বই পড়া, না পড়া - দৈনিকশিক্ষা

বই পড়া, না পড়া

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সারা বিশ্বেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। সেই হাওয়ায় আমাদের দীর্ঘদিনের গড়ে ওঠা সামাজিক ধারণাগুলোও পালটে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, তরুণদের একটা বড়ো অংশ বই পড়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম আর ইউটিউবের দুনিয়ায় বুঁদ হয়ে রয়েছেন তারা। জরিপে উঠে আসছে বই বিমুখতার নেতিবাচক সব চিত্র। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আসিফুর রহমান সাগর।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, অপরদিকে সমাজবিদরা বলছেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভিগমন এবং প্রভাব মানুষের মাঝে খুব দ্রুত পড়ে। মানুষও প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে এগিয়ে যায়। এই প্রভাবটা ভাষার ওপর এসেও পড়ে। পৃথিবীর পরিবর্তন খুব দ্রুত ঘটছে। চার দশক আগেও এ পরিবর্তন হতো ধীরে ধীরে। হারিকেন থেকে বিজলি বাতির পর্যায়ে পৌঁছাতে অনেক সময় লেগেছে। যেখান থেকে রেডিও এসেছে, সেখান থেকে টেলিভিশনের আবির্ভাবেও সময় লেগেছে অনেক। মানুষ প্রযুক্তির এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিত। এখন এটা খুব দ্রুত ও নানাভাবে ঘটছে। ফলে বই পড়ার দিকে এ সময়ের মানুষের আগ্রহ খানিকটা কম বলেই মনে হয়। এই প্রযুক্তির প্রভাব পাঠককে আলোড়িত করছে। একজন লেখক যত দ্রুত এই পরিবর্তনকে উপলব্ধি করতে পারবেন, পরিবর্তনকে বুঝে নিয়ে লিখতে পারবেন ততই তিনি সক্রিয় থাকবেন।

বেশ কয়েকটি জরিপ বলছে, বিশ্বজুড়েই তরুণদের মাঝে বই পড়ার প্রবণতা কমছে। তার পরেও এখনো প্রায় সব দেশেই মেয়েরা বই পড়ায় এগিয়ে। বাংলাদেশেও। তারপর ছেলেদের স্থান। সোশ্যাল মিডিয়া, গেম আর সেলিব্রেটি পেইজে ঘোরাঘুরি করে সময় কাটান তরুণরা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘দি কিডস অ্যান্ড ফ্যামিলি রিডিং রিপোর্ট’ বলছে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী ২৪ শতাংশ কিশোর-কিশোরী সপ্তাহে পাঁচ থেকে সাত দিন বই পড়ে। এই শতকরা হার আরো নিচে নেমে ১৭ শতাংশে এসে থেমেছে, যখন টিনএজারদের মাঝে জরিপ চালানো হয়েছে। ১৫ থেকে ১৭ বছরের কিশোরদের মাঝে জরিপ চালিয়ে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এবার দেখা যাক, এখনো যারা শিশু এবং যারা কয়েক বছরের মধ্যেই টিনএজার হবে—তাদের কী অবস্থা। ছয় থেকে আট বছরের শিশুদের মধ্যে ৪৮ শতাংশই সেল ফোনে অ্যাপসের মাধ্যমে গেম খেলে। আর ৩৪ শতাংশ ইউটিউব এ ভিডিও দেখে কাটায়।

তাহলে, বছরজুড়ে যে এত বই বের হচ্ছে এসব বই পড়ে কারা? জরিপ বলছে, মূলত সিনিয়র সিটিজেনরাই বেশি বই পড়েন। যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের গমনাগমন কম তাই তাদের কাছেই রয়েছে বইয়ের কদর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘আমেরিকান টাইম ইউজ সার্ভে’ এবং ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ারের দুটি জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

তবে, বাংলাদেশে পাঠক কমছে কি না—এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট জরিপ নেই। এমনও হতে পারে, প্রযুক্তির চাপে টিভি, মোবাইল, ইন্টারনেট প্রভৃতির ব্যবহারের কারণে মানুষের বই পড়ার প্রতি আগ্রহ কমছে। অন্যদিকে, প্রতি বছর বইমেলায় তো বই বিক্রি বাড়ছে। ফলে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। আরেকটি দিক হচ্ছে, গত ২০-২৫ বছরে নতুন কোনো লেখককে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেখা যায়নি। হুমায়ূন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হক এবং হরিশংকর জলদাসের পরে আর কোনো লেখককে সেভাবে উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে বরেণ্য লেখকরা বলছেন, পাঠকের যেমন লেখককে খুঁজে বের করার দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি এই মাথাচাড়া দিয়ে সবার নজরে পড়ার বিষয়টা লেখককেই ঘটাতে হয়। নতুন লেখক উঠে আসার এটাই প্যাটার্ন।

বাংলাদেশের প্রকাশকরা বলছেন, পাঠকের চাহিদা ভালো বই। আর ভালো বইয়ের জন্য ভালো লেখক প্রয়োজন। ভালো লেখক তারাই, যারা বাংলা সাহিত্যকে উঁচুমানে নিয়ে যাবেন। বাংলা ভাষার পাঠক শুধু বাংলাদেশে নেই, ভারতসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে। সেই পাঠকরা বিশ্বসাহিত্যের স্বাদ পাচ্ছেন। সেই বিশ্বসাহিত্যের পাঠকদের কাছে নবীন লেখকদেরও নিজেদের লেখা সাহিত্য মানের প্রমাণ রাখতে হবে। কিন্তু সেটা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।

প্রতি বছরই বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলায় মানুষের ভিড় বাড়ছে। বাড়ছে বই বিক্রির পরিমাণও। প্রতি বছরই রেকর্ড পরিমাণ বই প্রকাশিত হচ্ছে। বাড়ছে প্রকাশকও। এত প্রকাশককে মেলায় স্থান দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ছে। পুরো ফেব্রুয়ারি মাস সারাদেশের মানুষ এই বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাঙালিরা এসে জড়ো হন বইমেলার টানে। এটা নিঃসন্দেহে খুবই ইতিবাচক দিক। কিন্তু বিস্ময়কর হচ্ছে বইমেলার পরে সারা বছর দেশে আর কোনো নতুন বই প্রকাশিত হতে দেখা যায় না। প্রকাশকরাও কোনো ভালো পাণ্ডুলিপি পেলে তা প্রকাশ করেন না। জমিয়ে রাখেন বইমেলার প্রকাশের আশায়। ফলে আমাদের বই বিক্রিও অনেকটাই মৌসুমি বিক্রির মতো হয়ে গেছে। সারা বছর বই বিক্রি খুব একটা না থাকায় সারাদেশে বইয়ের পরিবেশনাও কোনো শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়নি আজও।

এ প্রসঙ্গে অন্যপ্রকাশ-এর প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জরিপের সঙ্গে আমাদের দেশের পরিস্থিতি মিলবে না। আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটটাই ভিন্ন। এখন যুগের যে হাওয়া তাতে ছেলেমেয়েরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় না দিয়ে সারা দিন বই নিয়ে বসে থাকবে—এটা কল্পনাও করা যায় না বরং বইকেও আর সবকিছুর সঙ্গেই স্থান দিচ্ছে তারা। দেখা যাচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে অবলম্বন করে তরুণ লেখকরা উঠে আসছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের লেখা পড়েই পাঠকরা কাউকে গ্রহণ করছেন কাউকে বাতিল করছেন।

দেখা যাচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে অবলম্বন করে বেশকিছু সাহিত্য পাঠের গ্রুপ গড়ে উঠেছে। সেখানে লাখ লাখ সদস্য। যেখানে কবি-সাহিত্যিকরা তাদের লেখা পোস্ট করেন। আর অনেকেই তাদের লেখার সমালোচনা করেন। এসব কিছুই ইতিবাচক। এমনকি বই প্রকাশনার সঙ্গে তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে।

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035319328308105