বইয়ের বিকল্প প্রযুক্তি নয় - দৈনিকশিক্ষা

বইয়ের বিকল্প প্রযুক্তি নয়

তাইফুর রহমান মুন্না |

ইন্টারনেট বিশ্বের জন্য আশীর্বাদ এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেটভিত্তিক লেখাপড়া কতটুকু সঠিক তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

আগেকার দিনে বই ছিল শিক্ষার্থীদের নিত্যসঙ্গী। দিনরাত বইয়ের মাঝে পড়ে থাকা শিক্ষার্থীদের একটি সুন্দর অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু এখন বিশ্ব গেছে পাল্টে।

মাল্টিমিডিয়া ক্লাস, ইন্টারনেটভিত্তিক লেখাপড়া শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বই পড়ার অভ্যাস এখন নেই বললেই চলে। অনেক কিশোর-তরুণ ইন্টারনেটে পড়াশোনার ছলে নিম্নমানের ছবি দেখে সময় পার করছে।

প্রযুক্তিগত জ্ঞানার্জনের জন্য শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেয়া হচ্ছে। আর এ সুযোগ নিয়ে শিক্ষার্থীরা হয়ে উঠছে বেপরোয়া।

ভাবতে সত্যিই অবাক লাগে, আজকাল শিক্ষার্থীরা যতটুকু সময় মোবাইল তথা ইন্টারনেটে ব্যয় করে, তার তিনভাগের একভাগও বই পড়ার পেছনে ব্যয় করে না। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে বই পড়ার অভ্যাস। বইয়ের রূপ, রঙ ও ঘ্রাণও যেন আগের মতো নেই।
অনেক কিশোর শিক্ষার্থী স্কুল ফাঁকি দিয়ে মোবাইল ফোনে বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি তুলে নতুন নতুন ছবি আপলোডে ব্যস্ত থাকে। স্কুলে যাওয়ার অভ্যাস এখন আগের দিনগুলোর মতো লক্ষ করা যায় না।

প্রযুক্তিগত দিক থেকে বিবেচনা করলে বাংলাদেশ উন্নত হয়েছে ঠিকই; কিন্তু এ যুগের কিশোরদের মানবিক মূল্যবোধ বিকশিত হচ্ছে না। আগেকার যুগে স্কুলপড়ুয়া শিশু শিক্ষার্থীদের মনুষ্যত্ববোধ শেখানোর জন্য আদর্শলিপিসহ নানা বাল্যশিক্ষার বই পড়ানো হতো। এখন সেগুলো স্মৃতি।

আজকাল কিশোররা ব্যস্ত থাকে ইন্টারনেটভিত্তিক পড়াশোনায়। অনেক স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের বই পড়ায় ব্যাপক অমনোযোগ লক্ষ করা যায়।

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দেশের সব বিদ্যালয় ও কলেজে ধীরে ধীরে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস চালু হলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বই নিতে চাইবে না, হাতে থাকবে ল্যাপটপ।

তাহলে বই পড়া কি একেবারে উঠে যাবে? মনের মাঝে এ প্রশ্ন বারবার প্রকম্পিত হয়। পাঠাভ্যাস বা বই পড়ার অভ্যাস যদি প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বিলুপ্ত হয়, তাহলে তা সুখকর হবে না।

বইয়ের পাতায় শিক্ষা মনকে যেভাবে প্রশান্ত করতে পারে, ইন্টারনেটভিত্তিক শিক্ষা যতই সহজই হোক না কেন, বইয়ের মতো তা মনকে প্রশান্তি দিতে পারে না। আজকাল স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে গিয়ে বইয়ের নামও সঠিকভাবে লিখতে পারে না।

ফেসবুকে সময় পার করে অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষার আগের রাতে ইন্টারনেটে অবৈধভাবে প্রশ্ন বের করে মুখস্থ করে। সারা বছর বই না পড়ে পরীক্ষার আগের রাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ভালোভাবে মুখস্থ করে। ভবিষ্যতে এর ফল মোটেই সুখকর হবে না।
বইকে আজকাল শিক্ষার্থীরা সঙ্গী করে নিতে পারছে না। তারা ইন্টারনেটে যতটুকু সময় ব্যয় করছে, ততটুকু সময় বই পড়ায় মনোযোগী হলে তাদের মেধা অনেক বেশি বিকশিত হবে। অভিভাবকদের দেখতে হবে তাদের সন্তানরা যেন মোবাইলে আসক্ত না হয়। বই পড়াই হোক জ্ঞানার্জনের সঠিক পদ্ধতি। বই বাদ দিয়ে শুধু প্রযুক্তির মাধ্যমে জ্ঞানার্জনের ফল ভালো হতে পারে না। বইয়ের পাতায়ই খুঁজতে হবে মনুষ্যত্ববোধের শিক্ষা। বই হোক সবার নিত্যসঙ্গী। বই পড়ার অভ্যাস সব শিক্ষার্থীর প্রিয় অভ্যাসে পরিণত করতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।

লেখক: প্রাবন্ধিক, বাগেরহাট

সূত্র: যুগান্তর

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0066890716552734