বগুড়ায় ধর্ষণের শিকার ছাত্রীকে নিরাপত্তার জন্য সরকারি সেফহোমে এবং তার নির্যাতিত মাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (৭ আগস্ট) সকালে মা-মেয়েকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর দুপুরের দিকে পুলিশ তাঁদের বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এবং শিশু আদালতের বিচারক ইমদাদুল হকের এজলাসে হাজির করে। এরপর নির্যাতিত মেয়েটি ও তার মায়ের নিরাপত্তার ব্যাপারে আদালতের সিদ্ধান্ত চায় পুলিশ।
বিকেলে এক আদেশে আদালত নির্যাতিত মেয়েটিকে রাজশাহী বিভাগীয় সরকারি সেফহোমে এবং মাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানোর জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন।
বগুড়া আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১–এর সরকারি প্রসিকিউটর নরেশ মুখার্জি আদালতের এ আদেশের তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান আবদুল মোত্তালেব হোসেন বলেন, মা-মেয়ে দুজনই শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ, তাই ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
মামলার তদন্ত-তদারক কর্মকর্তা ও বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, মা-মেয়ে বাসায় ফিরবেন, নাকি কোথায় যাবেন—সেই সিদ্ধান্ত জানতে দুপুরের দিকে শিশু আদালতের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মা-মেয়েকে হাজির করা হয়। আদালতের আদেশের পর বিকেলেই মেয়েকে রাজশাহী সেফহোমে এবং মাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের হওয়া দুই মামলায় বহিষ্কৃত শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার, তাঁর স্ত্রীর বড় বোন পৌর কাউন্সিলর মার্জিয়া আকতার ওরফে রুমকিসহ গ্রেপ্তার ১১ আসামি এখন কারাগারে।
এর মধ্যে গত রোববার দুই দিনের রিমান্ড শেষে তুফান ও রুমকিকে বগুড়ার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে হাজির করে আবার রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তা নামঞ্জুর করে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, তিন দফা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তুফান নির্যাতিত ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং নারী কাউন্সিলর রুমকি নির্যাতন ও চুল কেটে দেওয়ার কথা স্বীকার করেননি। তবে এ মামলায় তুফান সরকারের সহযোগী আতিক, মুন্না ও নাপিত জীবন রবিদাস ইতিমধ্যেই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত ১৭ জুলাই বিকেলে ওই ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন বগুড়ার শহর শ্রমিক লীগের নেতা তুফান সরকার। পরে তুফান সরকারের স্ত্রী আশা সরকার এবং তাঁর বড় বোন নারী কাউন্সিলর এবং তুফানের ক্যাডাররা ধর্ষণের শিকার মেয়েটি ও তার মায়ের ওপর নির্যাতন চালান। এরপর দুজনেরই মাথা ন্যাড়া করে দেন। এ ঘটনায় ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর মা বাদী হয়ে গত ২৮ জুলাই রাতে মামলা করেন।