ফুলবাগানের পাঠশালা - দৈনিকশিক্ষা

ফুলবাগানের পাঠশালা

যশোর প্রতিনিধি |

লেখাপড়া করানোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নাটক, কবিতা, আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা শেখান মন্টু চাকলাদার ২৫ কাঠা জমির বেশিরভাগই ফুল আর ফলের গাছে ভরা। আছে ক্যাকটাস, অর্কিডও। এই চত্বরেই গোলাম মোস্তফা ওরফে মন্টু চাকলাদারের একতলা একটি বাড়ি। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে ৮টা পর্যন্ত শিশুদের লেখাপড়ার গুণগুণ শব্দ আর পাখির কলকাকলিতে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।

মন্টু চাকলাদার এলাকার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোর পাশাপাশি নাটক, কবিতা, আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকার এক অনিন্দ্যসুন্দর প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। আর এ প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন "ফুলবাগানের পাঠশালা"।

যশোর সদরের চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের খিতিবদিয়া গ্রামে নিজবাড়িতেই মন্টু চাকলাদার গড়ে তুলেছেন তার পাঠশালা। শহর থেকে পশ্চিমদিকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার পাশে প্রধান সড়ক থেকে নেমে সামান্য দূরে এই গ্রামটি। মোড়ে যে কারও কাছে জিজ্ঞাসা করলে দেখিয়ে দেবে ফুলবাগানের পাঠশালায় যাওয়ার রাস্তা।

খুব সকালে গিয়ে দেখা যায়, পাঠশালায় পিাটি বিছিয়ে সামনে বেশ নিচু বেঞ্চের মতো টেবিলের পরে বই খাতা সাজিয়ে রেখেছে শিশু-কিশোররা। কেউ পড়ছে, কেউবা নিবিড়মনে অংক কষছে। আর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন তাদের প্রিয় মন্টু দাদু।

খিতিবদিয়া গ্রামের অপু চাকলাদার আর শীলা বেগমের মেয়ে অর্নি প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। স্থানীয় নিউ মাধঘোপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সে।  অর্নি জানায়, "দাদুর (মন্টু চাকলাদার) এখানেই আমি বর্ণমালা শিখেছি। দুই বছর ধরে দাদু আমাকে অন্যদের সাথে পড়ান।"

একই এলাকার চুড়ামনকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী সোহেলী। গত ৫ বছর ধরে নিয়মিত এখানেই পড়াশুনা করে আসছে সে।

৫ম শ্রেণির ছাত্র নিশান বিশ্বাস।  নিশান বলে, "প্রতিদিন সকালে ফুলবাগানের পাঠশালায় এসে স্কুলের দেওয়া বাড়ির কাজ শেষ করি। কিছু বুঝতে না পারলে দাদু খুব সহজে তা বুঝিয়ে দেন। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে ফের বিকেলে তারা জড়ো হই দাদুর এখানে। দাদু খুব আদর করেন। গল্প-গুজবের পাশাপাশি আমাদের কবিতা আবৃত্তি শেখান। এখানে আছে নাটকের মঞ্চস্থ করার ব্যবস্থা। আমাদের অংশগ্রহণে নাটকও হয় এখানে।" 

চুড়ামনকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শরীফা খাতুন। পড়াশুনার পাশাপাশি সে কবিতা আবৃত্তি ও নাটক করে। জেলা শিশু একাডেমি আয়োজিত জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় তাৎক্ষণিক বিষয়ে একক অভিনয় করে ২০১৭ সালে সে প্রথম স্থান অধিকার করে।  দ্বিতীয় হয় সুরাইয়া আক্তার নামে আরেক শিক্ষার্থী, সেও ফুলবাগানের পাঠশালার।

কেন এই পাঠশালা?

মন্টু চাকলাদার একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসে তিনি অবসরে যান। সে বছরের ডিসেম্বরেই তিনি এই পাঠশালার সূচনা করেন।

মন্টু চাকলাদার বলেন, "অবসরে এসে বেশকিছু টাকা পাই একসাথে। তাছাড়া পৈত্রিকসূত্রে যে জমাজমি রয়েছে, তাতে সংসার চলে যাবে। আমার দুই ছেলেই প্রতিষ্ঠিত। তারা ঢাকাতে থাকে। বাড়িতে আমি আর গিন্নী রাজিয়া মোস্তফা ডলি।অবসরে অনেকেই যান এবং তাদের বিনোদন হয় সাধারণত চায়ের দোকানে। কিন্তু আমি মনে করি যে এভাবে সময় নষ্ট করার কোনও মানে নেই। তাই এই পাঠশালা চালু করি।"

স্কুল, কলেজ ও চাকুরী জীবনে তিনি খেলাধুলা আর অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন মন্টু চাকলাদার। তিনি বলেন, "ছাত্রজীবনে যাত্রাপালা করেছি। টানা ১৬ বছর প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগ খেলেছি! বলতে পারেন, কালচারাল ফ্যামিলি আমার। আমাদের শৈশব, কৈশোর, যৌবন কেটেছে খেলাধুলা, বন্ধুত্ব, সহমর্মিতা আর সৌহার্দ্যের মধ্য দিয়েই।"

এই পাঠশালার শুরুর দিকের গল্প জানতে চাইলে মন্টু চাকলাদার বলেন, "২০১২ খ্রিস্টাব্দে  দুই পরিবারের কাছ থেকে দুই শিশুকে নিয়ে আসতে পারি এই পাঠশালায়। প্রথমদিকে গ্রামের বাবা-মায়েরা ভেবেছিলেন এটি আমার উন্মাদনা।  পাঠশালায় আসা শিশু-কিশোরদের স্কলের ফলাফলে উন্নতি এবং বাড়িতে গিয়ে মুরুব্বিদের সাথে তাদের আচার-ব্যবহার অনেককেই বিমোহিত করে। পরের বছর আমার পাঠশালায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬-এ। তারপর থেকে এভাবেই চলছে"

"সকালে শিশুরা তাদের পড়াশুনা করে। বিকেলে এসে খেলাধুলা আর রাতে তাদের মায়েরা আসে নৈতিক আর মানবিক শিক্ষাগ্রহণের নিমিত্তে। সপ্তাহে দুইদিন এখানে সঙ্গীতশিক্ষার আসর হয়। শিশুদের সঙ্গে সঙ্গে আমিও শিখছি।"

যখন মন্টু চাকলাদারের সাথে কথা হচ্ছিল তখন তার স্ত্রী ঢাকায় ছিলেন ছেলেদের কাছে। বাড়িতে তিনি একা। এ অবস্থায় খাওয়া দাওয়া কিভাবে চলছে জিজ্ঞেস করি তাকে। ঠিক সেইসময় ছোট্ট একটি মেয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মিষ্টিসুরে বলে ওঠে, দাদু- মা তোমার জন্যে নাশতা পাঠিয়েছে। একটি প্লেটের উপরে রুটি, বাটিতে একটু আলু ভাজি আর একটা ডিমভাজা।

মন্টু চাকলাদার বললেন, "ওদের মায়েরা এসে ঘর ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করে দিয়ে যায়।"

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0072400569915771