বড় শ্রেণিকক্ষের চ্যালেঞ্জসমূহ যেভাবে মোকাবেলা করবেন - দৈনিকশিক্ষা

বড় শ্রেণিকক্ষের চ্যালেঞ্জসমূহ যেভাবে মোকাবেলা করবেন

মাছুম বিল্লাহ |

আমরা কতজন শিক্ষার্থীর ক্লাসকে বড় ক্লাস বলব? ২০ জনের না ২৫ জনের না ৪০ বা ততোধিক শিক্ষার্থীর ক্লাসকে বড় ক্লাস বলব? ইউরোপ আমেরিকার একটি ক্লাসে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি ক্লাস সাধারন ক্লাস। এশিয়া, আফ্রিকার একটি ক্লাসে ৪০জন শিক্ষার্থীর ক্লাস কমই দেখা যায়। আমাদের দেশে আদর্শ বা বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৪০ জন শিক্ষার্থী দেখা যায়। এর বাইরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৮০,১০০ এবং ১০০এর অধিক শিক্ষার্থী নিয়েই আমাদের মাধ্যমিক ও উচচ মাধ্যমিক ক্লাসসমূহ।এত বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীদের ক্লাসে একজন শিক্ষককে অনেক ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। যেমন

(ক) ক্লাসরুম ব্যবস্থাপনায় একটি বড় সমস্যা হয়।শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দেওয়া, সবার দিকে দৃষ্টি দেওয়া, শ্রেণির শৃংখলা রক্ষা করা, শিক্ষার্থীদের গ্রুপে বসানো ও কাজ করানো বড় ক্লাসে একটি বিরাট সমস্যা। কোন বিষয়ের ব্যাখ্যা প্রদান করার সময়, সবাই বুঝেছে কিনা তা ঠিকমতো যাচাই করা সম্ভব হয়না, যদিও একটি সফল ক্লাসে এ ধরনের যাচাই করাটা একটি বড় শর্ত।

(খ)পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই শিক্ষার্থীদের আগ্রহ পরীক্ষায় কি কি আসবে সেগুলো নিয়ে। শিক্ষকগনও সেসব বিষয়ে জোর দিয়ে থাকেন। শ্রেণিকক্ষের মধ্যেই ক্লাসটেস্ট, সারপ্রাইজ টেস্ট, সাপ্তাহিক কিংবা মাসিক পরীক্ষা গ্রহন করা হয়। বড় ক্লাসে পরীক্ষাগুলো নিতে, পরীক্ষার খাতা দেখার পর ফিডব্যাক দিতে খুবই সমস্যা হয়।

(গ) ইংরেজি ক্লাসে স্বভাবতই ইংরেজি বলা ও লেখার কাজ করাতে হয় একজন শিক্ষককে যা একটি বড় ক্লাসে কোনভাবেই সম্ভব নয়। এতবড় ক্লাসে লাজুক শিক্ষার্থীরা কথা বলতে চায়না, শিক্ষকেরও সময় ও স্পেস নেই যে, তাদের লজ্জা ভেঙ্গে দিবে এবং শ্রেণিকাজে অংশগ্রহন করাবে। তাদেরকে পীড়াপিড়ি করতে করতে ক্লাসে হৈ চৈ শুরু হয়ে যাবে, গোলমাল লেগে যাবে যা নিয়ন্ত্রণ করা একজন শিক্ষকের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। আর নিয়ন্ত্রণ করতে করতে আসল কাজ অর্থাৎ টিচিং-লার্নিং বিষয়টি তখন গৌণ হয়ে পড়ে।

(ঘ) শিক্ষার্থীরা ভুল করে করে কোন কিছু শেখে। তারা ভুল করে শিক্ষক চমৎকারভাবে ফিডব্যাক দেন, তারা আবার বলে ও করে, ফলে ইংরেজি ভাষাটি তারা জেনে যায়, আয়ত্ব করে ফেলে। কিন্তু এতবড় ক্লাসে ফিডব্যাক দেওয়া একটি কঠিন কাজ।সরকারি, বেসরকারি, প্রাতিষ্ঠানিক অপ্রাতিষ্ঠানিক সব ধরনের প্রশিক্ষণেই দেখা যায় একটি আদর্শ ক্লাস অনুযায়ী প্রশিক্ষনরুম সাজানো হয়। শিক্ষকদের প্রশিক্ষন প্রদান করা হয় সেই আদর্শ ও সাজানো রুমে, বাস্তবের সাথে যার কোন মিল নেই। তাই প্রশিক্ষন চলছে, শিক্ষকগন দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বার বার প্রশিক্ষণ নিচেছন কিন্তু শ্রেণিকক্ষে সেগুলোর কোন প্রয়োগ নেই, রিফ্লেকশন নেই। এ বিষয় নিয়ে, বাস্তব ক্ষেত্র নিয়ে উপযুক্ত গবেষণা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ইনিষ্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে দেখেছি তাদেরও যে পড়া ও প্রশিক্ষন সবই আদর্শ শ্রেণিকক্ষ নিয়ে। আমাদের শহর, গ্রাম গঞ্জের বিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে যে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থী বসানো হচেছ, পড়ানোর বা কাজ করানোর মতো পরিবেশ ও স্থান নেই ক্লাসে সেগুলো নিয়ে ইনোভেটিভ কোন ধারনা, গবেষণা ও বাস্তবে একজন করে এসে সেটি প্রশিক্ষার্ণীদের দেখানো হলে সেই প্রশিক্ষন বাস্তবধর্মী হতো, কাজে লাগত।

এ ধরনের প্রচেষ্টা কোন প্রশিক্ষনেই সাধারনত নেওয়া হয়না। সভা সেমিনারে এসব কথা উঠলে, প্রশ্ন আসলে শুধু কর্তৃপক্ষ ও সরকারকে দায়ী করা ছাড়া আর তেমন কোন সদুত্তর নেই। আসলে এটিতো আমাদের বাস্তবতা। এটি নিয়ে শুধু দোষারপ করলে হবেনা। দায় অন্যের ঘাড়ে চাপালে হবেনা। আমাদের দেশ ইউরোপ , আমেরিকা বা অষ্ট্রেলিয়া মহাদেশের কোন দেশ নয়। এটি বাংলাদেশ, এটি দক্ষিণ এশিয়ার জনবহুল দেশ। এখানকার শ্রেণিকক্ষ এদেশের মতোই হবে। গবেষক, শিক্ষকদের কাজ হচেছ এখানকার বাস্তবতা নিয়ে গবেষণা করা, পথ বের করা এবং সবাইকে জানানো। উন্নত বিশ্বের এক গবেষক কি বলেছেন, তিনি কি গবেষণা করেছেন সেটি সব সময় শুনিয়ে বা রেফারেন্স দিয়ে আমাদের বড় শ্রেণিকক্ষের সমস্যার সমাধান হবেনা। উন্নত বিশ্বের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে পিস্তল নিয়ে আসে, জন্ম নিয়ন্ত্রনের সরঞ্জামাদি নিয়ে আসে, শিক্ষকদের নাম ধরে ডাকে, তারা ছেলে মেয়ে অবাধে মেলামেশা করে, তারা গুরুত্বপূর্ন কোন পরীক্ষায় অংশগ্রন না করলেও শিক্ষক কিংবা স্কুল তাদের কিছূ বলতে পারবেনা,বলেওনা।শিক্ষক তো দুরের কথা, বাবা-মাও তাদের সাথে রাগ করে কোন কথা বলতে পারবেনা।

সঙ্গে সঙ্গে তারা কোর্টে যাবে, বাবা-মাকে পুলিশ অ্যারেস্ট করবে, তাদের বিচার করা হবে কেন তারা ব্যক্তি স¦াধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে। আমাদের সংস্কৃতিতে ,এগুলোর কোনটিই কি খাপ খায়? অথচ আমরা ঐসব গবেষনা নিয়েই আছি , ডিগ্রী নিয়ে আসছি, ডিগ্রীর বলে পদ দখল করছি আর আমাদের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে যাচেছ, পিছিয়ে যাচেছ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা।
বড় ক্লাসরুমে ইংরেজি পড়ানোর ওপর খুব একটি গবেষণা হয়নি।অথচ বড় ক্লাস বিভিন্ন অবস্থায়, বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা নিয়ে হাজির হয়। বিষয়টি খুবই গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে যে, আমরা বিষয়টি নিয়ে শুধু ইউরোপ আমেরিকা থেকে আগত ইংরেজি ভাষা শেখানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকব না। কারণ এসব দেশের শ্রেণিকক্ষ আমাদের দেশের শ্রেণিকক্ষ থেকে সম্পূর্ন আলাদা। বড় ক্লাসে ভাষা পড়ানোর সময় এবিএল বা অ্যাক্টিভিটি বেজড লার্ণিং ভারতে ব্যবহার করা হচেছ এবং তাতে কাজ দিচেছ।

এই এবিএল পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থী তার নিজের গতিতে শিখছে। নির্দিষ্ট কিছু কাজ করছে এবং প্রতিটি ইউনিটের শেষে স্ব-মূল্যায়ণ করা হচেছ। শিক্ষক ক্লাসে আলাদা আলাদা কিংবা ছোট গ্রুপে শিক্ষার্থীদের সাথে মত বিনিময় করছেন, সহায়তা করছেন, দেখছেন, ফিডব্যাক দিচেছন। এখানে মেশানো শিক্ষার্থী অর্থাৎ দুর্বল, মাঝারী ও সবল সব ধরনের শিক্ষার্থীই একটি ক্লাসে শেখার সুযোগ পায়। শিক্ষার্থীরা এখানে স্বাধীনতাও ভোগ করছে , ফলে শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ অনেকটাই কমে যায় যা শিক্ষকের জন্য বেশ হালকাই হয়। আমরা জানি শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শ্রেণিকক্ষ গত তিরিশ বছর যাবত ভাল ফল দিয়ে আসছে, তবে এটিও সত্য যে, সুন্দরভাবে সাজিয়ে মাঝে মাঝে এ ধরনের শিক্ষক সহায়ক অর্থাৎ শিক্ষক খুব অ্যাকটিভ এবং নিয়ন্ত্রণে রাখেন শ্রেণিকক্ষ এই ধরনের বড় ক্লাসে যা কম ফলপ্রসূ নয়।এটি প্রধান শিক্ষণ এবং ভাষা শিক্ষণ দুই ধরনের শ্রেণিকক্ষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ।

এখানে ’থিংক, পেয়ার এ্যান্ড শেয়ার’ মডেল ও কার্যকরী। এক্ষত্রে শিক্ষক গুরুত্বপূর্ন একটি প্রশ্ন করেন যার উত্তর একজন ভাল শিক্ষার্থী দিয়ে থাকে তবে শিক্ষক সরাসারি সায় না দিয়ে বলেন তোমরা আরও একটু চিন্তা কর, তোমার পাশের ক্লাসমেটের সাথে আলাপ কর এবং অন্য আর একজন শিক্ষার্থীকে পুরো ক্লাসে বিষয়টি শেয়ার করতে বলেন। এর ফলে দুর্বল শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহন করতে পারে, তাদের ভাষা প্রাকটিস করার সুযোগ থাকে।এভাবে দুর্বল , পিছিয়ে পড়া, লাজুক সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহনই করানো যায় ধীরে ধীরে।
গ্রামার ট্রান্সস্লেশন মেথড-কে বিংশ শতাব্দীর একটি বিরাট সময় জুড়ে অবজ্ঞা করা হয়েছে, ঐ সময়েই অনেক দেশে বিষয়টি বড় শ্রেণিকক্ষে ব্যবহৃত হয়েছে এবং তাতে ভাল ফল পাওয়া গেছে। অতএব বিষয়টিতে অর্থাৎ গ্রামার ট্রান্সস্লেশন মেথড আবার জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে বিশেষ করে এসব বড় বড় শ্রেণিকক্ষসম্বলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।এসব বড় বড় ক্লাসে ইংরেজির শিক্ষক মাতৃভাষা ব্যবহার করেন দুটে কারণে একটি হচেছ সব ধরনের শিক্ষার্থী এখানে আছে, দ্বিতীয়ত অ্যাক্টিভ শিক্ষার্থীরা সেটিকে ইংরেজি করছে, দুর্বলরা শুনছে। পরে তাদের আবার সুযোগ দেয়া হচেছ।

আবার শিক্ষক একটি অনুচেছদ, একটি টেকস্ট পড়ছেন সেটির বাংলা বলছেন কিংবা সবল শিক্ষার্থীদের বলতে বলছেন। তারা বলছেন এবং দুর্বল শিক্ষার্থীরা তা শুনছে। তারা আবার তাদের মতো ব্যাখ্যা করছে। এরপর অন্য আর একদল ভাল শিক্ষার্থী তারা আবার ইংরেজিতে বলছে। এভাবে সবাই অংশগ্রহন করার সুযোগ পাচেছ। তাছাড়া বিষয়টি ভালভাবে বুঝছে এবং দুধরনের ল্যাংগুয়েজ প্রাকটিস করার সুযোগ পাচেছ। এতে দুর্বল শিক্ষার্থীদেরও কনফিডেন্স লেভেল বেড়ে যায় ধীরে ধীরে।

অধিকাংশ শিক্ষকই এটির সাথে একমত যে, মুষ্টিমেয় সংখ্যক শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করা অনেক সহজ, আনন্দদায়ক, মানসিকচাপমুক্ত এবং কম সময়ের বিষয়। শিক্ষক যা করাতে চান তা সহজেই করাতে পারেন। কিন্তু বাজেট স্বল্পতা, উপযুক্ত বেশি সংখ্যক শ্রেণিকক্ষের অভাবসহ বাস্তব কিছু কারণে এ ধরনের একটি ক্লাস উপহার দেয়া বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই সম্ভব হয়না আমাদের দেশে। একটি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষকে তাই মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি লেকচার হল। আমি যখন ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজে শিক্ষকতা শুরু করি তখন আমাকে ইংরেজি পড়াতে হতো কলা, মানবিক ও বিজ্ঞান বিভাগের সকল শিক্ষার্থীদের একটি বিশাল রুমে আর্থৎ দেড়শ থেকে দু’শ শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে হতো। এতো বিশাল ক্লাস কিভাবে ম্যানেজ করতে হয় সে বিষয়ে আমার তো কোন প্রশিক্ষণ বা গাইড ছিলনা।

কিন্তু বাংলা ও ইংরেজি দুটো ক্লাসই এভাবে হতো প্রায় কলেজেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে জাহাঙ্গীরনগুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম । এটি দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে আলাদা। পুরোপুরি আবাসিক এবং একটি শ্রেণিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো। আমাদের ইংরেজি বিভাগে সিট ছিল ২৩ টি ( ১৬টি ছেলেদের এবং ৭টি মেয়েদের)। সেখান থেকে এসে হঠাৎ দুশো শিক্ষার্থীর ক্লাস করা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল। শিক্ষার্থীরা তাদের গ্রুপের ক্লাস শেষ করে যখন ইংরেজি ক্লাসে ঢুকতো তখন স্বভাবতই কথাবার্তা ও হৈ চৈ হতো। তরুণ বয়সে শিক্ষার্থীরা এটি করবেই। তাছাড়া এক কাজ থেকে অন্যকাজে, একক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে, এক রুম থেকে অন্য রুমে যখন তারা যাচেছ তখন কথা তো বলবেই।

বিভিন্নভাবে চিৎকার করে, ইংরেজি বলে, বাংলা বলে, কিছুটা ধমক দিয়ে ক্লাস ম্যানেজ করার চেষ্টা করতাম কিন্তু প্রতিদিনই যে, খুব ফলপ্রসূ হতো তা কিন্তু নয়। যাই হোক, পরে প্রতি গ্রুপেই আলাদা ইংরেজি ক্লাস হতো। সেটি বেশ ভাল ছিল অর্থাৎ ৫০–৬০ জনের ক্লাস সেটি তো ম্যানেজ করাই যায়। এরপর যখন ক্যাডেট কলেজে ঢুকলাম তখন তো দেখলাম একটি শ্রেণি দুই ফর্মে বিভক্ত এবং প্রতিটি ফর্মে ২৫ জন করে শিক্ষার্থী। এটি হচেছ প্রকৃত আদর্শ ক্লাস। কিন্তু এই ধরনের ক্লাস কি আমরা সর্বত্র আশা করতে পারি? নিশ্চয়ই না।

আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে সেই ১০০ থেকে ১৮০জন শিক্ষার্থীর ক্লাস কিভাবে ফলপ্রসূ করা যায়। কারণ এটি আমাাদের বাস্তবতা, এটি আমাদের প্রকৃত চিত্র।আমাদের গবেষণা , আমাদের চিন্তা, আমাদের প্রশিক্ষন এই বিশালাকৃতির শ্রেণিকক্ষনিয়েই করতে হবে , তাহলেই স্বার্থক হবে আমাদের গবেষণা, চিন্তা ও প্রশিক্ষন।এখানে কয়েকটি বিষয় কিন্তু লক্ষণীয় যে, বড় ক্লাসে এক ধরনের মজাও আছে। আপনাকে সব সময় ব্যস্ত, উত্তেজিত, আনন্দিত থাকতে হচেছ এ ক্লাসে। এগুলো চ্যালেঞ্জ , তারপরেও এখানে মজা করার বিষয় আছে। আপনি শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে ব্যস্ত থাকছেন অর্থাৎ আপনার সমস্ত ইন্টারনাল ও এক্সটারনাল অর্গানগুলো সক্রিয় থাকছে যা শরীরের জন্য ভাল।

পঞ্চাশ কিংবা একঘন্টার ক্লাস কিভাবে চলে যাবে আপনি টেরও পাবেন না কারণ বিভিন্ন কাজ, অনেকের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রশ্ন করবে, মজা করে কিছু জিজ্ঞেস করবে, হাসানোর জন্য দু’ একজন কিছু বলবে, কৌতুক করবে এই করে করে আপনার ঘড়ির দিকে তাকানোর আর সময় থাকেনা। ক্লাস কিন্তু শেষ। ধীরে ধীরে বড় ক্লাসে অভ্যস্ত হতে পারা এক ধররেন স্কীল ।

এখানে আর একটি সুযোগ থাকে। কোন শিক্ষার্থী একটি প্রশ্ন করলো, আপনি অনেকের মধ্যে বলতে পারেন বিষয়টি নিয়ে আর কে কি বলতে চাও। কারুর না কারুর এর উত্তর কিংবা কাছাকাছি উত্তর জানা আছে। এভাবে অনেককে অংশগ্রহন করাতে পারেন এবং আপনি নিজে না বলে , নিজে স্ট্রেচ না নিয়ে অন্যকে দিয়ে বলাতে পারেন। বড় ক্লাসে একটি নোটবুক কি!বা ডায়েরী ব্যবহার করতে পারেন। মনিটরিং করার সময় লিখে রাখুন। সাধারন ভুল বা ফিডব্যাক দেয়ার জন্য সাধারন পয়েন্টগুলো লিখে রাখুন।সবার উদ্দেশ্যে সাধারনভাবে ফিডব্যাক দিন।

শ্রেণিকক্ষটিকে কয়েকটি টিমে ভাগ করুন। মজার কিছু করতে দিন। অতিরিক্ত কিছু অ্যাক্টিভিটি প্রস্তুত রাখুন যাতে একটি শেষ হয়ে গেলে কিংবা শিক্ষার্থীদের ভাল না লাগলে বা তাদের নিয়োজিত করতে না পারলে অন্য আর একটি যাতে ব্যবহার করতে পারেন।একটি সংকেত আবিষ্কার করুন যা দ্বারা তারা শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে আপনি কখন থামতে বলছেন, কখন শুরু করতে বলছেন ইত্যাদি।
একটি প্যাসেজ বাছাই করতে পারেন। শিক্ষার্থীদের বলুন যে, আপনি এটি পড়বেন, তারা শুনবে। কয়েকবার পড়ার পর তারা উত্তর দিবে। এতে যতক্ষন আপনি পড়বেন ততক্ষন তারা মন দিয়ে শুনবে, ক্লাস নীরব থাকবে। যখন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবেন তখনও যাকে বা যে গ্রুপকে প্রশ্ন করা হয়েছে বাকীরা শুনবে চুপ করে। এটি একটি টেকনিক।

আবার এটিও করতে পারেন যে, আপনি যা বলেছেন তা থেকে তারা যা বুঝেছে তা লিখবে। লেখার পর ধারণাগুলো হয় পেয়ারের সাথে কিংবা অন্য গ্রুপের সাথে শেয়ার করবে। এতে আপনি রিলাক্স অনুভব করবেন, তারাই ব্যস্ত থাকবে, কাজে নিয়োজিত থাকবে। এক্ষেত্রে প্যাসেজ পড়ার আগে সেটির ওপর কয়েকটি প্রশ্ন বোর্ডে লিখতে পারেন যাতে আপনার পড়া শুনে তারা উত্তরগুলো বের করতে পারে। এতে তারা একটু বেশি মনোযোগী হবে কারণ শ্রবণ করার সময় প্রশ্নগুলোর উত্তর তারা খুঁজবে অর্থাৎ মন দিয়ে শুনবে।
’কোরাল ড্রিল’ বড় ক্লাসে মাঝে মাঝে কাজে লাগতে পারে। এতে শব্দের উচচারণ শিখতে এবং একই শব্দ বা বিষয় বার বর শুনে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা মনে রাখতে পারে। এক্ষেত্রে আমরা চীনের লি ইয়াংএর ’ ক্র্যাজি ইংলিশ’ পদ্ধতির কথা বলতে পারি। এটি চীনে ইংরেজি শেখার একটি পদ্ধতি। এতে বিশ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী একইসাথে ইংরেজি শেখে। এই পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ন এক্্রারসাইজ হচেছ ’ কোরাল ড্রিল’।তিনি বলেন, তার পর পরই তার শিক্ষার্থীরা সেগুলো উচচারণ করেন। শিক্ষাথীদের দুই তিন চার কিংবা পাঁচবার করান।

লেখক: মাছুম বিল্লাহ, লেখক শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003950834274292