ফেসবুক প্রেম তছনছ সংসার - দৈনিকশিক্ষা

ফেসবুক প্রেম তছনছ সংসার

মির্জা মেহেদী তমাল |

বাবা-মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে স্ত্রী-সংসার নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল মোকাররমের (ছদ্মনাম)। বিয়ের পর চাকরির সুবাদে বউ সোফিয়াকে (ছদ্মনাম) নিয়ে চলে আসে ঢাকায়। ব্যাংকে চাকরি। দিনের অধিকাংশ সময় মোকাররমকে পার করতে হয় বাসার বাইরে। বউ বাসায় একা একা দিন পার করেন। তেমন কোনো কাজ না থাকায় সারাদিন তার কাটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। হঠাৎ ফেসবুকে সোফিয়ার পরিচয় হয় জাহাঙ্গীর আলম বাপ্পী নামের এক ছেলের সঙ্গে। প্রথমে পরিচয়, এরপর চ্যাটিং, পরিণতি প্রেম পর্যন্ত গিয়ে গড়ায়। দিনে দিনে এর গভীরতা বাড়তে থাকে। সারাদিন কাজ শেষে মোকাররম বাসায় ফিরে আসে। কিন্তু সোফিয়া আগের মতো ঠিক করে কথাও বলতে চায় না। কোনো কিছু জানতে চাইলেও উত্তর দেয় না। সারাক্ষণ ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কার সঙ্গে এত কথা জানতে চাইলে স্বামীকে ছয়নয় বোঝানোর চেষ্টা করে সোফিয়া। এভাবে বেশ কিছুদিন চলতে থাকে।

হঠাৎ বউয়ের এমন পরিবর্তন মোকাররমের মনে সন্দেহের দানা বাঁধে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন স্ত্রী একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। নির্দোষ মোকাররম স্ত্রীর কাছ থেকে এমনটি কখনই আশা করেনি। তাই মেনে নিতে পারেনি স্ত্রীর পরকীয়া। এর কিছুদিন পর থেকেই তাদের সংসারে অশান্তি শুরু হয়। আর এই পরিণতি হয় সংসার ভাঙার মধ্য দিয়ে। ফেসবুকে প্রেম করে শিশু সন্তান-স্বামীকে ফেলে ঘর ছেড়েছেন মিরপুরের গৃহবধূ। এ নিয়ে থানা পুলিশও হয়। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ফেসবুকে গুজবসহ নানা কারণে মামলা হওয়ার নজির আছে। কিন্তু ফেসবুকে প্রেমের সূত্র ধরে সন্তান রেখে মায়ের চলে যাওয়ার ঘটনা সাধারণত শোনা যায় না বা মামলা হওয়ারও নজির কম। তিনি আরও জানান, ঢাকার পল্লবী থানা এলাকার বাসিন্দা চাকরিজীবী হাসান নামের এক ব্যক্তির ঢাকার সিএমএম আদালতে দায়ের করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে মিলেছে এমন তথ্য। মামলার অভিযোগে বাদীর দাবি, তার স্ত্রী ফেসবুকে আসক্ত ছিলেন। ফেসবুক থেকে এক ছাত্রের সঙ্গে প্রেম হয়। সেই প্রেমের সূত্র ধরেই তার স্ত্রী চার বছরের সন্তান রেখে বা কোনো প্ররোচনায় পড়ে প্রেমিকের সঙ্গে চলে গেছেন।

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা জানান, মামলার বাদী হাসান চাকরিজীবী। দাম্পত্য জীবন সুখেই কাটছিল। তাদের সংসারে আলভিরা জান্নাত মাফতুহা নামের চার বছরের কন্যা সন্তানও আছে। মৌ গৃহিণী। পাশাপাশি পল্লবীতে এসপিকেএস মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল সহকারী কোর্সে পড়াশোনা করছিলেন। স্বামী প্রযুক্তি বিষয়ে চাকরি করায় বাসায় ইন্টারনেট ছিল। মৌ ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকেই মোবাইল ফোনে ফেসবুক চালাতেন।

জানা গেছে, ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয় টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রাইম অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের মাস্টার্সের ছাত্র রফিকুল ইসলাম রফিকের সঙ্গে। ফেসবুকে পরিচয় থেকে প্রেম। প্রেম থেকে তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রফিক প্রায়ই টাঙ্গাইল থেকে পল্লবীতে যাতায়াত করতে থাকে। তারা পালিয়ে ঢাকার বিভিন্ন জায়গা ঘোরাফেরা ও অবৈধ মেলামেশা করতে থাকে। মৌ প্রায়ই প্রেমিকের টানে রফিকের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে থাকেন। ছোট সন্তানকে বাড়িতে রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল ফোন বন্ধ করে হদিসহীন থাকার ঘটনায় হাসান ও তার পরিবারের সন্দেহ বাড়তে থাকে। চলতি বছরের কয়েক মাসে কয়েক দিন করে মৌ হদিসহীন হয়ে পড়ে। এতে করে হাসানের পরিবারে ও মৌর পরিবারের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত স্বামী হাসান স্ত্রীর মোবাইল ফোন থেকে পাওয়া ছবি দেখে স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। বারবার সাবধান করার পরও এবং দুই পরিবারের তরফ থেকে বোঝানোর পরও মৌ তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে। চলতি বছর মৌ শিশু সন্তানকে ফাঁকি দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পরকীয়া প্রেমিক রফিককে বিয়ে করেন। এরপর অনেক দেনদরবারের পরও মৌকে ফেরানো সম্ভব না হলে চলতি বছরের জুনে হাসান স্ত্রীকে তালাক দেন।

মুঠোফোনে ইন্টারনেটের সুবাধে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সহজলভ্য হওয়ায় তরুণরা ঝুঁকছে নানা অপকর্মে। এমনকি পাশে স্ত্রীকে রেখে স্বামী অন্যের স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক যোগাযোগ করছে। পরকীয়ায় জড়াচ্ছে। এতে বাড়ছে দাম্পত্য কলহ। সুখ উড়াল দিচ্ছে জানালা দিয়ে। শুধু দম্পতি নয়, উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরাও প্রচুর সময় ব্যয় করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফেসবুক নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ছে বহু তরুণ। এভাবে দিনের পর দিন পার করায় নৈতিক মূল্যবোধ বিদায় নিচ্ছে তাদের মধ্য থেকে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, মানুষের নীতি-নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ নষ্ট হওয়ার কারণে পরকীয়া, খুন, হত্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্ক। অপসংস্কৃতি চর্চায় মানুষের চাহিদা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে স্বামী-স্ত্রীরা বিদ্যমান সম্পর্কের বাইরে গিয়ে অন্য মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করছে। এতে সোনালি সংসার ভেঙে যাচ্ছে। এর থেকে বের হয়ে আসার উপায় সম্পর্কে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সন্তানদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। সামাজিক মূল্যবোধ শেখাতে হবে। ইন্টারনেটের অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পাঠ্যবইয়ে নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003680944442749