এইচএসসি/সমমানের রেজাল্টে দেখা গেছে বিগত ১০ বছরের মধ্যে এবার পাসের হার সবচেয়ে কম। শতকরা ৬৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন এবং বলবেন। সেটা যাইহোক, এইচএসসি পাস করা অনেকেরই স্বপ্ন ভালো কোনো জায়গায় পড়াশোনা করা। বেশিরভাগেরই পছন্দ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কিংবা বুয়েট এসবের প্রতি। সবচে’ বড় কথা হচ্ছে প্রতিবছর এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের একটা বিশাল অংশ উচ্চশিক্ষা তথা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিক্যাল এসবে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। ইতোমধ্যে অনেকেই কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে ভর্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিতে। কেউ কোচিং-এ ভর্তি হয়ে আবার কেউ কেউ নিজে নিজে কিংবা অন্য কারো সহযোগিতা নিয়ে। তারপর নির্ধারিত বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হলে পরে ভর্তির সুযোগ পাবে। এজন্য তাদেরকে নিতে হয় খুব বেশি প্রস্তুতি।
মেডিক্যালের প্রশ্ন যেমন একরকম হয় তেমনিভাবে বুয়েট কিংবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এসবের প্রশ্নও আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কিছু টেকনিক অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। কেউ কেউ দেখা যায় শুধুমাত্র মেডিক্যালের জন্য প্রস্তুতি নিতে গিয়ে অন্যসব ভুলে যায়। যার ফলে মেডিক্যাল/ বুয়েটে সুযোগ না পেলে অন্য কোথাও পরীক্ষা দিতে গিয়ে হিমসিম খেতে হয়। এদিকটায় একটু খেয়াল রাখা দরকার। আবার অনেকেরই ভুল ধারণা যে, আমার রেজাল্ট তো খুব ভালো হয়নি, আমি তো এ+ পাইনি, আমার তো চান্স হবে না। মনে রাখতে হবে একেক প্রতিষ্ঠান একেক রকম কন্ডিশন দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে যদি তোমার কন্ডিশন পূর্ণ থাকে তাহলে হতাশ না হয়ে পরীক্ষা দেওয়াটাই জরুরি। এবং ভর্তি পরীক্ষায় তোমার সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করা। সবাই কি এ+ পায়? না। সুতরাং ভুল চিন্তায় নিজেকে আচ্ছন্ন না রেখে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
একবার না পারিলে দেখো শতবার—কবিতার এই লাইনটির সঙ্গে আমাদের সবার পরিচয় কম বেশি রয়েছে। কথাটার গুরুত্ব অত্যধিক। ফেলে দেবার মতো নয়। যদি খুব গভীরে না গিয়ে সংক্ষেপে বলি তাহলে বলা যায়, যেকোনো কাজে একবার ব্যর্থ হলে পরে ভেঙে না পড়ে পুনরায় চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। সেটা যতবারই হোক। এক্ষেত্রে সফলতা আসবেই। যেমনটা বলেছিলেন চার্লস ডারউইন-জীবন-যুদ্ধে যোগ্যরাই টিকে থাকে।
কিন্তু নির্মম সত্য হলো এই, উচ্চশিক্ষার এসব ভর্তি পরীক্ষায় নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ একবারই। যদিও দু’একটা প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয়বার সুযোগ রয়েছে। সময়ের ব্যবধানে হয়তো সেগুলোও আর থাকবে না। এখন কথা হচ্ছে, যারা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কিংবা বুয়েট এসবে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখছো তাদেরকে খুবই সচেতন হতে হবে। কারণ এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে তাদের হাতে সময় থাকে তিন থেকে চার মাস। এর মধ্যেই নিতে হবে প্রস্তুতি। এখানে যারাই ভর্তি হতে চায় কিংবা পরীক্ষা দিতে আসে তাদের সবাই কম বেশি মেধাবী। সুতরাং হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে চাইলে সর্বোচ্চ প্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই। চোখ-মুখ খোলা রেখে পড়াশোনা করতে হবে। কোন্ প্রতিষ্ঠান কিরকম প্রশ্ন করে, কি কি আসে সেসবের যথেষ্ট ধারণা রাখতে হবে। কখন কোথায় পরীক্ষা এবং তুমি কোথায় কোথায় দেবে সেটারও একটা প্রস্তুতি আগে থেকেই নিয়ে রাখা ভালো। পাশাপাশি বিগত কয়েক বছরের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে।
সময়কে ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে সফলতা আসবে। এজন্য দরকার স্বপ্ন দেখা এবং নিজের উপর প্রবল আত্মবিশ্বাস। সেই বিশ্বাসের জায়গা থেকে নিজেকে প্রমাণের সুদৃঢ় সংকল্প করতে হবে। স্রষ্টার অনুগ্রহ প্রার্থনা করতে হবে কায়মনোবাক্যে। সেইসঙ্গে নিজের প্রতি যত্নবান হতে হবে। সবরকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা-দুর্ঘটনামুক্ত পরীক্ষা হবে এমনটাই প্রত্যাশা। উচ্চশিক্ষায় মেধাবীদের আগমন শুভ হোক। সবার জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়