দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে এক হাজার ৯৩০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বরাদ্দ থেকে ১৯৩ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগকে এককভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল দুই হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটের যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল এক হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আগামী অর্থবছরে এই বাজেট বরাদ্দের ঘোষণা করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
২০১৯-২০ অর্থবছরে টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন ও সুরক্ষায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে তিন হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছন অর্থমন্ত্রী। এই বরাদ্দ গত অর্থবছর থেকে ৬২১ কোটি টাকা বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সংশোধিত বাজেটে দুই হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা পেয়েছিল। আর সে অর্থবছরে বিভাগটিতে বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল তিন হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়েরও বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে:
এবার বাজেটে দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ১৬ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। যা গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে চার হাজার ৩৮ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরে মন্ত্রণালয়টির সংশোধিত বাজেট ছিল ১২ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা।
স্মার্টফোনের আমদানি শুল্ক বাড়ছে:
স্মার্টফোনের আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন বাজেটে। আগে এই শুল্ক ছিল ১০ শতাংশ। এর ফলে দেশে আমদানি করা স্মার্টফোনের দাম বেশ বেড়ে যাবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে বলা হয়, স্মার্টফোন সমাজের বিত্তবান লোকজন ব্যবহার করে বলে এর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা । এতে বলা হয়েছে ফিচার ফোন নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠি ব্যবহার করে। বর্তমানে ফিচার ফোনের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ, যা অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। আইসিটি খাতের অন্যতম অনুষঙ্গ সেলুলার ফোন উৎপাদন ও সংযোজনে রেয়াতি সুবিধার কারণে দেশে এর ৫-৬টি কারখানা স্থাপিত হয়েছে উল্লেখ করে এবারের বাজেটে সেই সুবিধা রেখে সেলুলার ফোন উৎপাদনে কিছু যংন্ত্রাংশ আমদানির শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
মোবাইল অপারেটরদের সর্বনিম্ন কর বাড়বে:
মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর ন্যূনতম কর বাড়িয়ে ২ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সাধারণত কোনো কোম্পানি মুনাফা করলে সেই মুনাফার ওপরে এই কর্পোরেট কর দিতে হয়। দেশে খাতভিত্তিক অনেকগুলো কর্পোরেট কর রয়েছে। সেখানে মোবাইল অপারেটরগুলোর ক্ষেত্রে পাবলিকলি ট্রেড কোম্পানি হলে ৪০ এবং নন পাবলিকলি হলে ৪৫ শতাংশ কর দিতে হয়। এখনো মোবাইল অপারেটরগুলোর ক্ষেত্রে কোনো কোম্পানি মুনাফা না করলেও মোট আয়ের উপর সর্বনিম্ন একটি কর রয়েছে। সেটি আগে ছিল পৌনে এক শতাংশ আর এখন প্রস্তাব করা হলো ২ শতাংশের। তার মানে একটি কোম্পানি লসের মধ্যে থাকলেও এই হারে কর দিতে হবে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে আইসিটির বিভিন্ন ব্যবহার প্রস্তাব রাখা হয়েছে বাজেটে। এর মধ্যে রয়েছে ‘আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাথমিত শিক্ষার ক্যাপাসিটি উন্নয়ন সাধনকরণ, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘ডিজিটাল প্রাথমিক শিক্ষা’ শীর্ষক একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ’।
১২৫টি উপজেলায় ইতোমধ্যেই ‘আইসিটি টেইনিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার’ তৈরি করা হয়েছে। বাজেটে আরও ১৬০টি উপজেলায় সেটি সমপ্রসারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
দেশের নিম্ন আদালতে ‘বিচারাধীন মামলার বর্তমান অবস্থা, শুনানির তারিখ, ফলাফল ও পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়মিতভাবে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে বাজেট বক্তৃতায়।
সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থাপনা এবং পেনশন ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে। সঞ্চয়পত্র ক্রয়-বিক্রয় ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের উদ্দেশ্যে অর্থ বিভাগের উদ্যোগে জাতীয় সঞ্চয়স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালুর মাধ্যমে জাতীয় সঞ্চয়স্কিমের মাধ্যমে বিক্রয়, মুনাফা, নগদায়ন ইত্যাদি বিষয়ে প্রকৃত সময়ে তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে।