ভুয়া প্রশ্নপত্রের কারবারি ওরা - Dainikshiksha

ভুয়া প্রশ্নপত্রের কারবারি ওরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

হ্যালো, এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ। আমরাই নিশ্চয়তা দিচ্ছি- এবারের এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নপত্র সরবরাহ, তার সমাধান এমনকি পরীক্ষার ফলাফল পরিবর্তনের। পাশাপাশি আমরা ফেল করা বিষয়ে এ প্লাসের গ্যারান্টি দিচ্ছি। আগ্রহীরা ইনবক্সে যোগাযোগ করুন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া আইডি দিয়ে গ্রুপ/পেজ খুলে এভাবেই প্রচারণা চালাচ্ছে একটি চক্র। এর আগে, চক্রের মূল হোতারা শিক্ষার্থী অভিভাবকদের গ্রুপে এড করে নেয়। এসব গ্রুপেই পরীক্ষার্থীদের টার্গেট করে এমন প্রচারণা চালানো হয়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য গ্রুপে বিভিন্ন প্রশ্নের সমাধান দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) মানবজমিন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শুভ্র দেব ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রতিদিনই বিভিন্ন বিষয়ের আপডেট দেয়া হয়। যারা প্রশ্নপত্র নিতে আগ্রহী তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত মেসেঞ্জারে কথা হয় তাদের। মেসেঞ্জারের মাধ্যমেই প্রশ্নপত্রের দর কষাকষি হয়। দর-দাম ঠিক হলে বিকাশের মাধ্যমে টাকা প্রাপ্তির পরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের কাছে তারা প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে। পরে দেখা যায়, এ প্রশ্নপত্র ভুয়া। 

গোয়েন্দাসূত্র বলছে, চলমান এইচএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারি চলছে। এতে চক্রটি বেকায়দায় রয়েছে। তারা এখন ভুয়া প্রশ্নপত্র নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। বিগত এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে সেটাতে নতুন কিছু সংযোজন ও বিয়োজন করে তারা নিজেরাই ভুয়া প্রশ্নপত্র তৈরি করে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পরীক্ষার একদিন আগে তারা সেই প্রশ্ন প্রাপ্তি ও সরবরাহ করতে পারবে বলে নিশ্চয়তা দেয়। তাৎক্ষণিক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রতারক চক্রের কাছে বিকাশে টাকা পাঠায়। এক্ষেত্রে প্রতি প্রশ্নপত্রের জন্য ৫০০ টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। ফল পরিবর্তন বা ফেল করা বিষয়ে এ প্লাস পাইয়ে দেয়ার জন্য লাখ টাকাও নেয়া হয়। টাকা আদায়ের পর ভুয়া প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে তাদের গ্রুপ থেকে বাদ দেয় প্রতারক চক্র। যাতে করে প্রতারণার বিষয়টি পরে বুঝার পর যেন তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা না যায়।

ভুয়া প্রশ্নপত্র নিয়ে রমরমা বাণিজ্য করা এসব চক্রের সদস্যদের আটকের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রেখেছে মহানগর গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন টিম, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার ক্রাইম ইউনিট। এসব সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসএসসি, এইচএসসি ও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণির প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠে। তারা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের লোভনীয় কথা বলে প্রতারণা করছে। তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। সারা দেশে নামে-বেনামে এ ধরনের অন্তত শতাধিক চক্র সক্রিয় রয়েছে। বিভিন্ন সময় গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এসব চক্রের মূল হোতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু কিছুদিন জেল খেটে জামিনে বের হয়ে ফের একই কাজ শুরু করে। এছাড়া, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা গ্রেপ্তার হয় তাদের অনেকেই প্রান্তিক পর্যায়ের। যে সকল গ্রুপ বা পেজ থেকে প্রশ্নপত্র সরবরাহের প্রচারণা চালানো হয় সংশ্লিষ্ট এডমিনরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এসব গ্রুপের এডমিনরা গ্রুপে যাকে সন্দেহজনক মনে করেন তাদের গ্রুপে ব্লক করে দেন। 

শনিবার ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রির অভিযোগে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির সাইবার নিরাপত্তা ও ক্রাইম বিভাগ। তারা হলো, ইমরান খসরু (২৪), আহসান হাবীব (২৪) ও ইমরান হোসেন রাকিব (২৪)। সাইবার ক্রাইম সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার তিন জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তারা ছদ্মনামে ফেসবুকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিক্রির প্রচার করত। পরীক্ষার পাস করানো, ফলাফল পরিবর্তন ও ফেল করা বিষয়ে ভালো রেজাল্ট এনে দেয়ার ঘোষণা দিতো। আগ্রহীদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করতো। এর আগে গত বৃহস্পতিবার একই এলাকার লীলাম্বর শাহ রোডের একটি বিকাশের দোকানের সামনে থেকে ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্য কাজী কেওয়ান (২৪) ও নাজেল হোসেন (২১) কে আটক করে র‌্যাব। র‌্যাবের-২ মিডিয়া শাখার সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল মালিক জানিয়েছেন, তারা ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। তারা মেসেঞ্জারে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করত। 

এদিকে, ডিএমপির সাইবার টিম প্রতিটি নিয়োগ পরীক্ষা, ভর্তি পরীক্ষা এবং এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সম্পর্কে তথ্য প্রদান ও তাদের লোভনীয় মিথ্যা টোপ থেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দূরে থাকার কথা বলছেন। সাইবার ক্রাইমের অতিরিক্ত উপ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কোনো সুযোগ নাই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেভাবেই ব্যবস্থা নিয়েছেন। নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হচ্ছে প্রশপত্র প্রণয়নের কাজ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা জনপ্রিয় চ্যাট ইঞ্জিনগুলোর পাবলিক বা ক্লোজড গ্রুপে যারা প্রশ্ন সরবরাহ করবে বলে চটকদার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে সেগুলো ভুয়া। এসব ভুয়া এন্টিটি/কন্টেন্ট গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে। তিনি বলেছেন, এসব গ্রুপের তৎপরতা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। তাই কোনো অভিভাবক বা শিক্ষার্থী যদি এসব গ্রুপে ঢুকে ফুটপ্রিন্ট রাখে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া পরীক্ষার হল গুলোতে ম্যাগনেট, অপ্টিক ও ফ্রিকুয়েঞ্চি ডিটেকটর বসানো হচ্ছে। যাতে করে পরীক্ষার হলে গিয়ে কেউ যেন কোনো ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতি করতে না পারে। 

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0080299377441406