কলেজগুলোতে এইচএসসি ভর্তির নতুন নিয়ম করা হয়েছে। গত বছর এই ভর্তি কার্যক্রমে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। ভালো রেজাল্ট করেও অনেক শিক্ষার্থী পছন্দমতো কলেজে চান্স পায়নি। মেধা শুধুমাত্র ভালো কলেজে পড়ার বিষয় নয় বরং ক্রমাগত চেষ্টা করার বিষয়। ভালো কলেজে লেখাপড়া করলে তার কিছু সুযোগ-সুবিধা অবশ্যই আছে; কিন্তু যদি কেউ ইচ্ছা করে তাহলে সুদূর পল্লি গাঁয়ে থেকেও ভালো করা সম্ভব। এজন্য দরকার দৃঢ় মনোবল এবং ইচ্ছাশক্তি। নামিদামি কলেজ এক্ষেত্রে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নয়। ভালো কলেজ ভালো জায়গায় ভর্তি নিয়ে আমাদের বিপুল শিক্ষার্থী ফলাফল প্রকাশের পর থেকে যে টেনশনে সময় পার করে তা পরীক্ষার ফলাফলের টেনশনের চেয়েও ভয়ংকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং শেষ পর্যন্ত যদি ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ তৈরি না হয় তাহলে যে মানসিক হীনম্মন্যতার জন্ম হয় তার প্রভাবও দীর্ঘদিন থেকে যায়। কিন্তু এরকমটা হওয়া উচিত নয়।
আমাদের সময়কার কথা বলছি। অর্থাত্ যখন কলেজে ভর্তির জন্য ঘরে বসেই অনলাইনে দশটা কলেজে চয়েস দেওয়া যেত না। বরং সশরীরের সেসব জায়গায় উপস্থিত হয়ে ফরম তুলে পূরণ করে তারপর জমা দিতে হতো। এতে একজনের পক্ষে খুব বেশি জায়গায় ভর্তির চেষ্টা করা সম্ভব হতো না। আবার যাদের আর্থিক সামর্থ্য কম ছিল তাদের জন্য তো আরো কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। আমি নিজেই এরকম একজন। সাধ থাকলেও নামিদামি কোনো কলেজে গিয়ে ভর্তি হওয়ার সামর্থ্য ছিল না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। এখন ঘরে বসেই ইচ্ছামতো কলেজগুলোতে চয়েস দিতে পারছে। তারপর ভর্তির তালিকায় নাম থাকলে সরাসরি সেখানে গিয়ে ভর্তি হওয়া যাচ্ছে। মাঝে মাঝে ভাবি, যদি আমাদের সময়েও এরকম কোনো ব্যবস্থা থাকত। যাই হোক অতীত নিয়ে এত কথা বলে লাভ নেই। কিন্তু এসব কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় আমার বা আমার বন্ধুদের মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে দেখিনি কখনো। আমরা ভেবেছি যেখানেই ভর্তি হই না কেন লেখাপড়া করে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলব। সেভাবেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। মাধ্যমিকে ভালো বা খারাপ ফলাফল অবশ্যই একজন শিক্ষার্থীর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে ভালো ফল করতে পারলে ভবিষ্যতে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে এবং চাকরিতে আবেদন করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। তবে শেষ পর্যন্ত মেধা বিকশিত হবেই। যেভাবেই হোক সে যদি তার মেধা বিকশিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে তাহলে ফলাফল খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারে না।
প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষার পর থেকেই কলেজে ভর্তির যে প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয় তা এটাই প্রমাণ করে যে ভালো কলেজে ভর্তি ছাড়া জীবনই বৃথা। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে দেখা যায় যে, এইচএসসি পাসের পর যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয় তখন অনেক নামিদামি কলেজে পড়ালেখা করা ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় না। তবে শহর ও গ্রাম ভেদে যে শিক্ষার ফলাফল ও মানের যে পার্থক্য রয়েছে তা অত্যন্ত স্পষ্ট। প্রতি বছর ফল প্রকাশের পর দেখা যায় শহর ও গ্রামের শিক্ষার্থীদের ফলে পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু গ্রামের কলেজে ভালো পড়ানো হয় না—এই গড়পরতা ধারণা ঠিক নয়। জন্ম হোক যথাতথা কর্ম হোক ভালো—এ কথা যেমন সত্যি ঠিক তেমনভাবে কলেজ শহর বা গ্রামে হোক—লেখাপড়া করাটাই আসল।
পাবনা