফাটা রোদ বেশি দিন সহ্য করতে হবে না। চৈত্রের অর্ধেক শেষ। আসছে বৈশাখ। বৈশাখের কথা উঠলে শহুরে বাসিন্দারা উৎসব বাদে ভিন্ন কিছু চিন্তা করতে পারেন না। কিন্তু ঠিক উলটো চিত্র দেখা যায় উপকূলবাসী ও প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জের মানুষের মধ্যে। বৈশাখ শব্দটি তাদেরকে উত্সবের আমেজ মনে করায় না। কেউ তাদের সামনে বৈশাখ উচ্চারণ করলে তারা শুনেন ‘কালবৈশাখী’। বৈশাখ মানে ছনের বেড়া দেওয়া কাঁচাঘর ও ফসল রক্ষার লড়াই। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে স্বপ্ন বোনার লড়াই। রোববার (৫ এপ্রিল) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, আমাদের দেশে সাধারণত দুই মৌসুমে ঝড় হয়। বছরের শুরুর প্রথম ঝড়টা আসছে। ছোটখাটো ঝড় আমাদের পরিবেশেরই অনুষঙ্গ। এটি অপ্রত্যাশিত নয় বরং প্রত্যাশিত। অবচেতনভাবেই আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু বড়ো ধরনের আঘাত মোকাবিলায় ব্যক্তি উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। চাই রাষ্ট্রীয় পূর্ব প্রস্তুতি।
এবারের ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির আগাম আশঙ্কার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এবারের কালবৈশাখীর প্রেক্ষাপট ভিন্ন। পুরো পৃথিবীর সঙ্গে বাংলাদেশও করোনা মহামারির আতঙ্কে রয়েছে। পুরো দেশ সব ভুলে করোনা আতঙ্কে বিভোর। করোনা প্রস্তুতির নামে অন্যান্য প্রস্তুতি থমকে রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, ব্যক্তি নিজেও অপরাপর বিপদের কথা চিন্তাও করতে পারছে না। এ দেশের প্রেক্ষাপটে করোনার চাইতেও ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আচমকা আঘাত হানতে পারে। করোনার অজুহাতে রাষ্ট্র অন্যান্য ইস্যুগুলোকে গুরুত্বহীন করতে পারে না।
গ্রামগঞ্জের প্রবীণদের মুখে একটি সতর্কবাণী শুনেছি। ‘এইবার আমের বউল উপচে পড়ছে, তুফানও আইবো বেশ’। আমের মুকুল বেশি আসাকে প্রবল ঝড়ের লক্ষণ হিসেবে প্রবীণরা পূর্ব প্রস্তুতির তাগিদ দেন। রাষ্ট্র ও জনগণকে এই তাগিদ এখনই অনুভব করতে হবে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর কী রূপ দশা, বাঁধ মেরামত, বিদ্যুত্ সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়ন, পানীয়জল, যাতায়াত সবকিছু এখনি প্রস্তুত করতে হবে। বরং বলব, প্রস্তুতির সময় ফুরিয়ে গিয়েছে। এখন অতিরিক্ত দয়ার সময় চলছে।
গত কয়েক বছরের ঝড়ের পূর্বাপর অবস্থা পর্যবেক্ষণে বলতে হয়, এবারের ঝড়ের সতর্কবার্তা বিশ্বাস করে সব ছেড়েছুড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে জনগণ তেমন একটা আগ্রহ দেখাবে না। গত কয়েকটি ঝড় আসি আসি করে না আসায় ও গণমাধ্যমসহ সরকারিভাবে অতিরিক্ত আতঙ্ক সৃষ্টি করায় এমন আস্থাহীনতার জন্ম হয়েছে। আস্থা ফিরিয়ে আনতে সতর্ক সংকেত ও বার্তায় কেমন পরিবর্তন প্রয়োজন তা এখনি ভাবতে হবে। প্রকৃতি মনে করিয়ে দেওয়ার আগেই ঝড়ের মৌসুমের ক্যালেন্ডারে চোখ বুলাতে হবে। না হয় ঘুমের মধ্যেই প্রলয়ংকরী ঝড় করোনা প্রস্তুতিসহ সব লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যাবে।
লেখক : আব্দুল্লাহ আল মাছুম, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা-১৩৪২।