‘ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত দুটো জায়গাকে আমার “ঘর” বলে জেনেছি। একটা ঢাকা, আরেকটা ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়। একটা অপ্রত্যাশিত, অসম্ভব দুঃখজনক ঘটনা আমার দুই ঘরকে এক করে দিল।’
ঢাকার গুলশানে ১ জুলাই জঙ্গি হামলায় নিহত ফারাজ আইয়াজ হোসেন আর অবিন্তা কবীর স্মরণে যুক্তরাষ্ট্রের ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে বলছিলেন সেখানকার প্রাক্তন ছাত্র, বাংলাদেশি তরুণ রিফাত মুরসালিন। যুক্তরাষ্ট্রে ফারাজ আর অবিন্তা দুজন প্রথমে অক্সফোর্ড কলেজে ও পরে ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক, স্টাফরা ৭ জুলাই এক হয়েছিলেন ইমোরির ক্যানন চ্যাপেল মিলনায়তনে। উপস্থিত শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ ফারাজ-অবিন্তার সঙ্গে ক্লাস করেছেন, কেউ ছিলেন কাছের বন্ধু। হারানো দুই সহপাঠীকে স্মরণ করে তাঁরা বলেছেন, দুজনের হাসিমুখই তাঁদের বড্ড চেনা ছিল!
তারিশির জন্য বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠীদের কান্নাতারিশি জৈনঅক্সফোর্ড কলেজে ফারাজ আর অবিন্তা দুজনেই স্টুডেন্ট অ্যাকটিভিটিস কমিটির (এসএসি) নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেদিনের অনুষ্ঠানে এসএসির প্রধান জোসেফ মুন কলেজটির প্রাক্তন ছাত্র চেজ জ্যাকসনের লেখা একটা চিঠি পড়ে শোনান। ফারাজ ও অবিন্তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন জ্যাকসন। তিনি লিখেছেন, ‘ফারাজ ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত নিতে জানত। কঠিন সময়ে অন্যদের সাহস দেওয়ার জন্য হলেও সে তার মুখে স্বভাবসুলভ হাসিটা ধরে রাখত। একই রকম হাস্যোজ্জ্বল ছিল অবিন্তাও। এসএসির যেকোনো সভায় তাদের প্রীতিপূর্ণ ব্যক্তিত্বের পরিচয় পেয়েছি।’ ইমোরির প্রেসিডেন্ট জেমস ওয়াগনার বলেন, ‘ফারাজ ও অবিন্তার পরিবারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। আমরা তাদের পাশে থাকব।’
রিফাত মুরসালিন সেদিন আরও বলেন, ‘ঢাকা থেকে আমার এক বন্ধু জানাল, সেদিনের ঘটনার পর থেকেই ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। আমার মনে হয় এটা স্রেফ বৃষ্টি না, সে রাতে আমরা যে প্রাণগুলো হারিয়েছি, তাদের শোকে আমার প্রিয় শহরের কান্না।’
শুধু ঢাকার আকাশে নয়, মেঘ জমেছে যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ভারতীয় তরুণী তারিশি জৈনর সহপাঠীদের মুখেও। ১ জুলাই হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর ঘটনায় তাঁরাও যে বন্ধুকে হারিয়েছেন। ৫ জুলাই তারিশির স্মরণে বার্কলির শিক্ষক, শিক্ষার্থী, স্টাফরা জড়ো হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্প্রাউল প্লাজায়। ফুল দিয়ে, কাগজে শোকবার্তা লিখে তাঁরা স্মরণ করেছেন বন্ধুকে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অ্যাট বার্কলির (আইএসএবি) সদস্য ছিলেন তারিশি। সংগঠনটির এক সদস্য জয় তাঁর স্মরণে বলেন, ‘আইএসএবি পরিবারের সবার সঙ্গেই তারিশির ভালো সম্পর্ক ছিল। তাই হয়তো আজ এখানে এত লোক জড়ো হয়েছে। আমরা সবাই জানি, সে দারুণ একজন মানুষ ছিল।’ কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারিশির কোনো কোনো বন্ধু। অনুষ্ঠানে বার্কলির উপাচার্য নিকোলাস ডির্কস বলেন, ‘কোনো শব্দ দিয়েই এই শোক বোঝানো সম্ভব না।’