নিউজিল্যান্ডের দুই মসজিদে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় মোট চারজনকে আটক করেছে দেশটির প্রশাসন। এর মধ্যে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী রয়েছেন। এমনটাই জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। শুক্রবার (১৫ মার্চ) স্থানীয় জুমার নামাজের সময় ক্রাইস্টচার্চের আল নূর ও লিনউড মসজিদে এই হামলার ঘটনায় ২ বাংলাদেশীসহ অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো খবর দিয়েছে।
স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার দিকে মসজিদে নামাজ শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে একজন বন্দুকধারী সিজদায় থাকা মুসল্লিদের ওপর গুলি ছুড়লে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিউজিল্যান্ডের গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪০ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইনডিপেনডেন্ট ইউকে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ দুই মসজিদে হামলায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করেছে। এদের মধ্যে তিনজন পুরুষ এবং একজন নারী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আল নূর মসজিদে গুলি শুরু হলে তারা প্রাণ বাঁচাতে সেখানে থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। মসজিদের বাইরে রক্তাক্ত লোকজনকে পড়ে থাকতে দেখার কথাও জানান তারা।
এদিকে নিউজিল্যান্ডের আল নূর মসজিদে জুমার নামাজের সময় গোলাগুলির ঘটনায় অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা। বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাসুদ জানিয়েছেন, দলের সদস্যরা সবাই নিরাপদে হোটেলে ফিরেছেন। গোলাগুলির ওই ঘটনার পর বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড তৃতীয় টেস্টটি বাতিল করা হয়েছে। শনিবার ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে ওই ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা ছিল।
এক্সপ্রেস নামের একটি স্থানীয় গণমাধ্যমের অনলাইনে বলা হয়েছে, হামলাকারীকে শনাক্ত করা গেছে। ২৮ বছর বয়সী একজন শ্বেতাঙ্গ। তিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন। দুই বছর ধরে তিনি এ হামলার পরিকল্পনা করছেন। হামলাকারী জানিয়েছেন, ইউরোপের দেশগুলোতে বিদেশি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে তিনি এ হামলার পরিকল্পনা করেছেন।
শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার দিকে মসজিদে জুম্মার নামাজ শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে একজন বন্দুকধারী সিজদায় থাকা মুসল্লিদের ওপর গুলি ছোড়ে। মসজিদটি হ্যাগলি ওভাল মাঠের খুব কাছে হওয়ায় অনুশীলন শেষে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা সেখানে নামাজ আদায়ে যাচ্ছিলেন। অল্পের জন্য রক্ষা পান ক্রিকেট দলের সদস্যরা। মসজিদে প্রবেশের মুহূর্তে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। আতঙ্কিত খেলোয়াড়েরা হ্যাগলি ওভালে ফিরে আসেন। খেলোয়াড়দের সবাইকে মাঠের ভেতর থাকতে বলা হয়েছে।
হামলার ভিডিও দেখে ধারণা করা যাচ্ছে, বন্দুকধারী হামলার আগে পুরো ঘটনাটি ভিডিও করার প্রস্তুতি নিয়েছিল। হয়তো তাঁর মাথায় ভিডিও ক্যামেরা বসানো ছিল। একটি ওয়েবসাইট জানায়, হামলাকারী হামলাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করেছেন।
ভিডিওতে দেখা গেছে, হামলাকারী স্বয়ংক্রিয় বন্দুক নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে মসজিদের দিকে যাচ্ছেন। মসজিদের প্রবেশ কক্ষ থেকেই মুসল্লিদের ওপর নির্বিচারে বৃষ্টির মতো গুলি করা শুরু করেন। মসজিদের ভেতর ছোটাছুটিরত মুসল্লিদের প্রতি টানা গুলি করতে থাকেন। এরপর মসজিদের এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে ঘুরে ঘুরে গুলি করতে থাকেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে যাঁরা মসজিদের মেঝেতে পড়েছিলেন, তাঁদের দিকে ফিরে ফিরে গুলি করছিলেন তিনি।