বগুড়ায় বেড়ে চলেছে অনুমোদনহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। সেইসঙ্গে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য। এ পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে কোচিং বন্ধ
করতে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে ৬৩টি স্কুলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিভিন্ন ভবনে তিন থেকে চার রুমের ফ্ল্যাট ভাড়া করে পরিচালনা করছে কিন্ডারগার্টেন স্কুল। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান আবার কিন্ডারগার্টেনের পাশাপাশি চালাচ্ছে কোচিং সেন্টার।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসেন আলী বলেন, যে সব প্রতিষ্ঠান অনুমোদন নেয়নি তাদের অনুমোদন নিতে বলা হয়েছে। নিয়ম না মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও কোচিং বাণিজ্য রোধে তৎপরতা চলছে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, জেলায় ২২টি অনুমোদনহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর অনুমোদনহীন মাদ্রাসা রয়েছে ২৩টি।
সদরে অনুমোদনহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য রয়েছে_ ফেমাস পাবলিক স্কুল, ভাইবোন কিন্ডারগার্টেন স্কুল, সানলিট স্কুল, রাবেয়া মেমোরিয়াল কেজি হাই স্কুল, একে আজাদ স্কুল ও কলেজ, কেমব্রিজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কেমব্রিজ প্রি-ক্যাডেট হাই স্কুল, স্ট্যাডি পয়েন্ট পাবলিক স্কুল, বগুড়া বিজ্ঞান স্কুল, দি মুন লাইট কেজি অ্যান্ড হাই স্কুল, সানমুন কেজি অ্যান্ড হাই স্কুল, ছোটকুমিরা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইউনিক পাবলিক স্কুল, নিউ হলিক্রস পাবলিক স্কুল, চয়েস মাল্টিমিডিয়া স্কুল, নলেজ প্লাস স্কুল, শাহিন স্কুল, পথ পাবলিক স্কুল, ন্যাশনাল একাডেমি, রাজিয়া হাবিব কেজি অ্যান্ড হাই স্কুল, ওমর ফারুক একাডেমি, স্কুল অব দ্য হলি কোরআন, নিউ মডেল স্কুল, ইনডিপেনডেন্ট স্কুল ও কলেজ এবং আবদুর রহমান পাবলিক স্কুল। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একে আজাদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাথমিক শাখার অনুমোদন পেয়েছে।
ইনডিপেনডেন্ট স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান খুব দ্রুত সময়ের
মধ্যে কলেজ শাখাসহ অনুমোদন পাবে বলে আশা করছেন তিনি।
অনুমোদনহীন মাদ্রাসার মধ্যে রয়েছে_ ফয়জুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা, বগুড়া ক্যাডেট ইন্টা. মাদ্রাসা, দারুল হিকমা ক্যাডেট মাদ্রাসা, দারুল ইহসান ইন্টারন্যাল মাদ্রাসা, তামিরুল উম্মা ইন্টা. ক্যাডেট মাদ্রাসা, রিয়াজুল জান্নাত ক্যাডেট মাদ্রাসা, ময়েজ উদ্দিন ক্যাডেট মাদ্রাসা, জান্নাতুল আফজাল ক্যাডেট মাদ্রাসা, দারুল কোরআন একাডেমি, চকফরিদ আজিজিয়া স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসা, জামিলনগর ক্যাডেট মাদ্রাসা, শহীদ মেহেরুল্লা এবতেদায়ি মাদ্রাসা, আল রাজী ইন্টা. ক্যাডেট মাদ্রাসা, বেলগাড়ী চকদুর্গা এবতেদায়ি মাদ্রাসা, ইকরা কেজি মাদ্রাসা, মিফতাউল উলুম মাদ্রাসা, আল আরাবিয়াতুস সালাফিয়া মাদ্রাসা, কালশিমাটি এবতেদায়ি মাদ্রাসা, হযরত শাহজালাল ইন্টা. ক্যাডেট মাদ্রাসা, দারুল হুদা ক্যাডেট মাদ্রাসা, গোবরধনপুর স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসা, দশটিকা হাজি ইয়াছিন এবতেদায়ি মাদ্রাসা এবং বাহার উদ্দিন এবতেদায়ি মাদ্রাসা।
সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম মাহমুদ মোর্শেদ জানান, অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনেকে অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে। যারা শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হবে তারা অনুমোদন পাবে না।
কোচিং বাণিজ্য :শহরের সরকারি দুটি বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং করতে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয় ইউনিক পাবলিক স্কুল নামে একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে। এটি কোচিং সেন্টার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও এখন চলছে স্কুলের নামে। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ওই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কোচিং করছে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী।
ইউনিকের মতো সমানগতিতে চলছে ভাইবোন কোচিং সেন্টার। এখানে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তির কোচিং করানো হয়। জলেশ্বরীতলায় ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ওই কোচিং সেন্টারের মালিকানায় আছেন জেলার সুখানপুকুর শিহিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বকর। অভিযোগ রয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো সম্প্রতি স্কুল নাম দিলেও অন্তরালে চলছে কোচিং বাণিজ্য। ভাইবোন কোচিং সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আবু বকর জানান, তার ছয় ভাইবোন প্রতিষ্ঠানটি চালান, তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত নন।
এদিকে স্কুলে স্কুলে কোচিং নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার গোপাল চন্দ্র সাহা বলেন, জেলার যে মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে কোচিং করানো হচ্ছে তেমন ৬৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কোচিং বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোচিং বন্ধ না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।