বিশ্বব্যাপী প্রায় ২০০ মিলিয়ন মানুষ অবৈধ মাদক গ্রহণের সঙ্গে জড়িত যার অধিকাংশই তরুণ। আর এই মরণনেশার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সামাজিক কাঠামোয়, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে, ভারসাম্যে, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে এক কথায় জীবনের সর্বত্র। এই অভিশাপটা হাজারগুণ বেড়ে যায় তখনই যখন শিক্ষার্থীরা এই নেশায় বুঁদ হয়ে যায়। কারণ একটি দেশের ভবিষ্যৎ, সম্ভাবনাময় তরুণরা যখন তাদের জীবন বিপন্ন করে ফেলে তখন নিজের ধ্বংস টেনে আনে তো বটেই দেশের জন্যও তা অশনিসংকেত। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন আমজাদ হোসাইন হৃদয়।
দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সন্ধ্যা নামলেই নির্জন জায়গাগুলোতে, হলের কক্ষগুলোতে বসে মাদকের আসর। কিছুদিন আগেও ঢাবি, জাবি, বুয়েট, শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা মাদকের অপরাধে শনাক্ত হয় এবং কেউ কেউ গ্রেফতার হয়।
এক জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে দেশে মাদকাসক্তদের সংখ্যা কমপক্ষে ৫০ লাখ। কোনো কোনো সংস্থার মতে ৭০ লাখ, নব্বইয়ের দশকে যার পরিমাণ রেকর্ড করা হয় ১০ লাখেরও কম এবং মাদকসেবীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই যুবক, তাদের ৪৩ শতাংশ বেকার। ৫০ শতাংশ অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। কিছুদিন আগেও যারা ফেনসিডিলে আসক্ত ছিল তাদের অধিকাংশই এখন ইয়াবা আসক্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে তুলে ধরতে হবে। এ ছাড়া পড়ালেখার বাইরে তাদেরকে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যেসব কারণে একজন শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে সেসব বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি তার অল্টারনেটিভ কর্মকৌশলও ঠিক করতে হবে। যাতে করে শিক্ষার্থীরা মাদকাসক্ত হওয়ার সুযোগ না পান। এ অবস্থা থেকে ঘুরে না দাঁড়ালে সামনের দিনের ভয়ংকর পরিণতি রোধ করা যাবে না। পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে। মাদকের কুফল সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তুলতে হবে। মাদকাসক্তদের নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে ঘরেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সামাজিক আন্দোলন হিসেবে এলাকার মানুষের সঙ্গে বিষয়টি আলাপ-আলোচনা ও মাদক প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে। সচেতনতার পাশাপাশি প্রতিটি স্তরের মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাই পারে শিক্ষার্থীদের মাদক নামের এই প্রাণঘাতী ব্যাধি থেকে পরিত্রাণের পথ দেখাতে।
লেখক :শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।