বর্বরতার চরমে পৌঁছে গেছি আমরা। আমাদের সন্তানদের আমরা মানুষ হতে দিচ্ছি না। খুনি দানব তৈরি করছি। কী অপরাধ বুয়েটের আবরারের? দেশের সেরা মেধাবী ছাত্রদের একজন সে। তার বাবা-মা তিল তিল স্বপ্ন দেখেছিলেন। ছেলেটি ভালো লেখাপড়া করে, ভালো রেজাল্ট করে বুয়েটে জায়গা করে নিয়েছিল। বাবা-মায়ের বুকভরা স্বপ্নের সঙ্গে তার নিজের স্বপ্নও ছিল। স্বপ্নপূরণ হওয়ার আগেই সব শেষ! বুধবার (৯ অক্টোবর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও বলা হয়, স্বাধীন দেশে শিক্ষাঙ্গনে আর কত লাশ পড়বে? আর কত পিতা-মাতা সন্তানহারা হবে? বার বার কেন শিক্ষার্থীর রক্তে রঞ্জিত হবে পবিত্র শিক্ষাঙ্গন? মানুষ হওয়ার পরিবর্তে খুনি কেন হচ্ছে আমাদের সন্তানরা? এভাবে আর চলবে কতকাল? ফেসবুক একটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এটা উদ্ভাবনের পরই থেকেই এর পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথা হয়েছে। অনেকে এটা বন্ধ করে দিতেও বলেছেন। তাহলে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতিও বন্ধের যুক্তি অহেতুক কিছু নয়।
ফেসবুকে নিজের আইডিতে যে যার যার মতো করে লিখবে, মন্তব্য করবে- এটাই স্বাভাবিক। অনেকেই দেখি এতে মাতব্বরি করেন; এটা ঠিক না। আপনার বিরুদ্ধে লিখলে আপনিও প্রতিবাদ করুন। মন্তব্য কলামে আপনার অভিব্যক্তি তুলে ধরুন।
এ ছাড়াও প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নিতে পারেন। তা না করে একেবারে পিটিয়ে হত্যা। অপকর্ম করে এখন আর কেউ ছাড় পাচ্ছে না। হামবড়া ভাব ছাড়তে হবে। সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে। সমালোচনা থেকে আত্মশুদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে হবে।
ছাত্রলীগ যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে; এটা কারও অজানা নয়। কিছু শিক্ষার্থীকে অন্যায় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ক্যাডার বানিয়ে বাকিদের ওপর নির্যাতন চালানোর সংগঠনে পরিণত হয়েছে ছাত্রলীগ। বলা যায়, সারা দেশে এরাই এখন ক্ষমতার প্রধান ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী।
অপরাধ করার ক্ষমতাই তাদের যোগ্যতার প্রধান মাপকাঠি। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অন্তর্দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষ, ছাত্রী হয়রানি, ধর্ষণ, প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতি না মানা, হলের সিট দখল করে রাখা, শিক্ষকদের ওপর চড়াও হওয়া ইত্যাদি থেকে শুরু করে এমন কোনো অপকর্ম নেই, যাতে ছাত্রলীগ জড়ায়নি।
ছাত্রলীগের এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ না হলে ছাত্র রাজনীতি তো বটেই, জাতীয় রাজনীতিসহ সমাজকেও চরম মূল্য দিতে হবে। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বুঝতে হবে, পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ, দুর্নীতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি ছাত্রলীগকে বেপরোয়া করে তুলছে। ভবিষ্যতে তাদের দ্বারা বড় বিপর্যয় ঘটার আগেই রাশ টেনে ধরা উচিত।
নজরুল ইসলাম লিখন : সাংবাদিক